Baby measles1

নবজাতক শিশুর হাম হলে করণীয়?

বাংলাদেশে নবজাতক শিশুর মধ্যে হাম একটি সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগটি মূলত “Measles virus” দ্বারা হয়ে থাকে, যা সহজেই বাতাসের মাধ্যমে এক শিশু থেকে অন্য শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। নবজাতক শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও সম্পূর্ণভাবে গড়ে ওঠে না, ফলে হাম হলে জটিলতা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিশেষ করে যারা টিকা নেয়নি বা পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে না, তাদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশের অনেক গ্রামীণ এলাকায় এখনও হাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই। অনেক অভিভাবক মনে করেন এটি সাধারণ জ্বর, কিন্তু আসলে হাম একটি মারাত্মক সংক্রমণ যা সময়মতো চিকিৎসা না পেলে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, এমনকি মস্তিষ্কের প্রদাহ পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। নবজাতকের হাম হলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় পানিশূন্যতা এবং পুষ্টিহীনতা।

হাম শুরু হয় সাধারণত হালকা জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া এবং কাশি দিয়ে। এরপর শরীরে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ দেখা দেয়, যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। শিশুটি তখন খেতে চায় না, দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অস্বস্তিতে ভোগে। অনেক সময় নবজাতক হাম আক্রান্ত হলে মা-বাবা ভয় পেয়ে যায় এবং ভুল চিকিৎসা করে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।

এ কারণে নবজাতক শিশুর হাম হলে ঘরোয়া যত্ন, সঠিক চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত খাবারের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে জানা উচিত – হাম হলে কী করবেন, কী খাওয়াবেন এবং কখন ডাক্তার দেখাবেন। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশি পরিবারগুলোর বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী নবজাতক শিশুর হাম হলে করণীয়, খাদ্যাভ্যাস, যত্ন ও প্রতিরোধের সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

নবজাতক শিশুর হাম হলে করণীয়?

Baby measles2

নবজাতক শিশুর হাম হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শান্তভাবে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া। অনেক সময় মা-বাবা আতঙ্কিত হয়ে ভুল ওষুধ বা ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যবহার করেন, যা শিশুর জন্য মারাত্মক হতে পারে। হাম হলে প্রথমে শিশুকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, জ্বর, পানিশূন্যতা ও পুষ্টির ঘাটতি যেন না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, বিশ্রাম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।নিচে নবজাতক শিশুর হাম হলে করণীয় বিষয়গুলো ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো—

১. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

নবজাতক শিশুর হাম হলে সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো দ্রুত একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। কারণ হাম একটি সাধারণ জ্বর নয়; এটি ভাইরাসজনিত একটি সংক্রমণ যা নবজাতকের শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর জ্বর, কাশি ও চোখ লাল হয়ে গেলে অভিভাবকরা এটিকে সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু ভেবে ঘরোয়া চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু এই ভুল সিদ্ধান্ত শিশুর জন্য ভয়াবহ হতে পারে। নবজাতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব দুর্বল থাকে, ফলে হাম ভাইরাস সহজেই শরীরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে এবং নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া বা কানে সংক্রমণের মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে।

চিকিৎসক শিশুর বয়স, ওজন, তাপমাত্রা, খাওয়ার রুচি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণ পর্যবেক্ষণ করে নির্ধারণ করেন রোগের মাত্রা কতটা গুরুতর। কখনও কখনও ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্স-রে বা প্রস্রাব পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন, যাতে বোঝা যায় শরীরে অন্য কোনো সংক্রমণ আছে কি না। শিশুর জ্বর যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ফুসকুড়ি পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তবে হাসপাতালে ভর্তি করানো প্রয়োজন হতে পারে।

অনেক সময় মায়েরা শিশুর জ্বর কমাতে নিজের মতো করে অ্যান্টিবায়োটিক বা প্যারাসিটামল সিরাপ দেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, হাম ভাইরাসজনিত রোগ, তাই অ্যান্টিবায়োটিক এতে কার্যকর নয়। ভুল ওষুধ দিলে শিশুর লিভার, কিডনি বা পেটের ক্ষতি হতে পারে। এজন্য ডাক্তার যে ওষুধ লিখবেন, সেটি নির্দিষ্ট ডোজ অনুযায়ী এবং সময়মতো দিতে হবে। চিকিৎসক সাধারণত জ্বর ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ বা স্যালাইন জাতীয় তরল খাবারের পরামর্শ দেন, কিন্তু সেটিও শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।

ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার সময় শিশুর সমস্ত উপসর্গ পরিষ্কারভাবে জানানো জরুরি— যেমন জ্বর কতদিন ধরে, শিশুর চোখ লাল কি না, কাশি বা নাক দিয়ে পানি পড়ছে কি না, খাওয়ার পরিমাণ কমেছে কি না, প্রস্রাব স্বাভাবিক কি না ইত্যাদি। এতে চিকিৎসক দ্রুত সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে পারবেন। অনেক সময় চিকিৎসক শিশুর মায়ের স্বাস্থ্য ও টিকাদান ইতিহাস সম্পর্কেও জানতে চান, কারণ মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে।

চিকিৎসক যদি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন, তাহলে দেরি না করে তা মানা উচিত। হাসপাতালে শিশুকে পর্যাপ্ত তরল, অক্সিজেন, ওষুধ ও যত্ন দেওয়া সম্ভব হয়, যা ঘরে করা কঠিন। এছাড়া, ডাক্তার শিশুর চোখ ও ত্বকের যত্ন, খাবারের ধরন, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরণের দেশি চিকিৎসা, হারবাল তেল, পাউডার বা অচেনা ওষুধ ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। অনেক সময় গ্রামীণ এলাকায় “হাম নামাতে” গাছের পাতা বা তেল ব্যবহার করা হয়, যা শিশুর ত্বকে জ্বালা বা সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এসব থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে।

২. শিশুকে বিশ্রাম ও আরামদায়ক পরিবেশে রাখা

নবজাতক শিশুর হাম হলে তার শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। ভাইরাসের আক্রমণে শরীরে শক্তি কমে যায়, জ্বর, কাশি, চোখে জ্বালা ও র‍্যাশের কারণে শিশুটি অস্থির হয়ে পড়ে। তাই প্রথম কাজ হলো তাকে যথেষ্ট বিশ্রাম ও আরামদায়ক পরিবেশে রাখা। অনেক সময় অভিভাবকরা শিশুকে বেশি কাপড় জড়িয়ে রাখেন বা ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখেন না, এতে শিশুর অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। হাম আক্রান্ত শিশুর জন্য একটি পরিচ্ছন্ন, হালকা বাতাস চলাচল করে এমন ঘর সবচেয়ে উপযুক্ত।

ঘর যেন না খুব গরম হয়, না খুব ঠান্ডা — বরং মাঝারি তাপমাত্রা থাকা উচিত। সরাসরি পাখার বাতাস বা এসির ঠান্ডা শিশুর গায়ে না লাগে, তা নিশ্চিত করতে হবে। হাম হলে শিশুর চোখ আলোতে সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, তাই ঘরে তীব্র আলো জ্বালানো যাবে না। জানালার পর্দা টেনে হালকা আলো রাখা ভালো, যাতে শিশুর চোখে জ্বালা না হয়।

শিশুর বিছানাটি প্রতিদিন পরিষ্কার চাদর দিয়ে বদলে দিতে হবে। হাম হলে ত্বকে ফুসকুড়ি হয়, ফলে ঘামে ভেজা বা অপরিষ্কার কাপড়ে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে এবং সংক্রমণ বাড়াতে পারে। শিশুর পোশাক হতে হবে হালকা, নরম, তুলার তৈরি এবং ঢিলেঢালা। খুব টাইট বা সিনথেটিক কাপড় ব্যবহার করলে ত্বকের র‍্যাশে চুলকানি বা জ্বালা বাড়ে।

শিশুর বিশ্রামের সময় তার শরীরের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় হাম হলে শিশুর নাক বন্ধ হয়ে যায় বা কাশি হয়, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই শিশুকে সোজা করে কোলে নিয়ে রাখা বা হালকা উঁচু বালিশে শোয়ানো যেতে পারে যাতে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে। যদি শিশুর নাক বন্ধ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নরম স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে।

শিশুর বিশ্রামের সময় ঘরে যেন কোনো ধরনের উচ্চ শব্দ না হয় — যেমন টিভি, রেডিও বা মোবাইলের শব্দ। নবজাতক হাম আক্রান্ত অবস্থায় মানসিকভাবে অস্থির থাকে; তাই শান্ত পরিবেশ তাকে ঘুমাতে ও আরাম পেতে সাহায্য করে। মা-বাবা বা পরিবারের কেউ যদি শিশুর কাছে থাকে, তবে তাকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে দোলানো বা আদর করলে শিশুটি নিরাপত্তা অনুভব করে।

মায়ের উপস্থিতি হাম আক্রান্ত নবজাতকের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক ও শারীরিক সাপোর্ট। মায়ের গলার শব্দ, বুকের উষ্ণতা এবং স্নেহ শিশুর জন্য একধরনের প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। তাই শিশুকে যতটা সম্ভব মায়ের কাছেই রাখতে হবে, তবে মা যেন নিজের স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রাখেন — যেমন হাত ধোয়া, মুখ পরিষ্কার রাখা এবং প্রয়োজন হলে মাস্ক পরা।

৩. বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া

নবজাতক শিশুর হাম হলে অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর খাওয়ার রুচি কমে যায়, দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বুকের দুধ খেতে চায় না। কিন্তু এই সময়েই মায়ের দুধ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ মায়ের দুধ শুধু খাবার নয়— এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধ। এতে থাকে অ্যান্টিবডি, এনজাইম, ভিটামিন, মিনারেল এবং জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো উপাদান যা হাম ভাইরাসের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। তাই হাম আক্রান্ত শিশুকে যতটা সম্ভব মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে।

মায়ের দুধে থাকা IgA অ্যান্টিবডি শিশুর শ্বাসনালী ও পরিপাকতন্ত্রে সুরক্ষা দেয়। হাম হলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়, তাই মায়ের দুধের পুষ্টি ও অ্যান্টিবডি শিশুকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনকি অনেক সময় হাম আক্রান্ত নবজাতক যারা নিয়মিত মায়ের দুধ পায়, তারা তুলনামূলকভাবে কম জটিলতায় ভোগে এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।

যদি শিশুটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দুধ খেতে না চায়, তবে জোর না করে ঘন ঘন ছোট সময়ের জন্য খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। প্রতিবার অল্প অল্প করে খাওয়ালে শিশুর পেট ভরে এবং দুধ হজম করতেও সুবিধা হয়। মায়ের উচিত শিশুকে কোলে নিয়ে স্নেহভরে বুকের দুধ খাওয়ানো, এতে শিশুটি মানসিক প্রশান্তিও পায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য হয়।

আরোও পড়ুনঃ  কোন সবজি খেলে ত্বক ফর্সা হয়?

হাম হলে অনেক সময় শিশুর মুখে ছোট ছোট ঘা বা ফুসকুড়ি হয়, যা খাওয়াতে অসুবিধা তৈরি করে। তখন শিশুর মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে এবং মায়ের দুধ খাওয়ানোর আগে শিশুর ঠোঁট ও মুখ হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। এতে খাওয়ার সময় জ্বালা কমবে।

মায়েরও নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা জরুরি। হাম আক্রান্ত শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মা যেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়, পুষ্টিকর খাবার খায় এবং প্রচুর পানি পান করে। মায়ের শরীর দুর্বল থাকলে দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তাই মা যেন খাবারে ডিম, মাছ, দুধ, শাকসবজি ও ফলমূল রাখেন।

অনেক সময় কিছু ভুল ধারণা দেখা যায়— যেমন, “হাম হলে দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখতে হয়” বা “দুধে ভাইরাস ছড়ায়।” এই ধারণাগুলো সম্পূর্ণ ভুল। মায়ের দুধে হাম ভাইরাস থাকে না, বরং এটি শিশুর জন্য সুরক্ষা দেয়। বুকের দুধই একমাত্র নিরাপদ খাদ্য, যা শিশুর শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে, পুষ্টি সরবরাহ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

৪. জ্বর কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া

নবজাতক শিশুর হামের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো জ্বর। জ্বর সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হয়, তবে কখনো কখনো বেশি দিনও থাকতে পারে। এই অবস্থায় শিশুর শরীর অতিরিক্ত পানি হারায়, দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। তাই জ্বর কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জ্বর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিশুর আরাম বৃদ্ধি হয় এবং শরীরের পানি ও পুষ্টি রক্ষা করা সম্ভব হয়।

প্রথমে জ্বর পরিমাপ করা জরুরি। শিশুর তাপমাত্রা রেকর্ডে রাখলে ডাক্তার বা অভিভাবক বুঝতে পারবেন যে জ্বর বেড়েছে কি কমেছে। নবজাতকের জন্য সাধারণত ৩৮° সেলসিয়াস বা তার বেশি জ্বর সতর্কতার সংকেত। তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে গেলে শিশুকে দ্রুত বিশ্রাম ও চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

জ্বর কমানোর জন্য ঘরোয়া কিছু ব্যবস্থা নিতে পারেন। যেমন, হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে শিশুর হাত, গলা ও পা মুছে দেওয়া। কাপড়টি খুব ঠান্ডা নয়, কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। এতে শরীরের অতিরিক্ত তাপ কমে এবং শিশুটি আরাম পায়। কখনো ঠান্ডা পানি বা বরফ ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এতে শিশুর রক্তনালি সংকুচিত হয় এবং জ্বর আরও বাড়তে পারে।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা শিশুর বয়স ও ওজন অনুযায়ী নির্ধারিত ডোজে দিতে হবে। ওষুধ বেশি বা কম দেওয়া বিপজ্জনক। কখনোও নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্য ধরনের সিরাপ দেওয়া উচিত নয়, কারণ হাম ভাইরাসজনিত রোগ এবং অ্যান্টিবায়োটিক এতে কার্যকর নয়।

শিশুর জ্বর কমাতে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। ঘর যেন খুব গরম বা খুব ঠান্ডা না হয়। ঠান্ডা বাতাস বা এসি সরাসরি শিশুর ওপর পড়লে জ্বর বাড়তে পারে। হালকা ও আরামদায়ক ঘর শিশুর আরোগ্যে সহায়ক।

জ্বরের সময় শিশুকে পর্যাপ্ত পানি দিতে হবে। যদি শিশুটি মায়ের দুধ খায়, তবে ঘন ঘন খাওয়াতে হবে। শিশুর মুখ শুকিয়ে যাওয়া, চোখে জল না আসা বা প্রস্রাব কম হওয়া – এগুলো পানিশূন্যতার লক্ষণ। এই সময় ওআরএস ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দেওয়া যেতে পারে।

শিশুর শরীরে ঘাম আসা স্বাভাবিক। ঘাম পোঁছানোর জন্য নরম কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম মুছে দিলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। শিশুর বিছানা শুকনো এবং পরিষ্কার রাখাও জরুরি।

জ্বরের সময় শিশুকে অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় না করার জন্য বিশ্রাম দিতে হবে। খেলনা বা অকারণ দোলানোর চেষ্টা করা ঠিক নয়। শিশুর মানসিক প্রশান্তি ও আরামই দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রয়োজনীয়।

শিশুর চোখ ও ত্বকের যত্নও জ্বরের সময় গুরুত্বপূর্ণ। ঘন ঘন চোখ মুছে দেওয়া এবং ফুসকুড়ি না ঘষা গুরুত্বপূর্ণ। এটি সংক্রমণ বা অতিরিক্ত জ্বালা রোধ করে।

অতিরিক্ত জ্বর বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত। নবজাতক শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাই জটিলতা দ্রুত তৈরি হতে পারে। সঠিক সময়ের চিকিৎসা শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে।

সংক্ষেপে, নবজাতক শিশুর হামের জ্বর নিয়ন্ত্রণের মূল ধাপগুলো হলো – ঘরের আরামদায়ক পরিবেশ রাখা, হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া, ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক ওষুধ দেওয়া, পর্যাপ্ত দুধ ও পানি খাওয়ানো এবং শিশুকে শান্ত ও নিরাপদ রাখা। এই ব্যবস্থা শিশুর আরোগ্য দ্রুততর করে।

৫. চোখ ও ত্বকের যত্ন নেওয়া

নবজাতক শিশুর হাম হলে চোখ ও ত্বক সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল হয়। চোখ লাল হয়ে যায়, পানি পড়া শুরু হয় এবং শিশুর চোখে অস্বস্তি তৈরি হয়। একইভাবে শরীরে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ দেখা দেয়। এই অবস্থায় চোখ ও ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি, কারণ ভুল বা অবহেলাজনিত যত্ন সংক্রমণ বাড়াতে পারে এবং শিশুকে অতিরিক্ত অস্বস্তিতে ফেলতে পারে।

প্রথমেই চোখের যত্ন: শিশুর চোখ পরিষ্কার রাখতে নরম, ভেজা কাপড় ব্যবহার করা উচিত। কাপড়টি প্রতিবার ব্যবহার করার আগে পরিষ্কার করা আবশ্যক। দিনে কয়েকবার চোখের চারপাশ আলতোভাবে মুছে দিলে চোখের পানি ও ব্যাকটেরিয়া কমে যায়। কোনও ধরনের চোখের ড্রপ বা ওষুধ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। ভুল চোখের ড্রপ বা ক্রিম শিশুর চোখে সংক্রমণ বাড়াতে পারে।

শিশুর ত্বকও হামের সময় সংবেদনশীল হয়ে থাকে। ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ দেখা দিলে তা ঘষা বা চাপা উচিত নয়। ঘষলে চুলকানি ও সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়। শিশুর ত্বক রাখার জন্য নরম কাপড় ব্যবহার করা উচিত। ঘরের তাপমাত্রা যেন খুব গরম বা ঠান্ডা না হয়। অতিরিক্ত ঘাম হলে শিশুর ত্বক ভেজা হয়ে যায়, যা সংক্রমণ ও চুলকানি বাড়ায়। হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে ত্বক মুছে রাখা উচিত।

শিশুর গোসল করার সময় হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। খুব গরম বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা ঠিক নয়। গোসলের জন্য অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার না করা ভালো, কারণ এটি ত্বককে শুষ্ক ও সংবেদনশীল করে তোলে। গোসলের সময় শিশুকে আলতোভাবে স্পর্শ করা, রুমাল বা কাপড় দিয়ে মুছে দেওয়া এবং খুসকি বা র‍্যাশে ঘষা এড়িয়ে চলা জরুরি।

শিশুর পোশাকও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হালকা, তুলার তৈরি এবং ঢিলেঢালা কাপড় শিশুর ত্বককে আরাম দেয়। সিনথেটিক বা টাইট কাপড় ফুসকুড়ি ও র‍্যাশে চুলকানি বাড়াতে পারে। এছাড়া, প্রতিদিন শিশুর বিছানা ও কাপড় পরিষ্কার রাখা উচিত।

শিশুর চোখ ও ত্বক সংক্রান্ত লক্ষণ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যদি চোখে অতিরিক্ত পানি, লালচে রং, ঘন স্রাব বা ত্বকে ফোসকা দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে অবিলম্বে যোগাযোগ করা জরুরি। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক চোখের জন্য নিরাপদ অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করতে পরামর্শ দিতে পারেন।

শিশুর চোখ ও ত্বকের যত্ন শুধু সংক্রমণ কমায় না, মানসিক প্রশান্তিও দেয়। নবজাতক শিশু অস্বস্তি অনুভব করলে খাওয়া কমে যায়, ঘুমে সমস্যা হয় এবং জ্বর আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই চোখ ও ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়া শিশুদের দ্রুত আরোগ্যের জন্য অপরিহার্য।

ঘরের পরিবেশও প্রভাব ফেলে। ধুলাবালি, ধোঁয়া বা তীব্র আলো শিশুর চোখে অস্বস্তি বাড়ায়। তাই শিশুর ঘর যেন পরিষ্কার, হালকা আলোযুক্ত এবং ধুলাবালি মুক্ত থাকে। এছাড়া, পরিবারের সকল সদস্যদের হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি, যেন শিশুর সংক্রমণ না ছড়ায়।

সবশেষে, চোখ ও ত্বকের যত্নের মাধ্যমে নবজাতক শিশুর আরাম, নিরাপত্তা এবং সুস্থতার হার বৃদ্ধি পায়। সঠিক নজরদারি ও পরিচর্যা শিশুকে হাম থেকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৬. পানিশূন্যতা রোধ করা

নবজাতক শিশুর হাম হলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি হারানো একটি সাধারণ সমস্যা। জ্বর, ঘাম, কাশি, ডায়রিয়া এবং ফুসকুড়ির কারণে শিশুর দেহে জল ঘাটতি দেখা দিতে পারে। পানিশূন্যতা শিশুকে দুর্বল করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায়। তাই হাম আক্রান্ত নবজাতকের জন্য পর্যাপ্ত তরল নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমে, শিশুর খাবারের মাধ্যমে পানির ঘাটতি পূরণ করা যায়। মায়ের বুকের দুধে যথেষ্ট পানি থাকে, যা শিশুকে শুষ্কতা ও পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। শিশুর খাওয়ার আগ্রহ কম থাকলেও ছোট ছোট পরিমাণে ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো উচিত। এতে শিশুর পেট ভরে এবং হজমও ঠিক থাকে।

কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার ওআরএস (ORS) বা হাইড্রেশন সলিউশন দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া কোনও ধরনের সুগার ওয়াটার বা ঘরোয়া লিকুইড দেওয়া ঠিক নয়। ওআরএস শিশুর শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখে, যা হামের সময় অত্যন্ত জরুরি।

আরোও পড়ুনঃ  পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

শিশুর প্রস্রাবের পরিমাণ ও ঘামের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। প্রস্রাব কম হওয়া, মুখ শুকানো, কান্নায় চোখে পানি না আসা – এগুলো পানিশূন্যতার প্রধান লক্ষণ। যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

জ্বর ও ঘামের কারণে শিশুর শরীর থেকে আরও পানি বের হয়। তাই শিশুর ঘরে হালকা বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ঘর খুব গরম বা ঠান্ডা হলে শিশুর শরীর থেকে পানি দ্রুত হারায়। শিশুর বিছানা পরিষ্কার, শুকনো ও হালকা কাপড় ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর খাবারে তরল বা হালকা খাবার রাখার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের দুধ ছাড়াও ডাক্তার যদি সুপারিশ করেন, তবে হালকা স্যুপ, ভাতের মাড় বা ফলের রস দেওয়া যেতে পারে। তবে বয়স অনুযায়ী পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে।

শিশুর খাওয়া ও পানি খাওয়ার সময়ে দেহের অবস্থার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। যদি শিশুর ঠোঁট শুকনো থাকে, চোখে জল না আসে বা অবসন্ন লাগে, তা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সংকেত। অবহেলা করলে শিশুর অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে পারে।

শিশুর কাছে সবসময় স্নেহ ও মানসিক শান্তি বজায় রাখা জরুরি। মানসিক চাপ ও অস্বস্তি শিশুর পানিশূন্যতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ঘরে শান্ত পরিবেশ, মা-বাবার উপস্থিতি এবং ধৈর্য সহকারে খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর সুস্থতার জন্য পানিশূন্যতা রোধের সঙ্গে সঠিক বিশ্রাম ও আরামদায়ক পরিবেশ বজায় রাখা প্রয়োজন। জল ঘাটতি কমানো ছাড়া হামের সংক্রমণ দ্রুত কমানো সম্ভব নয়। শিশুর শরীরের পানির পরিমাণ ঠিক রাখলে জ্বরও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

সংক্ষেপে, নবজাতক শিশুর হামের সময়ে পানিশূন্যতা রোধের মূল ধাপ হলো – পর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়ানো, প্রয়োজনমতো ওআরএস ব্যবহার, প্রস্রাব ও ঘাম পর্যবেক্ষণ, ঘরের আরামদায়ক পরিবেশ এবং শান্তিপূর্ণ যত্ন। এভাবে শিশুর শরীরের পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক থাকে এবং আরোগ্য দ্রুত ঘটে।

৭. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

নবজাতক শিশুর হাম আক্রান্ত হলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। ভাইরাসটি শিশুর শ্বাসনালী, ত্বক ও পরিবেশের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে যায়। তাই শিশুর আশেপাশের পরিবেশ সর্বদা পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সকল সদস্যকে সচেতন হতে হবে এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

শিশুর বিছানা, চাদর, তোলা, লোশনের কাপড় ও পিলো শীট প্রতিদিন পরিষ্কার করা উচিত। ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ থাকলে ঘাম বা ময়লা সংক্রমণ বাড়াতে পারে। তাই শিশুর ঘর যেন ধুলোমুক্ত এবং হালকা বাতাস চলাচল করে এমন রাখা জরুরি। খুব বেশি গরম বা বন্ধ ঘরে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং শিশুর অসুস্থতা বাড়ে।

শিশুর পোশাকও পরিষ্কার ও নরম হওয়া উচিত। সিনথেটিক কাপড় বা টাইট জামা শিশুর ত্বকে ঘষা তৈরি করে, যা ফুসকুড়ি ও জ্বালায় সমস্যা বাড়ায়। তুলার তৈরি ঢিলেঢালা কাপড় শিশুর আরাম দেয় এবং ঘামের কারণে সংক্রমণ হওয়া রোধ করে।

শিশুর ঘরে ধুলো, ধোঁয়া বা ধূমপান প্রবেশ করা উচিত নয়। রান্নাঘরের ধোঁয়া, আগরবাতি বা ধূমপান শিশুর শ্বাসনালীকে জ্বালা করতে পারে এবং কাশি বাড়ায়। ঘরে পরিষ্কার, হালকা বাতাস এবং আরামদায়ক তাপমাত্রা রাখা শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবারের সকল সদস্যদের হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন থাকা আবশ্যক। শিশু স্পর্শ করার আগে হাত ধোয়া না হলে ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে পারে। অভিভাবক বা পরিচর্যাকারীর পোশাকও পরিষ্কার থাকা উচিত। শিশুর নাক বা মুখে সংক্রমণ এড়াতে স্পর্শ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

শিশুর খেলার জিনিস, বোতল, কাপ, চামচ ইত্যাদি প্রতিদিন পরিষ্কার করা জরুরি। এই জিনিসগুলিতে ভাইরাস লেগে শিশুর শরীরে পুনরায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে। প্লাস্টিক বা রাবারের খেলনা সিদ্ধ বা হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করা যায়।

শিশুর গোসল নিয়মিত করা দরকার। তবে গোসলের জন্য হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। বেশি গরম বা ঠান্ডা পানি শিশুর ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গোসলের সময় নরম স্পঞ্জ বা কাপড় ব্যবহার করা উচিত। ফুসকুড়ি ঘষা উচিত নয়।

৮. শিশুকে সরাসরি আলো বা ধুলাবালি থেকে রক্ষা করা

নবজাতক শিশুর হাম আক্রান্ত অবস্থায় তার চোখ ও ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে যায়। সরাসরি সূর্যালোক বা উজ্জ্বল আলোতে শিশুর চোখে জ্বালা হতে পারে, চোখ লাল হয়ে যেতে পারে এবং শিশুটি অস্বস্তি অনুভব করে। তাই শিশুকে অবশ্যই সরাসরি আলো থেকে রক্ষা করতে হবে। ঘরে হালকা আলো, পর্দা বা জানালা দিয়ে আলো নিয়ন্ত্রণ করা ভালো।

শিশুর ঘরের আলো খুব বেশি উজ্জ্বল হলে চোখে অস্বস্তি বাড়ে এবং ঘুমের ব্যঘাত ঘটে। নবজাতক হাম আক্রান্ত অবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর শরীরকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি দেয়। তাই ঘরে আলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিশুর বিশ্রাম নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর ত্বকও সংবেদনশীল হয়ে থাকে। সরাসরি সূর্যের আলো বা তীব্র আলোতে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশের জ্বালা বেড়ে যায়। তাই শিশুকে বাইরে নিয়ে গেলে সরাসরি আলো থেকে রক্ষা করতে ছাতা, হালকা কাপড় বা হুড ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরের ভেতরে থাকলেও জানালার পাশে সরাসরি আলো না পড়তে হবে।

ধুলাবালি শিশুর শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে। তাই শিশুর আশেপাশের পরিবেশ অবশ্যই ধুলোমুক্ত রাখা জরুরি। ঘর প্রতিদিন পরিষ্কার করা, ঝাড়ু দেওয়া এবং ফ্লোর ধোয়া শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

রান্নাঘরের ধোঁয়া, ধূমপান বা আগরবাতির ধোঁয়া শিশুর শ্বাসনালীতে জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। তাই হাম আক্রান্ত নবজাতককে এই ধরনের ধোঁয়াযুক্ত জায়গা থেকে দূরে রাখতে হবে। শিশুর ঘর যেন শান্ত, পরিষ্কার ও ভালোভাবে বায়ুসঞ্চালনযুক্ত হয়।

শিশুর খেলনা, কাপড় বা বিছানার কাপড় যাতে ধুলো না ধরে, তা নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত কাপড় পরিবর্তন ও পরিষ্কার করা শিশুর ত্বকের সংক্রমণ রোধে সাহায্য করে। এছাড়া, শিশুর ঘরে শিশু-বান্ধব বাতাস চলাচল নিশ্চিত করা জরুরি।

শিশুর সঙ্গে থাকা সকলের হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। শিশুকে স্পর্শ করার আগে হাত ধোয়া আবশ্যক। ধুলাবালি বা ময়লা হাত শিশুর শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এছাড়া, পরিধেয় কাপড়ও পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।

শিশুর ঘুমের সময় ঘর হালকা আলোযুক্ত এবং ধুলোমুক্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আলো ও ধুলাবালির কারণে শিশুর মানসিক অস্বস্তি বৃদ্ধি পায়, যা খাওয়া, ঘুম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই নিরাপদ পরিবেশ শিশুর আরোগ্যে সহায়ক।

সংক্ষেপে, নবজাতক শিশুকে সরাসরি আলো ও ধুলাবালি থেকে রক্ষা করা শিশুর চোখ ও ত্বকের সুরক্ষা দেয়, মানসিক শান্তি বজায় রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। এটি হাম আক্রান্ত শিশুর দ্রুত আরোগ্যের জন্য অপরিহার্য পদক্ষেপ।

৯. টিকাদান সম্পর্কে সচেতনতা

নবজাতক শিশুর হাম প্রতিরোধে টিকাদান হলো সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বাংলাদেশে জাতীয় ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামের (EPI) মাধ্যমে হাম প্রতিরোধের টিকা দেওয়া হয়। সাধারণত শিশুর বয়স ৯ মাসে প্রথম হাম টিকা প্রদান করা হয়। এই টিকা শিশুকে ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয় এবং গুরুতর জটিলতা কমায়। তাই টিকাদান নিশ্চিত করা অভিভাবকের মূল দায়িত্ব।

টিকা শুধু শিশুকেই সুরক্ষা দেয় না, পুরো পরিবারকেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। যদি পরিবারের অন্য সদস্যরা টিকা গ্রহণ না করে থাকেন, তারা শিশুকে সংক্রমিত করতে পারেন। তাই পরিবারের সকল সদস্যের টিকাদান আপডেট করা গুরুত্বপূর্ণ।

নবজাতক শিশু কখনও কখনও হাসপাতাল বা ঘরোয়া পরিবেশ থেকে সংক্রমিত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে টিকা শিশুর শরীরে সংক্রমণের মাত্রা কমায় এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে। শিশুর প্রথম টিকাদান ছাড়া হাম আক্রান্ত হলে, জটিলতা এবং শ্বাসনালীর সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

টিকাদানের সময় শিশুর ওজন, স্বাস্থ্য এবং পূর্বের টিকাদানের রেকর্ড পরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসক নিশ্চিত হন যে শিশুর শরীর টিকা নিতে প্রস্তুত। যদি শিশু দুর্বল বা অসুস্থ থাকে, তখন ডাক্তার টিকাদান সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারেন। এজন্য অভিভাবকরা শিশুর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নজরে রাখবেন।

টিকা শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এটি শুধুমাত্র হাম প্রতিরোধে কার্যকর নয়, বরং শিশু অন্য সংক্রমণ প্রতিরোধেও সক্ষম হয়। তাই প্রথম টিকা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, পরে যদি নির্দিষ্ট সময়পরবর্তী বুস্টার ডোজ আসে, তা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।

কিছু অভিভাবক টিকা নেয়ার সময় ভয় বা বিভ্রান্তিতে ভুগেন। মনে রাখতে হবে, নবজাতকের জন্য টিকা নিরাপদ এবং এটি শিশুর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর। শিশুকে হামের ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখতে টিকা বাধ্যতামূলক।

টিকাদানের পরে শিশুর শরীর পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক জ্বর, হাত-পা ফোলা বা খোঁচা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া সাধারণত স্বাভাবিক এবং অল্প সময়ের মধ্যে কমে যায়। গুরুতর কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

শিশুর টিকাদান রেকর্ড রাখা জরুরি। এটি ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় বুস্টার ডোজ এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দরকার হয়। অভিভাবকরা ডায়রি বা হাসপাতালের রেকর্ডে সব টিকাদান লিখে রাখবেন।

সংক্ষেপে, নবজাতক শিশুর হাম প্রতিরোধে টিকাদান সচেতনতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিকা শিশুকে সুরক্ষা দেয়, সংক্রমণ রোধ করে এবং গুরুতর জটিলতা কমায়। এটি শিশুর সুস্থতা ও আরোগ্যের জন্য অপরিহার্য ধাপ।

আরোও পড়ুনঃ  কি খেলে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়?

১০. চিকিৎসার পর শিশুর যত্ন ও পুষ্টি বৃদ্ধি

নবজাতক শিশুর হাম হলে চিকিৎসা নেওয়ার পরও তার সঠিক যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার পর শিশুর শরীর দুর্বল থাকে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িকভাবে কমে যায়। তাই চিকিৎসা শেষ হলেও শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক পুষ্টি এবং নিরাপদ পরিবেশ দিতে হবে।

প্রথমে শিশুর খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। যদি শিশুর বয়স বুকের দুধ খাওয়ার উপযোগী হয়, তবে ঘন ঘন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের দুধ শুধু পুষ্টি নয়, এতে থাকে অ্যান্টিবডি যা শিশুর শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।

যদি শিশুর বয়স অনুযায়ী পরিপূরক খাবার দেওয়া হয়, তবে তা হালকা, পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য হওয়া উচিত। ভাতের স্যুপ, দুধ, হালকা সবজি বা ফলমূলের পিউরি শিশুর শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়। তবে শিশুর পেটে সমস্যা হলে নতুন খাবার ধীরে ধীরে দেওয়া উচিত।

চিকিৎসার পর শিশুর ঘর আরামদায়ক ও পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। বিশ্রামের জন্য নরম বিছানা, হালকা তাপমাত্রা এবং শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত আলো, গরম বা ঠান্ডা বাতাস শিশুকে অস্বস্তি দিতে পারে এবং পুনরায় অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

শিশুর ত্বক ও চোখের যত্ন অব্যাহত রাখতে হবে। ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ থাকলে তা ঘষা যাবে না। চোখে লালচে ভাব বা পানি আসলে নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। এই নিয়মিত যত্ন শিশুর আরাম বৃদ্ধি করে এবং সংক্রমণ রোধে সহায়ক।

শিশুর পানিশূন্যতা রোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। জ্বর বা ঘামের কারণে শরীর থেকে পানি হারায়। চিকিৎসার পর শিশুকে যথেষ্ট দুধ, হালকা তরল বা ডাক্তারের পরামর্শে ওআরএস দিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি শিশুর শক্তি বাড়ায় এবং হজম ঠিক রাখে।

শিশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ওষুধ শেষ হওয়ার পরও জ্বর, কাশি বা অন্য উপসর্গ থাকলে তা নজরে রাখা জরুরি। প্রয়োজনে ডাক্তারকে পুনরায় দেখানো প্রয়োজন হতে পারে।

শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দিন। মা-বাবার স্নেহ, কোলে নেওয়া, আলতো দোলানো এবং শান্ত পরিবেশ শিশুর মানসিক প্রশান্তি দেয়। মানসিক প্রশান্তি শিশুর শারীরিক সুস্থতা এবং পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরিবারের সকলের হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্ন থাকা অত্যন্ত জরুরি। শিশুকে স্পর্শ করার আগে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ শিশুর পুনরুদ্ধারকে দ্রুততর করে এবং সংক্রমণ কমায়।

চিকিৎসার পর শিশুর জন্য নিয়মিত খাওয়ানো, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখা হল মূল ধাপ। এভাবে শিশুর দেহের শক্তি বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং সুস্থ হয়ে ওঠার গতি বাড়ে। চিকিৎসার পর যত্ন ও পুষ্টি নিশ্চিত করলে নবজাতক শিশুর হাম থেকে পুনরায় অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

হাম হলে কি খেতে হবে?

Baby measles3

নবজাতক শিশুর হাম হলে খাবারের গুরুত্ব অসীম। কারণ শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং শক্তি দ্রুত শেষ হয়। এই সময়ে শিশুর খাবার এমন হওয়া উচিত যা সহজে হজম হয়, পুষ্টি সরবরাহ করে এবং শরীরকে শক্তিশালী রাখে। প্রথমেই মায়ের বুকের দুধ সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর খাবার। বুকের দুধে যথেষ্ট পানি, অ্যান্টিবডি, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে যা হাম ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে শিশুকে সাহায্য করে।

যদি শিশুর বয়স অনুযায়ী পরিপূরক খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে তা হালকা ও পুষ্টিকর হওয়া উচিত। ভাতের স্যুপ, দুধ, হালকা সবজি বা ফলমূলের পিউরি শিশুর শক্তি বৃদ্ধি করে। এই খাবার শিশুর হজম সহজ করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়। কঠিন বা তেলযুক্ত খাবার এই সময়ে শিশুর পেটে সমস্যা তৈরি করতে পারে, তাই এড়িয়ে চলা উচিত।

শিশুর পানিশূন্যতা রোধের জন্য পর্যাপ্ত তরল দিতে হবে। জ্বর, ঘাম এবং ফুসকুড়ির কারণে শিশুর শরীর থেকে পানি দ্রুত হারায়। মায়ের দুধের পাশাপাশি, ডাক্তার নির্দেশ দিলে হালকা ওআরএস বা তরল খাবার দেওয়া যেতে পারে। পর্যাপ্ত পানি শিশুর শক্তি বজায় রাখে এবং হজম ঠিক রাখে।

শিশুর খাবার ঘন ঘন ও অল্প অল্প পরিমাণে দেওয়াই ভালো। একবারে বেশি খাওয়ালে শিশুর পেট ভারি হয়ে যায় এবং অসুস্থতা বাড়তে পারে। ছোট ছোট সময় অন্তর খাবার দেওয়ার মাধ্যমে শিশুর শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় এবং শক্তি ফিরে আসে।

শিশুর খাবারের মান ও পরিচ্ছন্নতা গুরুত্বপূর্ণ। খাবার সবসময় পরিষ্কার এবং নরম হওয়া উচিত। ডান্ধার খাবার, ধুলো বা সংক্রমিত খাবার শিশুতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই খাবার তৈরি ও পরিবেশ পুরোপুরি পরিচ্ছন্ন রাখা আবশ্যক।

শিশুর খাবারের সঙ্গে মানসিক শান্তিও জরুরি। শিশুকে খাবার খাওয়ানোর সময় হঠাৎ চাপ, চিৎকার বা অস্থির পরিবেশ এড়িয়ে চলা উচিত। শান্ত পরিবেশ শিশুর ক্ষুধা বাড়ায়, হজম ভালো হয় এবং মানসিক শান্তি নিশ্চিত হয়।

শিশুর জন্য খাবারে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল নিশ্চিত করা দরকার। হালকা সবজি বা ফলমূলের পিউরি শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে নতুন খাবার ধীরে ধীরে দেওয়াই নিরাপদ।

শিশুর খাবারের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। অভিভাবক বা পরিচর্যাকারী হাত পরিষ্কার রাখবেন, শিশুর খাদ্যকে ধুলো বা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করবেন। শিশুর স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন খাবার প্রবর্তন করলে শরীর সঠিকভাবে পুষ্টি গ্রহণ করে।

সংক্ষেপে, হাম আক্রান্ত নবজাতক শিশুর খাবার হতে হবে সহজে হজমযোগ্য, পুষ্টিকর, পরিচ্ছন্ন এবং পর্যাপ্ত। বুকের দুধ, হালকা স্যুপ, ফলমূলের পিউরি ও পর্যাপ্ত পানি শিশুর শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সঠিক খাবার ও মানসিক শান্তি শিশুর দ্রুত আরোগ্য নিশ্চিত করে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

নবজাতক শিশুর হাম হলে করণীয়? এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

নবজাতক শিশুর হাম হলে কতবার বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত?

নবজাতক শিশুকে হামের সময় ঘন ঘন ছোট পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। এতে শিশুর শক্তি বজায় থাকে এবং পানি ও পুষ্টি সরবরাহ হয়, যা দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

হাম আক্রান্ত শিশুর জন্য ঘর কেমন থাকা উচিত?

 শিশুর ঘর যেন পরিষ্কার, হালকা বাতাস চলাচলযুক্ত, নরম ও আরামদায়ক হয়। সরাসরি সূর্যালোক, ধুলাবালি বা ধোঁয়া এড়িয়ে চলা জরুরি, যাতে শিশুর চোখ ও ত্বক সুরক্ষিত থাকে এবং মানসিক শান্তি বজায় থাকে।

উপসংহার

নবজাতক শিশুর হাম একটি সাধারণ কিন্তু সংবেদনশীল সমস্যা। শিশুর শরীর দ্রুত দুর্বল হয়ে যায়, জ্বর, কাশি, ফুসকুড়ি এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। তাই হামের সময়ে শিশুর প্রতি বিশেষ যত্ন এবং সঠিক পরিচর্যা অপরিহার্য। অভিভাবককে সচেতন, ধৈর্যশীল ও নিয়মিত মনোযোগী হতে হবে।

প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ওষুধ বা সিরাপ নিজে থেকে ব্যবহার করা ঠিক নয়। চিকিৎসক শিশুর বয়স, ওজন ও শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে সঠিক ওষুধ ও ব্যবস্থা নির্ধারণ করবেন। এটি শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে।

শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও আরামদায়ক পরিবেশে রাখা খুব জরুরি। শান্ত পরিবেশ শিশুর মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ঘর পরিষ্কার, হালকা বাতাস এবং নরম বিছানা শিশুর আরাম নিশ্চিত করে।

বুকের দুধ খাওয়ানো হামের সময় সবচেয়ে কার্যকর এবং নিরাপদ খাদ্য। এতে পুষ্টি, পানি এবং অ্যান্টিবডি থাকে যা শিশুকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। ঘন ঘন ছোট পরিমাণে খাওয়ানো শিশুর শক্তি বজায় রাখে।

জ্বর কমানো ও পানিশূন্যতা রোধ করা শিশু সুস্থ রাখতে অপরিহার্য। হালকা ভেজা কাপড়, পর্যাপ্ত তরল ও প্রয়োজনমতো ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহারে জ্বর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। পর্যাপ্ত পানি শিশুর শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শারীরিক ক্ষতি কমায়।

শিশুর চোখ ও ত্বকের যত্ন বিশেষ গুরুত্ব পায়। ফুসকুড়ি, র‍্যাশ বা চোখে পানি আসার মতো উপসর্গগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। পরিষ্কার কাপড় ও হালকা ঘর শিশুকে আরাম দেয় এবং সংক্রমণ কমায়।

পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং শিশুকে ধুলাবালি, তীব্র আলো ও ধোঁয়া থেকে রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংক্রমণ কমানো, মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা এবং দ্রুত সুস্থ হওয়া নিশ্চিত করে।

টিকাদান সচেতনতা শিশুদের হাম ও অন্যান্য সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। নির্দিষ্ট বয়সে টিকা নিশ্চিত করা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। অভিভাবকরা শিশুর টিকাদানের রেকর্ড রাখবেন।

চিকিৎসার পর শিশুর পুষ্টি ও পরিচর্যা অব্যাহত রাখা উচিত। হালকা খাবার, পর্যাপ্ত পানি, বিশ্রাম এবং নিরাপদ পরিবেশ শিশুর পুনরুদ্ধারে সহায়ক। মানসিক শান্তি এবং অভিভাবকের স্নেহ শিশুর সুস্থতা বৃদ্ধি করে।

অতএব, নবজাতক শিশুর হাম মোকাবেলায় চিকিৎসা, পরিচর্যা, সঠিক পুষ্টি, বিশ্রাম এবং নিরাপদ পরিবেশ একসাথে মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদক্ষেপ শিশুকে দ্রুত সুস্থ করে, সংক্রমণ রোধ করে এবং সুস্থ শিশুর বিকাশ নিশ্চিত করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *