শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সমূহ
শিশুর স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রতিটি অভিভাবকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোর একটি। ছোট্ট শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় অনেকটাই কম থাকে, এজন্য তারা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় দ্রুত ভুগতে পারে। বিশেষ করে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বাংলাদেশের শিশুদের মাঝে একটি সাধারণ সমস্যা। এ অবস্থায় শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়, ফলে শিশু দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মারাত্মক পানিশূন্যতার ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেক সময় সঠিক খাবার ও যত্নের অভাবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। তাই অভিভাবকদের উচিত প্রাথমিক অবস্থায় সতর্ক হওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে প্রথমেই বুঝতে হবে এটি কেন হচ্ছে। কখনো এটি নোংরা পানি বা খাবারের কারণে হয়, আবার কখনো সংক্রমণ, অ্যালার্জি, কিংবা দাঁত উঠার সময় এ সমস্যাটি দেখা দেয়। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সাধারণত ঘরে বসেই কিছু খাবার ও প্রাকৃতিক উপায়ে শিশুর এই সমস্যা কমানো যায়। শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর না করে সঠিক যত্ন, পুষ্টিকর খাবার, এবং ঘরোয়া উপায়ে অনেক শিশুই দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ কিংবা শহুরে পরিবেশে মা–বাবারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন। এগুলো যেমন সহজলভ্য, তেমনি শিশুর জন্য নিরাপদও বটে। তবে শিশুর অবস্থার অবনতি হলে বা ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব – শিশুর পাতলা পায়খানার সময় কী কী খাবার খাওয়ানো উচিত, শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সমূহ, প্রয়োজনে কোন সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে এবং সবশেষে একটি সার্বিক উপসংহার। এ লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো অভিভাবকদের হাতে এমন কিছু কার্যকরী তথ্য তুলে ধরা, যা সহজে প্রয়োগযোগ্য এবং শিশুকে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করবে।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে কি খাবার খেতে হবে?

শিশুর পাতলা পায়খানার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা। খাবারের মাধ্যমে শিশুর শক্তি ফিরে আসে, অন্ত্রের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয় এবং পায়খানা ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রথমে তরল খাবার ও পানীয় দেওয়া জরুরি। ভাতের মাড়, ডাবের পানি, হালকা স্যুপ বা ঝোল শিশুর পেটকে আরাম দেয় এবং শরীরে পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করে। ছোট বাচ্চাদের জন্য মায়ের বুকের দুধ সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে অন্য কোনো তরল দেওয়া প্রয়োজন হয় না।
দ্বিতীয়ত, হালকা ও সহজপাচ্য খাবার দেওয়া উচিত। পাকা কলা, সেদ্ধ আলু, পাকা পেঁপে, মশলাবিহীন খিচুড়ি শিশুদের জন্য সহজে হজমযোগ্য। এগুলো শরীরকে শক্তি যোগায় এবং মল ঘন করতে সাহায্য করে। শিশুর ক্ষুধা কমলেও ছোট ছোট অংশে বারবার খাওয়ানো উচিত।
প্রোটিন ও পুষ্টি জোগানোর জন্য দই, পাতলা ডাল, স্যুপ বা ঝোল দেওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়ার সময় চর্বিযুক্ত বা তেল-ঝাল খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো পেটকে আরও অসুবিধাজনক করে।
শিশুর খাবার প্রস্তুতিতে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব খাবার যেন টাটকা হয়। বাসি বা দূষিত খাবার শিশুকে আরও অসুস্থ করতে পারে। সবজি, ভাত ও ডাল ভালোভাবে সিদ্ধ করে, কোনো ঝাল বা মশলা না দিয়ে খাওয়ানো উচিত।
গ্রামীণ ও শহুরে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ মা-বাবাদের পরামর্শ অনুযায়ী, পাতলা পায়খানার সময় শিশুদের হালকা খাবার, তরল এবং দই-ভিত্তিক খাবার খাওয়ানো সবচেয়ে কার্যকর। এছাড়া শিশু যতটা সম্ভব বিশ্রাম নেবে, শক্তি ফিরে পাবে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হবে।
শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সমূহ ?

শিশুর পাতলা পায়খানা হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রথমেই ঘরোয়া কিছু কার্যকর উপায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। এগুলো প্রাকৃতিক এবং শিশুর জন্য নিরাপদ। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যদি পাতলা পায়খানা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তখন দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
১: শিশুকে প্রচুর তরল ও স্যালাইন খাওয়ানো
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করা। কারণ পাতলা পায়খানার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ঠোঁট ফেটে যাওয়া, চোখের নিচে কালি পড়া, শিশু অলস হয়ে যাওয়া, কান্নার সময় অশ্রু না আসা এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। এই অবস্থায় শিশুকে সঠিকভাবে তরল খাওয়ানো খুব জরুরি।
সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হলো ঘরে তৈরি ওরাল রিহাইড্রেশন সল্যুশন (ORS) বা স্যালাইন খাওয়ানো। এক লিটার পানিতে আধা চা-চামচ লবণ ও ছয় চা-চামচ চিনি মিশিয়ে সহজেই এই স্যালাইন বানানো যায়। তবে বাজারে পাওয়া স্যালাইন প্যাকেটও ব্যবহার করা যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যসম্মত ও নির্ভরযোগ্য। শিশুকে সামান্য সামান্য করে চামচ দিয়ে খাওয়াতে হবে। একসাথে বেশি দিলে বমি হতে পারে, তাই অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ানো উত্তম।
শুধু স্যালাইন নয়, অন্যান্য তরল যেমন ভাতের মাড়, ডাবের পানি, পাতলা স্যুপ, ফলের রস (যেমন ডাবের পানি বা পাতলা করা ডালিমের রস) শিশুকে দেওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোন ধরনের কোল্ড ড্রিঙ্ক, কফি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় পানীয় যেন না খায়। এগুলো শরীরের পানিশূন্যতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
শিশুর বয়স যদি ছয় মাসের কম হয় এবং এখনও শুধু বুকের দুধ খায়, তাহলে মায়ের বুকের দুধই সবচেয়ে ভালো তরল। এই সময়ে বুকের দুধ খাওয়ানো একেবারেই বন্ধ করা যাবে না। বরং ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত।
যদি শিশুর ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ গুরুতর হয়ে যায়, যেমন হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, অচেতন হয়ে পড়া বা অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে যাওয়া, তবে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। ঘরোয়া উপায়ে তরল খাওয়ানো হালকা অবস্থায় কার্যকর হলেও গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
২: দই খাওয়ানো
দই শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার একটি কার্যকর ঘরোয়া উপায় হিসেবে বহুদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। দইয়ে প্রোবায়োটিকস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে অন্ত্রের ভারসাম্য ফিরে আসে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
যখন শিশু পাতলা পায়খানায় ভুগছে, তখন দই খাওয়ালে অন্ত্রে থাকা জীবাণুগুলোর প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরতে শুরু করে। এতে পেটের সমস্যা কমে যায় এবং পায়খানার পরিমাণও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে।
শিশুর বয়স যদি এক বছরের বেশি হয়, তাহলে তাকে প্রতিদিন ২-৩ বার অল্প করে দই খাওয়ানো যেতে পারে। খুব বেশি ঠান্ডা দই না দিয়ে, ঘরের তাপমাত্রায় রাখা দই খাওয়ানো ভালো। চাইলে অল্প পরিমাণে ভাতের সাথে মিশিয়ে দেওয়া যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে কলা মিশিয়ে খাওয়ানোও উপকারী হতে পারে।
দই শুধু হজমে সাহায্য করে না, এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখে এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন বি থাকে, যা শিশুর শারীরিক উন্নয়নের জন্যও জরুরি।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, দই যেন সবসময় টাটকা হয়। বাসি দই বা টক হয়ে যাওয়া দই শিশুকে খাওয়ানো উচিত নয়। এছাড়া যদি শিশুর ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স থাকে, অর্থাৎ দুধ বা দুধজাত খাবার খেলে তার সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে দই খাওয়ানো এড়িয়ে চলতে হবে।
গ্রামবাংলায় এখনো দেখা যায়, পাতলা পায়খানা হলে শিশুদের ভাতের সাথে দই খাওয়ানো হয়, এবং এতে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে যদি ডায়রিয়া গুরুতর আকার ধারণ করে, শুধু দইয়ের উপর নির্ভর না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩: কলা খাওয়ানো
কলা শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করে এবং ডিহাইড্রেশন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া কলায় থাকা দ্রবণীয় আঁশ (soluble fiber) পাতলা পায়খানাকে ঘন করে দেয় এবং মলত্যাগের স্বাভাবিক গঠন ফিরিয়ে আনে।
শিশুর ডায়রিয়া হলে কলা নরম করে মেখে খাওয়ানো যেতে পারে। ছোট বাচ্চাদের জন্য কলা চটকে অল্প ভাত বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে দেওয়া ভালো। একটু বড় বাচ্চাদের সরাসরি কলা খাওয়ানোও যেতে পারে। দিনে অন্তত ২-৩ বার ছোট পরিমাণে কলা দিলে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে সহজলভ্য দেশি কলা যেমন সাবরি বা সাগর কলা ডায়রিয়ার সময় সবচেয়ে উপকারী। এগুলো নরম, মিষ্টি এবং শিশুর জন্য সহজপাচ্য। তবে কাঁচা কলা বা অতিরিক্ত কষযুক্ত কলা খাওয়ানো এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো হজমে সমস্যা করতে পারে।
কলা শুধু পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করে না, বরং এতে থাকা ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ও বিভিন্ন খনিজ শিশুর শরীরকে শক্তি জোগায়। ডায়রিয়ার সময় শরীর দুর্বল হয়ে যায়, শিশু খেতে চায় না। এ সময় কলা একটি চমৎকার শক্তিদায়ক খাবার হিসেবে কাজ করে।
গ্রামবাংলায় অনেক মা-খালা-দাদিরা এখনও ডায়রিয়া হলে বাচ্চাদের ভাত-কলা খাওয়ান। এই পদ্ধতি শুধু লোকজ জ্ঞান নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিক থেকেও যথেষ্ট কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তবে অতিরিক্ত কলা খাওয়ানো উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত আঁশ আবার পেটে অস্বস্তি আনতে পারে।
সবচেয়ে ভালো হয় দিনে বারবার অল্প অল্প করে কলা খাওয়ানো। শিশুর বয়স ও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। আর যদি কলা খাওয়ার পর শিশুর পেট ফেঁপে যায় বা অস্বস্তি দেখা দেয়, তবে কলা বন্ধ করতে হবে এবং চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
৪: ভাতের মাড় খাওয়ানো
ভাতের মাড় বা রাইস ওয়াটার শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার অন্যতম প্রচলিত ঘরোয়া উপায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকায় মায়েরা এই পদ্ধতি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন। ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরকে শক্তি জোগায় এবং শিশুর দুর্বলতা কমায়।
পাতলা পায়খানার কারণে শিশুর শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। ভাতের মাড় এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। এটি হজমে সহজ, শিশুর পেটে আরাম দেয় এবং অন্ত্রের জ্বালাভাব কমায়। সবচেয়ে ভালো হয় আংশিক সিদ্ধ ভাতের মাড় নেওয়া, যেখানে পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে।
ভাতের মাড় বানানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন অতিরিক্ত ঘন না হয়। পাতলা অবস্থায় খাওয়ালে শিশুর শরীর সহজে এটি গ্রহণ করতে পারে। চাইলে অল্প লবণ যোগ করা যায়, যা শরীরের লবণের ঘাটতি পূরণ করবে। তবে বেশি লবণ দেওয়া যাবে না, কারণ শিশুদের জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভাতের মাড় চামচে করে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। বড় বাচ্চারা একসাথে কিছুটা বেশি খেতে পারে। দিনে ৩-৪ বার খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ভাতের মাড় শুধু তরল সরবরাহই করে না, এটি শিশুর পায়খানা ধীরে ধীরে ঘন করতেও সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক স্টার্চ অন্ত্রকে আরাম দেয় এবং ডায়রিয়ার তীব্রতা কমায়।
যদি শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হয়, তবে শুধুমাত্র বুকের দুধই খাওয়ানো উচিত, ভাতের মাড় নয়। কিন্তু ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই ভাত রান্না করা হয়। তাই ভাতের মাড় পাওয়া কঠিন কিছু নয়, একদম সহজ ও দ্রুত তৈরি করা যায়। এ কারণেই পাতলা পায়খানা হলে ঘরে বসেই প্রথমিক সমাধান হিসেবে মাড় খাওয়ানো অন্যতম ভালো উপায়।
–৫: ডাবের পানি খাওয়ানো
ডাবের পানি শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে খুবই জনপ্রিয় ও কার্যকর। ডাবের পানিতে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে। এগুলো ডায়রিয়ার সময় শরীর থেকে হারানো লবণ ও খনিজ পূরণে সাহায্য করে। ফলে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ হয় এবং শিশুর শরীর দ্রুত শক্তি ফিরে পায়।
পাতলা পায়খানার কারণে শিশু দুর্বল ও অলস হয়ে যায়। ডাবের পানি এ সময় প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিঙ্ক হিসেবে কাজ করে। এতে কোনো প্রকার রাসায়নিক উপাদান নেই, যা ছোট শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে অবশ্যই টাটকা ও পরিষ্কার ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। বাজার থেকে ডাব কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে, পানি যেন দুর্গন্ধযুক্ত বা নষ্ট না হয়।
শিশুর বয়স যদি ছয় মাসের বেশি হয়, তবে তাকে অল্প অল্প করে ডাবের পানি খাওয়ানো যেতে পারে। একসাথে বেশি খাওয়ানো উচিত নয়। দিনে ২-৩ বার সামান্য পরিমাণে দিলেই ভালো ফল পাওয়া যায়। চাইলে ডাবের পানির সাথে অল্প লেবুর রস মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে, এতে শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতিও পূরণ হবে।
গ্রামবাংলায় পাতলা পায়খানা হলে এখনো প্রথম চিকিৎসা হিসেবে শিশুকে ডাবের পানি খাওয়ানো হয়। এটি শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না, পেটের জ্বালাভাবও কমায়। বিশেষ করে গরমকালে শিশুর ডায়রিয়ার সময় ডাবের পানি অত্যন্ত উপকারী।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধই দেওয়া উচিত, ডাবের পানি নয়। আবার যদি শিশুর ডায়রিয়া গুরুতর হয় এবং ডাবের পানি খাওয়ার পরও উন্নতি না হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৬: স্যুপ বা ঝোল খাওয়ানো
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে শরীরের শক্তি দ্রুত কমে যায়। এ সময় স্যুপ বা হালকা ঝোল খাওয়ানো শিশুর জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে মুরগির স্যুপ বা সবজির ঝোল হজমে সহজ এবং শরীরকে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়।
স্যুপে থাকা প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান শিশুর শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে। পাতলা পায়খানার কারণে শিশুর ক্ষুধা কমে যায়, কিন্তু স্যুপ বা ঝোল হালকা ও তরল হওয়ায় তারা সহজেই খেতে পারে। এতে পানি, লবণ ও ভিটামিন একসাথে সরবরাহ হয়, যা ডায়রিয়ার সময় খুবই কার্যকর।
সবজি দিয়ে স্যুপ তৈরি করলে শিশুর শরীরে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি পূরণ হয়। গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, আলু ইত্যাদি সবজি স্যুপে দিলে তা আরও পুষ্টিকর হয়। চাইলে অল্প পরিমাণে মুরগির মাংসও যোগ করা যায়। তবে তেল-ঝাল একেবারেই ব্যবহার করা যাবে না।
স্যুপ বা ঝোল খাওয়ানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে, এটি যেন হালকা গরম থাকে। ঠান্ডা স্যুপ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়া বাসি স্যুপ খাওয়ানো উচিত নয়, সবসময় টাটকা রান্না করা স্যুপ খাওয়ানো জরুরি।
বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবারগুলোতে শিশুদের পাতলা পায়খানার সময় ভাতের ঝোল খাওয়ানো প্রচলিত। ভাতের ঝোলে ভাতের স্টার্চ ও পানি একসাথে থাকে, যা হজমে সহজ এবং শিশুর অন্ত্রকে আরাম দেয়।
তবে স্যুপ বা ঝোল খাওয়ানো শুধুমাত্র সহায়ক চিকিৎসা। যদি ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে শুধু স্যুপের উপর নির্ভর না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
৭: মশলাবিহীন খিচুড়ি খাওয়ানো
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে মশলাবিহীন খিচুড়ি অত্যন্ত কার্যকর একটি ঘরোয়া উপায়। খিচুড়ি হলো ভাত ও ডালের মিশ্রণ, যা সহজপাচ্য এবং পুষ্টিকর। ডাল থেকে প্রোটিন ও ভাত থেকে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়, যা শিশুর শরীরকে দ্রুত শক্তি যোগায়।
ডায়রিয়ার সময় শিশুর পেট খুব সংবেদনশীল হয়ে যায়। এ সময় মশলা, তেল ও ভাজাপোড়া খাবার অন্ত্রে জ্বালাভাব সৃষ্টি করে এবং পাতলা পায়খানার সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই মশলা ছাড়া শুধু ভাত ও ডাল সিদ্ধ করে পাতলা খিচুড়ি তৈরি করে খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো সমাধান।
এই খিচুড়ি শিশুর হজমে সহায়তা করে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। চাইলে খিচুড়ির মধ্যে সামান্য সবজি যেমন গাজর, আলু, লাউ ইত্যাদি যোগ করা যেতে পারে। এগুলো শুধু খিচুড়িকে সুস্বাদুই করে না, শিশুর শরীরে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতিও পূরণ করে। তবে ঝাল, মরিচ বা অতিরিক্ত লবণ একেবারেই দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশের গ্রামে এবং শহরে সমানভাবে প্রচলিত এই পদ্ধতিটি এখনো অনেক মা ব্যবহার করেন। ছোট বাচ্চারা সাধারণত খিচুড়ি পছন্দ করে খায়। পাতলা খিচুড়ি নরম হওয়ায় শিশুর পেটের জন্য আরামদায়ক হয় এবং অন্ত্রের চাপ কমায়।
ডায়রিয়ার সময় শিশুর ক্ষুধা কমে যায়। মশলাবিহীন খিচুড়ি হালকা ও সুস্বাদু হওয়ায় শিশু সহজেই খেতে পারে। এতে একসাথে ভাত, ডাল ও সবজির পুষ্টি পাওয়া যায়, যা শরীরকে সুস্থ হতে সাহায্য করে।
তবে খিচুড়ি অবশ্যই টাটকা রান্না করতে হবে। বাসি খিচুড়ি বা দীর্ঘ সময় রেখে দেওয়া খাবার শিশুকে দেওয়া যাবে না। এছাড়া শিশুর বয়স অনুযায়ী খিচুড়ি চটকে বা নরম করে খাওয়াতে হবে।
মশলাবিহীন খিচুড়ি শুধু পাতলা পায়খানা বন্ধে নয়, বরং শিশুর দৈনন্দিন খাবার তালিকাতেও রাখা যেতে পারে। কারণ এটি স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিকর এবং সহজলভ্য।
৮.মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে সবচেয়ে কার্যকর ঘরোয়া উপায় হলো বুকের দুধ খাওয়ানো। বিশেষ করে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য মায়ের দুধই হলো সেরা খাবার। এই সময়ে অন্য কোনো তরল বা খাবারের প্রয়োজন হয় না।
বুকের দুধে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি থাকে, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে। ডায়রিয়ার সময় এই অ্যান্টিবডি শিশুর অন্ত্রকে সুরক্ষা দেয় এবং পাতলা পায়খানার তীব্রতা কমায়।
শুধু তাই নয়, বুকের দুধ সহজপাচ্য এবং শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় পানি ও পুষ্টি সরবরাহ করে। যখন শিশু পাতলা পায়খানায় ভুগছে, তখন ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। এতে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ হয় এবং শিশুর শক্তি ফিরে আসে।
বাংলাদেশে ডাক্তাররা সবসময়ই পরামর্শ দেন যে, ডায়রিয়া হলেও বুকের দুধ খাওয়ানো কখনো বন্ধ করা যাবে না। বরং এ সময়ে বুকের দুধ বাড়তি সুরক্ষা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, পাতলা পায়খানা হলে মায়েরা দুধ খাওয়ানো কমিয়ে দেন। এটি ভুল ধারণা। বরং এই সময়ে আরও বেশি দুধ খাওয়ানো দরকার।
বুকের দুধ শুধু খাবার নয়, এটি শিশুর জন্য ওষুধের মতো কাজ করে। এতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোবায়োটিক উপাদান শিশুর শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে।
যদি শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হয় এবং সে অন্যান্য খাবার খেতে শুরু করে থাকে, তবুও বুকের দুধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ এটি অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি শিশুর শরীরকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়।
সারকথা, ডায়রিয়ার সময় শিশুর যত্নের প্রথম পদক্ষেপই হলো ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো। এটি একদিকে শিশুর পানিশূন্যতা রোধ করে, অন্যদিকে অসুস্থতার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৯.মৌসুমি পাকা পেঁপে খাওয়ানো
পেঁপে শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে পাকা পেঁপেতে থাকা ফাইবার (আঁশ) অন্ত্রের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এটি মলকে ঘন করতে সাহায্য করে এবং পাতলা পায়খানার তীব্রতা কমায়। পেঁপেতে থাকা ভিটামিন এ, সি ও বিভিন্ন খনিজ শিশুর শরীরকে শক্তি যোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
শিশুর বয়স এক বছর বা তার বেশি হলে তাকে নরম করে কাটা পেঁপে খাওয়ানো যেতে পারে। ছোট বাচ্চাদের জন্য পেঁপে চটকে বা ম্যাশ করে খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো। দিনে ২-৩ বার অল্প পরিমাণে খাওয়ালে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে গ্রামীণ ও শহুরে পরিবারে এটি প্রচলিত এবং কার্যকর পদ্ধতি। বিশেষ করে মৌসুমি পেঁপে সহজলভ্য হওয়ায় এটি ঘরোয়া চিকিৎসার অন্যতম সমাধান। শিশুর ক্ষুধা কমলেও পেঁপে খেতে সহজ হওয়ায় তারা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, কাঁচা বা অর্ধপাকা পেঁপে শিশুদের দিতে যাবে না। কাঁচা পেঁপে অরুচিকর এবং অন্ত্রের জন্য হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সবসময় নরম ও পাকা পেঁপে ব্যবহার করুন।
শিশুর পেটের অস্বস্তি, বমি বা ফোঁড়াভাব দেখা দিলে পেঁপে খাওয়ানো বন্ধ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। পেঁপে খাওয়ানো শুধু পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করে না, এটি শিশুর শরীরে শক্তি যোগায় এবং হজমশক্তি বাড়ায়।
ছোট ছোট টুকরো করে বা ম্যাশ করে খাওয়ানো হলে শিশু সহজে গিলতে পারে এবং এতে শ্বাসনালীর কোনো সমস্যা হয় না। এটি বিশেষ করে এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশুদের জন্য কার্যকর।
পেঁপে শুধু খাবার নয়, এটি একটি প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে পেঁপে খাওয়ানো শিশুর ডায়রিয়া প্রতিরোধেও সহায়ক।
১০: ঘরে তৈরি স্যালাইন পানি খাওয়ানো
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে ঘরে তৈরি স্যালাইন পানি (ORS) খুবই কার্যকর। এটি শিশুর শরীরে হারানো পানি, লবণ ও খনিজ পূরণ করে। পাতলা পায়খানার সময় শিশুর শরীর ছোট হওয়ায় একেবারে সামান্য পানি হারলেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। ঘরে তৈরি স্যালাইন দ্রুত এই ঝুঁকি কমায়।ঘরে স্যালাইন বানাতে এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানিতে আধা চা চামচ লবণ ও দুই চা চামচ চিনি মিশিয়ে নিন। সব ভালোভাবে মিশিয়ে শিশুকে অল্প অল্প করে খাওয়ান। একসাথে বেশি খাওয়ানো হলে বমি বা পেটের সমস্যা হতে পারে।
বাংলাদেশে অনেক মা-দাদা-নানি এখনও ঘরে স্যালাইন বানিয়ে শিশুকে খাওয়ান। এটি সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং কার্যকর। বাজারের ORS না থাকলেও ঘরে তৈরি স্যালাইন দিয়ে ডিহাইড্রেশন রোধ করা যায়।
ঘরে তৈরি স্যালাইন শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে পরিমাণ বেশি হলে লবণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা ক্ষতিকর। তাই প্রতিটি চুমুক বা চামচের পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে।
স্যালাইন পানি শিশুর শরীরকে সতেজ রাখে, পেটের অস্বস্তি কমায় এবং ডায়রিয়ার তীব্রতা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকর।
শিশু যদি বয়স অনুযায়ী আরও তরল গ্রহণ করতে সক্ষম হয়, তবে স্যালাইনের সঙ্গে ওরস্যালাইন বা ভাতের মাড়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সঠিক মিশ্রণ অপরিহার্য।
যদি শিশুর অবস্থা গুরুতর হয়, যেমন খুব দুর্বল, অচেতন বা খুব কম প্রস্রাব হয়, তবে ঘরে তৈরি স্যালাইনের উপর একেবারেই নির্ভর করা যাবে না। তখন দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ

শিশুর পাতলা পায়খানার জন্য বাজারে অনেক ধরনের ওষুধ ও সিরাপ পাওয়া যায়। তবে সব সিরাপ শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। সবসময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সাধারণত শিশুর ডায়রিয়ার জন্য ব্যাকটেরিয়ার কারণে তৈরি সিরাপ ব্যবহার করা হয়। এগুলো অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং পায়খানার তীব্রতা কমায়। শিশুদের বয়স অনুযায়ী ডোজ ঠিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
বাজারে পাওয়া প্রোবায়োটিক সিরাপও কার্যকর। এটি শিশুর অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে হজম স্বাভাবিক হয় এবং মল ঘন হয়।
শিশুর স্বাস্থ্য এবং পেটের সমস্যা অনুযায়ী সিরাপ নির্বাচিত করতে হবে। শিশু যদি অনেক ছোট হয়, অতিরিক্ত ডোজ দিলে বিপদ সৃষ্টি হতে পারে। তাই কোনো সিরাপ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সিরাপের পাশাপাশি শিশুকে তরল ও সহজপাচ্য খাবার দেওয়া উচিত। দই, ভাতের মাড়, পাকা কলা, সেদ্ধ আলু – এগুলো শিশুর শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগায়। সিরাপ একা যথেষ্ট নয়; সঠিক খাদ্য ও স্যালাইন ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
শিশুর পাতলা পায়খানা বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় সমূহ এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
শিশুর পাতলা পায়খানায় মায়ের বুকের দুধ বন্ধ করা কি ঠিক?
না, পাতলা পায়খানার সময়ও মায়ের বুকের দুধ বন্ধ করা উচিত নয়। বরং ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর। এটি পানিশূন্যতা রোধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ঘরে তৈরি স্যালাইন বা ভাতের মাড় কতবার খাওয়ানো উচিত?
শিশুকে ছোট ছোট অংশে দিনে ৩-৪ বার খাওয়ানো যেতে পারে। একসাথে বেশি দেওয়া উচিত নয়, কারণ এতে বমি বা পেটের সমস্যা হতে পারে। অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ানো সবচেয়ে ভালো।
উপসংহার
শিশুর পাতলা পায়খানা সাধারণত হালকা ও অল্প সময়ের জন্য হয়। তবে এটি কখনোই অবহেলিত হওয়া উচিত নয়। কারণ দ্রুত ডিহাইড্রেশন শিশুর শরীরকে দুর্বল করতে পারে।ঘরোয়া উপায় যেমন – মায়ের বুকের দুধ, ভাতের মাড়, দই, পাকা কলা, সেদ্ধ আলু, খিচুড়ি, ডাবের পানি, মৌসুমি পেঁপে এবং হালকা স্যুপ শিশুর পায়খানা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর। এছাড়া ঘরে তৈরি ORS বা স্যালাইন দ্রুত পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করে।শিশুর খাদ্য প্রস্তুতিতে সতর্কতা রাখা জরুরি। সব খাবার টাটকা, সহজপাচ্য এবং মশলাবিহীন হওয়া উচিত। শিশুর বয়স অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ ও ধরন ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ।ডায়রিয়ার সময় শিশুর ক্ষুধা কমে যায়, তাই ছোট ছোট অংশে বারবার খাওয়ানো উচিত। শিশুর দুর্বলতা কমাতে ঘন ঘন খাবার এবং তরল দেওয়া অত্যন্ত কার্যকর।শিশুর ডায়রিয়া যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, ডিহাইড্রেশন দেখা দেয় বা শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।সঠিক খাদ্য, পর্যাপ্ত তরল, ORS এবং প্রয়োজনে সিরাপ ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুর পাতলা পায়খানা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে প্রায়শই শিশুর পুনরায় সুস্থ হওয়া নিশ্চিত করা যায়।