Gourd1

লাউ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

লাউ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ জানলে আপনি অবাক হবেন, কারণ এই সাধারণ সবজি আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। পেটের সমস্যা থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন—প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লাউ যুক্ত করলে পেতে পারেন নানান উপকার।লাউ বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সহজলভ্য একটি সবজি। এটি শুধু সুস্বাদু রান্নায় ব্যবহৃত হয় না, বরং শরীরের জন্য অনেক উপকারীও বটে। গরমকালে লাউ শরীরকে শীতল রাখে এবং হজমের সমস্যা দূর করে। অনেকেই লাউ খেতে পছন্দ করেন না, কারণ এটি স্বাদে কিছুটা ফিকে। তবে যারা এর গুণাগুণ জানেন, তারা খাদ্যতালিকায় নিয়মিত লাউ রাখতে দ্বিধা করেন না।

বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের বাজার—সবখানেই লাউ সহজে পাওয়া যায়। লাউ গাছ অনেকটা লতানো গাছ, যার ফল বড় এবং ভেতরে নরম শাঁস থাকে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে লাউ শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে বলে এটি আরও জনপ্রিয়। তবে শুধু ফল নয়, লাউয়ের শাকও খাওয়ার উপযোগী এবং এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত পুষ্টিকর।

প্রাচীনকাল থেকেই লাউ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চিকিৎসকরা লাউকে শরীর ঠান্ডা রাখার এবং হজমশক্তি বৃদ্ধির একটি প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে দেখেন। বিশেষ করে যারা গ্যাস্ট্রিক বা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য লাউ একটি নিরাপদ খাদ্য হিসেবে বিবেচিত।

বর্তমান যুগে, যখন মানুষ প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে নানা রোগে ভুগছে, তখন লাউয়ের মতো প্রাকৃতিক সবজি খাওয়া অনেক বেশি জরুরি। এটি শুধু স্বাস্থ্যকর নয়, বরং সহজলভ্য ও কম দামের হওয়ায় সকল শ্রেণির মানুষ সহজেই কিনতে পারে।

তবে মনে রাখতে হবে, লাউ যেমন উপকারি, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে এটি অপকারও করতে পারে। অতিরিক্ত খাওয়া বা ভুলভাবে খাওয়ার কারণে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।এই ব্লগ পোস্টে আমরা লাউ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

লাউ খেলে কি ঠান্ডা লাগে?

Gourd2

বাংলাদেশে অনেকেই বিশ্বাস করেন লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আসলে এ কথার পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তিও আছে। লাউয়ের মধ্যে পানির পরিমাণ প্রায় ৯৬%। এজন্য এটি শরীরকে স্বাভাবিকভাবে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মকালে যখন প্রচণ্ড গরমে শরীর পানিশূন্য হয়ে যায়, তখন লাউ খেলে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকে।

আয়ুর্বেদে লাউকে ঠান্ডা প্রকৃতির খাবার হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ এটি শরীরের ভেতরের অতিরিক্ত গরম কমিয়ে দেয়। যারা সহজে ঘামেন বা শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তারা যদি নিয়মিত লাউ খান তবে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন। তবে এখানে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে—সব মানুষের শরীর এক রকম নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে লাউ খাওয়ার পর সর্দি বা হালকা ঠান্ডার উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

শিশু ও বয়স্করা যদি ঠান্ডা-প্রবণ হন, তবে তাদের বেশি পরিমাণে লাউ খাওয়ানো উচিত নয়। বিশেষ করে রাতের বেলা লাউ খেলে অনেকের কাশি বা সর্দি বেড়ে যেতে পারে। আবার যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রেও লাউ কিছুটা ঠান্ডাজনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে।

তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে, লাউ খাওয়া মানেই ঠান্ডা লাগা নয়। এটি নির্ভর করে ব্যক্তির দেহের প্রকৃতি ও স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর। তাই সঠিক পরিমাণে খেলে লাউ আসলে শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং গরম থেকে রক্ষা করে।

লাউ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ ?

Gourd3

লাউ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি শুধু ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ নয়, বরং অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। লাউ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো-

১. শরীর ঠান্ডা রাখে

লাউয়ের সবচেয়ে বড় উপকার হলো শরীর ঠান্ডা রাখা। এর প্রায় ৯৫-৯৬% অংশ পানি দিয়ে গঠিত, যা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে। গরমের দিনে শরীর ঘেমে গেলে বা পানিশূন্যতা দেখা দিলে লাউ খেলে তা দ্রুত পূরণ হয়। এজন্য আয়ুর্বেদে লাউকে “শীতল প্রকৃতির খাদ্য” বলা হয়। যারা দীর্ঘ সময় রোদে কাজ করেন, তাদের হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে। লাউ খেলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এটি শুধু শরীরের ক্লান্তি দূর করে না, বরং মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অতিরিক্ত গরমে বিরক্তি কমায়।

লাউ শরীরের ভেতরের অতিরিক্ত গরম কমিয়ে মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে। এজন্য রাগী স্বভাবের মানুষ বা যাদের সহজে মাথা গরম হয়, তাদের জন্য লাউ কার্যকর। এছাড়া অতিরিক্ত তাপে যে অ্যাসিডিটি বা পেট জ্বালা হয়, তাও কমে যায়। বাংলাদেশে গরমের সময় লাউ অনেক বেশি খাওয়া হয়। গ্রামের মানুষরা গ্রীষ্মকালে প্রায়ই লাউ রান্না করেন, কারণ এটি শরীর ঠান্ডা রাখে।

তবে সাবধানতা দরকার। যাদের সহজে সর্দি-কাশি হয় বা ঠান্ডা লেগে যায়, তাদের লাউ খাওয়ায় নিয়ম মানতে হবে। বিশেষ করে রাতে বেশি খেলে সর্দি বাড়তে পারে। শিশু ও বয়স্কদের জন্যও এ নিয়ম প্রযোজ্য। দিনের বেলায় বা দুপুরে খেলে লাউ বেশি উপকারী।

লাউয়ের স্যুপ বা রস গরমে বিশেষভাবে উপকারী। বাজারে পাওয়া ঠান্ডা ড্রিঙ্কসের পরিবর্তে লাউয়ের রস খাওয়া শরীরের জন্য অনেক ভালো। এটি তৃষ্ণা মেটায় এবং শরীরকে স্বাভাবিক রাখে। সব মিলিয়ে, গ্রীষ্মের গরমে লাউ হলো এক প্রাকৃতিক ঠান্ডা খাবার।

২. হজমশক্তি বাড়ায়

লাউ হজমের জন্য অসাধারণ একটি সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। যারা প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাদের জন্য লাউ একটি প্রাকৃতিক ওষুধ। আঁশ মলকে নরম করে এবং সহজে বের হতে সাহায্য করে।

আরোও পড়ুনঃ  গর্ভাবস্থায় মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

লাউতে প্রচুর পানি থাকায় এটি পেট ঠান্ডা রাখে। হজমের গণ্ডগোল বা পেটে ভারি ভাব দূর করে। যারা ভারী খাবার খান, তাদের জন্য লাউ একটি ব্যালান্স হিসেবে কাজ করে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগা মানুষ লাউ খেলে আরাম পান। কারণ এতে কোনো অ্যাসিডিক প্রভাব নেই।

শিশুদের হজমশক্তি দুর্বল হলে তাদের খাবারে লাউ দেওয়া যেতে পারে। এটি হালকা এবং সহজপাচ্য। একইভাবে বয়স্করা যারা বদহজমে ভোগেন, তারাও লাউ খেতে পারেন। আয়ুর্বেদ মতে, লাউ পেটের আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করে হজমকে উন্নত করে।

নিয়মিত লাউ খেলে শরীরে টক্সিন জমে না। ফলে গ্যাস, ডায়রিয়া বা অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমে যায়। এটি খাবারের পুষ্টিগুণ সঠিকভাবে শরীরে শোষণ করতেও সাহায্য করে। তাই হজমশক্তি সুস্থ রাখতে লাউ একটি অপরিহার্য খাবার।

৩. লিভার সুস্থ রাখে

লাউ লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি লিভারের কাজকে সহজ করে এবং অতিরিক্ত চাপ কমায়। লাউ লিভারকে টক্সিনমুক্ত রাখে। যারা অ্যালকোহল বা তেল-চর্বি জাতীয় খাবার বেশি খান, তাদের লিভারে সহজেই চর্বি জমে। লাউ খেলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।

জন্ডিস রোগীদের জন্য লাউ বিশেষ উপকারী। এটি লিভারের প্রদাহ কমায় এবং নতুন কোষ তৈরি করে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় লাউকে লিভার টনিক হিসেবে ধরা হয়। লাউয়ের রস লিভারের অস্বাভাবিকতা কমাতে সাহায্য করে।

বর্তমান সময়ে ফ্যাটি লিভার একটি সাধারণ রোগ। এটি নিয়ন্ত্রণে লাউ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। লিভারের সঠিক কার্যকারিতা শরীরের জন্য অপরিহার্য। কারণ লিভারই শরীরের টক্সিন ফিল্টার করে। তাই নিয়মিত লাউ খেলে লিভার সুস্থ থাকে।

৪. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

লাউ হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এতে থাকা আঁশ রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। ফলে ধমনীতে চর্বি জমতে পারে না। একই সঙ্গে লাউয়ের পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তারা নিয়মিত লাউ খেলে উপকার পাবেন।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব জরুরি। লাউয়ে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা দেয়। এটি হৃদয়ের রক্তসঞ্চালন উন্নত করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের বড় কারণ। লাউ ওজন কমাতে সাহায্য করে বলে এটি পরোক্ষভাবে হৃদযন্ত্রকেও রক্ষা করে। এজন্য চিকিৎসকরা প্রায়ই হার্ট রোগীদের খাদ্যতালিকায় লাউ রাখতে বলেন।

৫. ওজন কমাতে সাহায্য করে

লাউ ওজন কমানোর জন্য আদর্শ সবজি। এতে ক্যালোরি খুবই কম, কিন্তু পানি ও আঁশ অনেক বেশি। এটি খেলে দ্রুত ক্ষুধা মেটে, আবার অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে। এজন্য বারবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

ডায়েট করা মানুষদের জন্য লাউ অত্যন্ত কার্যকর। এটি শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেয়, কিন্তু বাড়তি ক্যালোরি যোগ করে না। ফলে মেদ জমে না। লাউয়ের আঁশ হজম ধীরে করে, ফলে খাবারের পর বারবার ক্ষুধা লাগে না।

লাউয়ের স্যুপ বা ভাজি ডায়েট মেনুতে রাখা যায়। নিয়মিত লাউ খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে এবং শরীর হালকা লাগে। স্থূলতা কমাতে চাইলে লাউ খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।

৬. ত্বক ভালো রাখে 

লাউ শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না, এটি ত্বকের জন্যও বিশেষ উপকারী একটি সবজি। লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা শরীরের ভেতরের পানিশূন্যতা পূরণ করে। যখন শরীর ভেতর থেকে হাইড্রেটেড থাকে, তখন ত্বকও স্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল এবং মসৃণ দেখায়। যারা গরমে অতিরিক্ত ঘামেন এবং ত্বক শুষ্ক বা রুক্ষ হয়ে যায়, তাদের জন্য লাউ খাওয়া বেশ উপকারী।

লাউয়ে ভিটামিন সি, জিঙ্ক এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বকের কোষগুলোকে ফ্রি-র‌্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফলে অকাল বার্ধক্য, বলিরেখা কিংবা দাগ-ছোপ কমে যায়। এ কারণে লাউকে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং খাদ্য বলা যায়।

যাদের ব্রণ বা পিম্পল সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্যও লাউ সহায়ক। কারণ লাউ শরীরের ভেতরের অতিরিক্ত তাপ ও টক্সিন বের করে দেয়। এতে রক্ত পরিশুদ্ধ হয় এবং ব্রণ কম হয়। অনেকে লাউয়ের রস সরাসরি মুখে লাগান, যা ব্রণের দাগ দূর করতে সহায়ক বলে মনে করা হয়।

গ্রামবাংলায় অনেকেই সৌন্দর্যচর্চার জন্য লাউয়ের রস ব্যবহার করে আসছেন। এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বককে স্বাভাবিক জেল্লা দেয়। নিয়মিত লাউ খেলে ত্বক ভেতর থেকে পুষ্টি পায় এবং বাহ্যিকভাবে লাউয়ের পেস্ট ব্যবহার করলে ত্বক আরও সতেজ হয়।

অতএব, সুন্দর, মসৃণ ও স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে লাউ একটি সস্তা কিন্তু কার্যকর সবজি।

৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাউ একটি প্রমাণিত উপকারী সবজি। এতে প্রায় কোনো ফ্যাট বা কোলেস্টেরল নেই এবং ক্যালোরিও খুব কম। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীরা নিশ্চিন্তে লাউ খেতে পারেন। লাউয়ে থাকা প্রাকৃতিক আঁশ (ডায়েটারি ফাইবার) হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়তে পারে না।

লাউয়ে “হাইপোগ্লাইসেমিক” বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত লাউ খেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে এবং রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে আসে। এজন্য অনেক চিকিৎসক ডায়াবেটিস রোগীদের লাউয়ের তরকারি বা স্যুপ খেতে পরামর্শ দেন।

এছাড়াও, লাউ রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। লিভার সুস্থ থাকলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য ভালো থাকে। অনেক সময় ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত ওজন থাকে, যা রোগটিকে আরও জটিল করে তোলে। লাউ ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং এভাবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

আরোও পড়ুনঃ  হাতের নখের ফাঙ্গাস দূর করার উপায় সমূহ

গ্রামীণ বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই লাউয়ের ঝোল বা লাউ ভর্তা খেয়ে থাকেন। কারণ এটি হজমে সহজ, সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চাল-ভাতের সঙ্গে লাউ একটি আদর্শ খাবার।

৮. ঘুম ভালো করে 

আধুনিক জীবনে অনিদ্রা একটি বড় সমস্যা। লাউ ঘুম ভালো করার জন্য প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। লাউ শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং মস্তিষ্কে শান্তি আনে, যা ঘুমের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

লাউয়ে থাকা প্রাকৃতিক মিনারেল ও ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ুতন্ত্রকে রিল্যাক্স করে। যারা মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা বা অতিরিক্ত কাজের চাপে ঘুমাতে পারেন না, তারা নিয়মিত লাউ খেলে উপকার পেতে পারেন। লাউয়ের রস খেলে বিশেষভাবে ঘুম ভালো হয় বলে আয়ুর্বেদে উল্লেখ আছে।

বাংলাদেশের অনেক গ্রামে বয়স্করা ঘুম না এলে লাউয়ের ঝোল বা হালকা ভর্তা খেয়ে থাকেন। এতে শরীর হালকা হয়, পাকস্থলী শান্ত থাকে এবং গভীর ঘুম আসে।

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে তাপমাত্রা কমলে ঘুম তাড়াতাড়ি আসে। লাউ শরীর ঠান্ডা রাখে বলে ঘুমের প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে। যারা রাত জেগে কাজ করেন বা বারবার ঘুম ভেঙে যায়, তাদের জন্য লাউ কার্যকর হতে পারে।

৯. কিডনি সুস্থ রাখে  

কিডনিকে সুস্থ রাখতে লাউ অন্যতম উপকারী সবজি। লাউয়ে থাকা প্রচুর পানি শরীরে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। কিডনি যখন শরীর থেকে ইউরিক এসিড, সোডিয়াম ও অন্যান্য বর্জ্য বের করে, তখন পর্যাপ্ত পানি থাকা জরুরি। লাউ সেই পানির ঘাটতি পূরণ করে।

লাউ মূত্রবর্ধক (Diuretic) হিসেবে কাজ করে। ফলে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত লবণ ও ক্ষতিকর উপাদান বের হয়ে যায়। যাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাদের জন্য লাউ বিশেষ উপকারী।

এছাড়া, লাউয়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কিডনির কোষকে রক্ষা করে এবং কিডনির প্রদাহ কমায়। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ক্ষতি করে। লাউ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে কিডনি দীর্ঘদিন সুস্থ থাকে।

বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে কিডনি সমস্যায় ভুগলে লাউয়ের ঝোল খাওয়ার প্রচলন আছে। যদিও এটি কোনো চিকিৎসার বিকল্প নয়, তবে প্রাকৃতিক উপায়ে কিডনি সুস্থ রাখতে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।

১০. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

লাউ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ভিটামিন সি, জিঙ্ক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় রাখে। ফলে শরীর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

নিয়মিত লাউ খেলে সর্দি-কাশি, জ্বর বা মৌসুমি রোগ কম হয়। লাউয়ে থাকা ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়ায়, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য লাউ খাওয়া দরকার।

এছাড়াও, লাউ লিভার ও পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলো ভালোভাবে কাজ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও স্বাভাবিক থাকে। যারা প্রায়ই অসুস্থ হন বা দুর্বলতা অনুভব করেন, তারা লাউ খেয়ে উপকার পেতে পারেন।

গ্রামীণ বাংলাদেশে শীতের সময়ও মানুষ লাউ খায়, যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় থাকে। এককথায়, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য লাউ এক অনন্য প্রাকৃতিক খাদ্য।

লাউয়ের অপকারিতা সমূহ

Gourd4

লাউ একটি পুষ্টিকর ও উপকারী সবজি হলেও, সব খাবারের মতো এরও কিছু নেতিবাচক দিক আছে। অতিরিক্ত খাওয়া বা ভুলভাবে গ্রহণ করলে লাউ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত যাদের শরীরের প্রকৃতি ঠান্ডাজনিত, যাদের অ্যালার্জি আছে বা যাদের কিছু বিশেষ রোগ রয়েছে, তাদের জন্য লাউ কখনো কখনো সমস্যার কারণ হতে পারে। নিচে প্রতিটি সম্ভাব্য অপকারিতা আলাদা উপশিরোনামে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো-

১. অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে

লাউয়ে আঁশ ও পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এটি সীমিত পরিমাণে খেলে হজমে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া হলে উল্টো সমস্যার সৃষ্টি হয়। পাকস্থলীতে হজমের রস পাতলা হয়ে যায়, ফলে খাবার ভাঙতে দেরি হয়। এতে গ্যাস, বুক জ্বালা, ঢেকুর ওঠা ও পেটে ভারি ভাব দেখা দেয়।

বাংলাদেশের অনেক পরিবারে দুপুর ও রাত দুই বেলাতেই লাউ খাওয়ার অভ্যাস আছে। এতে শরীর অস্বস্তি অনুভব করে। রাতে হজমের গতি ধীর হয়ে যায়, তখন বেশি লাউ খেলে সকালে পেট গুড়গুড় আওয়াজ করে, অ্যাসিডিটি হয়। শিশুরা এ সমস্যায় বেশি ভোগে, কারণ তাদের হজমশক্তি দুর্বল।

এছাড়া, বেশি আঁশ একদিকে যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পারে, অন্যদিকে অতিরিক্ত হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি তৈরি করে। বাস্তবে দেখা যায়, অনেকে লাউয়ের রস একসাথে আধা লিটার পান করেন। এরপরই পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বা বমি শুরু হয়।

সুতরাং, লাউ হজমে উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাওয়া বড় ক্ষতির কারণ

২. ঠান্ডাজনিত সমস্যা বাড়াতে পারে

লাউ একটি শীতল প্রকৃতির সবজি। গরমকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে এটি ভালো কাজ করলেও শীতকালে বা রাতে খেলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা বাড়ে। অনেকেই লাউ খাওয়ার পর সর্দি-কাশি, গলাব্যথা বা মাথাব্যথায় আক্রান্ত হন।

বাংলাদেশে শীতকালে গ্রামে যখন টনসিল, কাশি ও ঠান্ডা বেশি হয়, তখন লাউ খেলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। বিশেষত শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভোগেন। অনেক অ্যাজমা রোগী লাউ খাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। কারণ লাউ শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা করে শ্বাসনালীতে চাপ সৃষ্টি করে।

টনসিলের রোগীদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হয়। লাউ খাওয়ার পর গলাব্যথা বাড়ে, টনসিল ফুলে যায়। বাস্তবে দেখা গেছে, রাতে লাউ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সকালে নাক দিয়ে পানি পড়া, হালকা জ্বর বা শরীর ব্যথা দেখা দেয়।

আরোও পড়ুনঃ  খালি পেটে চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

তাই যাদের ঠান্ডা ধরার প্রবণতা বেশি, তাদের লাউ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৩. রক্তচাপ কমে যেতে পারে

লাউ প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ কমানোর গুণ রাখে। এজন্য উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এটি উপকারী হলেও, স্বাভাবিক বা নিম্ন রক্তচাপের মানুষের জন্য বিপজ্জনক।

বাংলাদেশে অনেকেই সকালে লাউয়ের রস খাওয়ার অভ্যাস করেছেন। গবেষণায় দেখা যায়, লাউ রস খেলে রক্তচাপ দ্রুত কমে যায়। যাদের রক্তচাপ আগে থেকেই কম, তাদের মাথা ঘোরা, হাত-পা কাঁপা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

গরমে ঘাম দিয়ে শরীর থেকে লবণ বেরিয়ে যায়। তার সাথে যদি লাউ খাওয়া হয়, তবে সোডিয়াম লেভেল আরও কমে যায়। ফলে রক্তচাপ হঠাৎ নিচে নেমে যায়।

বিশেষ করে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হয়। কারণ তাদের রক্তচাপ স্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। অতিরিক্ত লাউ খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

তাই যাদের রক্তচাপ কম, তাদের লাউ খাওয়া সীমিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

৪. অ্যালার্জির ঝুঁকি

লাউ সবসময় সবার শরীরের সাথে মানিয়ে যায় না। কিছু মানুষের শরীরে এটি খাওয়ার পর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকে লাউ খাওয়ার পর মুখ, জিহ্বা বা গলায় চুলকানি অনুভব করেন। কারও কারও শরীরে লালচে দাগ বা র‍্যাশ দেখা দেয়।

বাংলাদেশে শিশুদের এ সমস্যা বেশি হয়। অনেক সময় শিশু লাউ খাওয়ার পর হঠাৎ কাশি শুরু হয় বা শরীরে চুলকানি হয়। কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়।

অ্যালার্জির গুরুতর অবস্থা হলো অ্যানাফাইল্যাক্সিস। এতে গলা ফুলে যায়, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, মাথা ঘোরে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে জীবন ঝুঁকিতে পড়ে।

যাদের আগে থেকেই খাবার অ্যালার্জির ইতিহাস আছে, তাদের লাউ খাওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে। নতুন খাবার হিসেবে লাউ খাওয়ার সময় অল্প পরিমাণে শুরু করা উচিত।

৫. বিষাক্ততার ঝুঁকি

লাউয়ের সবচেয়ে মারাত্মক অপকারিতা হলো বিষাক্ততার ঝুঁকি। অনেক সময় লাউয়ে কুকুরবিটাসিন (Cucurbitacin) নামক বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়। তখন এর স্বাদ হয় অস্বাভাবিকভাবে তিক্ত।

যদি কেউ ভুল করে এমন লাউ খেয়ে ফেলে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বমি, ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, মাথা ঘোরা শুরু হয়। অতিরিক্ত হলে কিডনির ক্ষতি হয়, শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রায়ই খবর পাওয়া যায়, বিষাক্ত লাউ রস খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। রান্না করার পরও যদি লাউ তিক্ত স্বাদের হয়, তাহলে সেটি না খাওয়াই ভালো।

তাই লাউ খাওয়ার আগে সামান্য অংশ চেখে দেখা উচিত। বিশেষ করে রস বানানোর সময় এটি অত্যন্ত জরুরি।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

লাউ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

লাউ খাওয়া কি প্রতিদিন নিরাপদ?

হ্যাঁ, তবে পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। প্রতিদিন লাউ খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে, হজম ভালো হয় এবং পুষ্টি মেলে। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, অম্বল বা হজমে সমস্যা হতে পারে।

তিক্ত স্বাদের লাউ কি খাওয়া যায়?


না, একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। তিক্ত স্বাদের লাউয়ে কুকুরবিটাসিন নামক বিষাক্ত উপাদান থাকে, যা খেলে বমি, ডায়রিয়া, কিডনির ক্ষতি এমনকি প্রাণঘাতী সমস্যাও হতে পারে। রান্নার আগে অবশ্যই লাউ চেখে দেখা জরুরি।

উপসংহার

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা লাউ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম।লাউ একটি সুপরিচিত ও সহজলভ্য সবজি, যা বাংলাদেশের মানুষের খাবারের তালিকায় প্রতিদিনের মতোই স্থান পায়। এর ভেতরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, আঁশ ও পানির পরিমাণ, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে, হজম শক্তি বাড়াতে ও সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে উপকারের পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে, যা অগ্রাহ্য করা যায় না।

অতিরিক্ত লাউ খেলে হজমে সমস্যা, গ্যাস, বুক জ্বালা বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। যাদের শরীর ঠান্ডা-প্রবণ বা সহজেই সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন, তাদের জন্য লাউ অতিরিক্ত খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এছাড়া এটি প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, ফলে নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের জন্য লাউ ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জিও হতে পারে, বিশেষ করে শিশু ও সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। সবচেয়ে ভয়াবহ ঝুঁকি হলো লাউয়ের তিক্ত জাত, যেটিতে বিষাক্ত উপাদান (কুকুরবিটাসিন) থাকে। ভুল করে এ ধরনের লাউ খাওয়া জীবনঘাতী হতে পারে।তাই লাউ খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি। পরিমাণমতো খাওয়া, মৌসুম ও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী খাওয়া এবং রান্নার আগে স্বাদ পরীক্ষা করা উচিত। শিশুরা, বৃদ্ধরা কিংবা যাদের দীর্ঘদিনের অসুখ আছে, তারা বিশেষ সতর্ক হবেন।

অর্থাৎ, লাউ যেমন উপকারী, তেমনি অসতর্কভাবে খেলে এটি ক্ষতির কারণও হতে পারে। সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে ও সঠিকভাবে লাউ খাওয়াই সুস্থ থাকার বুদ্ধিমানের কাজ লাউ খাওয়ার উপকারিতা সমূহ সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবেন। আর এমন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো বিনামূল্যে জানতে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *