Hadith1

হাদিস কত প্রকার ও কি কি

ইসলামের জ্ঞানভাণ্ডারে হাদিস একটি অপরিহার্য অংশ। হাদিস শুধু রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথা, কাজ, অনুমোদন কিংবা নীরব সম্মতির সংকলন নয়; বরং এটি মুসলমানদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পথ নির্দেশ করে। কুরআনুল কারীমের পর হাদিসই মুসলমানদের জন্য দ্বিতীয় মূল ভিত্তি। হাদিস ছাড়া কুরআনের বহু বিধান ও নির্দেশনা যথাযথভাবে বোঝা এবং পালন করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ, নামাজ, রোজা, হজ কিংবা যাকাত পালনের বিস্তারিত নিয়ম কুরআনে খুব সংক্ষেপে উল্লেখ আছে, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস ছাড়া সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ রূপ জানা যায় না। তাই হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ইসলামী শিক্ষার মূলভিত্তি হলো কুরআন ও হাদিস। প্রতিদিনের আমল থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি, সামাজিক সম্পর্ক, আচার-আচরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবক্ষেত্রেই হাদিসের আলোকে সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। এ কারণে মুসলমানদের জীবনে হাদিসের চর্চা ও অধ্যয়ন অপরিহার্য।

তবে প্রশ্ন আসে, হাদিস কত প্রকার ও কি কি? এ বিষয়ে জ্ঞান রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দরকার। কারণ বিভিন্ন প্রকার হাদিসের মান ভিন্ন, গ্রহণযোগ্যতার স্তর ভিন্ন এবং আমল করার নিয়মও ভিন্ন। সহিহ হাদিসকে ইসলামী শরীয়তের মূল দলিল হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু জাল বা দুর্বল হাদিসকে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয় না। তাই হাদিসের ধরনগুলো সঠিকভাবে জানা জরুরি।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব—হাদিস কাকে বলে, হাদিস কত প্রকার ও কি কি, মতন ও সনদ অনুসারে হাদিসের ধরন, সহিহ হাদিসের বৈশিষ্ট্য এবং মুসলমানদের জীবনে হাদিসের গুরুত্ব। সহজ ভাষায়, বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে এবং বাস্তব জীবনের উদাহরণসহ বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হবে, যেন পাঠক সহজেই বুঝতে ও আয়ত্ত করতে পারেন।

হাদীস কাকে বলে?

Hadith2

হাদিস শব্দটি এসেছে আরবি “হাদিস” থেকে, যার অর্থ “বক্তব্য, সংবাদ বা আলোচনা।” ইসলামী পরিভাষায়, হাদিস বলতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী, কাজ, অনুমোদন, অস্বীকৃতি বা নীরব সম্মতিকে বোঝানো হয়। কুরআনের পাশাপাশি হাদিস মুসলমানদের জন্য জীবন পরিচালনার দ্বিতীয় প্রধান উৎস।

উদাহরণস্বরূপ, কুরআনে শুধু নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু নামাজ কিভাবে পড়তে হবে, কয় রাকাত, কোন অবস্থায় কি বলা হবে—এসব বিস্তারিত পাওয়া যায় হাদিসে। তাই হাদিস ছাড়া ইসলামের পূর্ণাঙ্গ আমল সম্ভব নয়।

হাদিসকে দুই অংশে ভাগ করা হয়: সনদ (বর্ণনাকারীর ধারা) এবং মতন (মূল বক্তব্য বা বিষয়বস্তু)। সনদ যাচাই করে বোঝা যায় হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা কতটা দৃঢ়। আর মতন যাচাই করে বোঝা যায় বক্তব্যটি ইসলামি শরীয়তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।

বাংলাদেশে মাদরাসা, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে হাদিসের গভীর অধ্যয়ন করা হয়। এখানে সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, সুনান তিরমিজি প্রভৃতি হাদিস গ্রন্থ পড়ানো হয়। সাধারণ মুসলমানরাও বিভিন্ন ওয়াজ, বই ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হাদিস সম্পর্কে জানতে পারেন।

তবে মনে রাখতে হবে, সব হাদিস সমান মানের নয়। কিছু হাদিস সহিহ, কিছু হাসান, কিছু দাঈফ, আবার কিছু জাল। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি—তা বোঝা একজন মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সহিহ হাদিস কাকে বলে?

Hadith3

সহিহ হাদিস হলো এমন হাদিস যার সনদ নির্ভরযোগ্য এবং মতন কুরআন ও ইসলামী শরীয়তের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই ধরনের হাদিসকে ইসলামের দ্বিতীয় প্রধান উৎস হিসেবে ধরা হয়।

একটি সহিহ হাদিসের জন্য প্রয়োজন:
১. সনদে কোনো ছেদ থাকবে না।
২. প্রত্যেক বর্ণনাকারী সৎ, বিশ্বস্ত এবং হিফজে শক্তিশালী হতে হবে।
৩. মতন কুরআন বা অন্য কোনো সহিহ হাদিসের বিরোধী হবে না।

বাংলাদেশে বিভিন্ন মাদরাসায় সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম পড়ানো হয়, যা সহিহ হাদিসের সর্বোত্তম সংকলন। সাধারণ মুসলমানদের আমল ও জীবনধারার জন্য সহিহ হাদিসই অনুসরণ করা উচিত।

হাদিস কত প্রকার ও কি কি?

Hadith4

ইসলামী শাস্ত্রে হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআনের পর মুসলমানদের জীবনের দিশারী হিসেবে হাদিসকেই ধরা হয়। তবে সব হাদিস সমান মানসম্পন্ন নয়। তাই প্রশ্ন আসে—হাদিস কত প্রকার ও কি কি?। মূলত হাদিসকে গ্রহণযোগ্যতা, সনদ ও মতনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। নিচে আলোচিত ১০টি প্রকারই সবচেয়ে পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ।

১. সহিহ হাদিস

সহিহ হাদিস হলো এমন হাদিস, যা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে এসেছে এবং এতে কোনো ধরনের দুর্বলতা বা বিরোধ নেই। এটি ইসলামি শরীয়তের দ্বিতীয় প্রধান উৎস। সহিহ হাদিসের মূল বৈশিষ্ট্য হলো—সনদে কোনো ছেদ থাকবে না, বর্ণনাকারীরা ন্যায়পরায়ণ ও হিফজে শক্তিশালী হবেন, এবং মতন কুরআন বা অন্য সহিহ হাদিসের সঙ্গে বিরোধী হবে না। সহিহ হাদিসের অন্যতম উদাহরণ পাওয়া যায় সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে। বাংলাদেশে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা ও ওয়াজ মাহফিলে সহিহ হাদিসের চর্চা সবচেয়ে বেশি হয়। সাধারণ মানুষ নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ জীবনের প্রতিটি ইবাদতের ক্ষেত্রে সহিহ হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে। তাই যখন বলা হয়—হাদিস কত প্রকার ও কি কি, তখন প্রথমেই সহিহ হাদিসকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

২. হাসান হাদিস

হাসান হাদিস মূলত সহিহ হাদিসের কাছাকাছি হলেও বর্ণনাকারীদের হিফজ বা স্মৃতিশক্তি সহিহ পর্যায়ের মতো শক্তিশালী হয় না। তবে তাদের চরিত্র সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও আমানতদার। হাসান হাদিসকে শরীয়তে গ্রহণযোগ্য ধরা হয় এবং ফিকহি মাসআলা নির্ধারণে এটি ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় কোনো বিষয় সহিহ হাদিসে না পাওয়া গেলে হাসান হাদিস থেকে দিকনির্দেশনা নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু আমল বা সুন্নত কাজের ক্ষেত্রে হাসান হাদিসের উপর ভিত্তি করা হয়। বাংলাদেশের মানুষ দৈনন্দিন আমলে হাসান হাদিস থেকেও শিক্ষা নেয়। বিশেষত নৈতিকতা, আচার-আচরণ ও সামাজিক জীবনের অনেক দিক হাসান হাদিস থেকে উঠে আসে। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি বোঝাতে গেলে হাসান হাদিসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।

৩. দাঈফ হাদিস

দাঈফ হাদিসকে দুর্বল হাদিস বলা হয়। এর সনদে ছেদ থাকতে পারে, বর্ণনাকারীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে বা ন্যায়পরায়ণতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তবে সব দাঈফ হাদিসকে সরাসরি বাতিল করা হয় না। অনেক আলেম বলেছেন, যদি কোনো দাঈফ হাদিস কুরআন বা সহিহ হাদিসের বিপরীতে না যায়, তবে নৈতিকতা বা আমলের ফজিলতের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রমজান মাসে কিছু দোয়া বা আমলের ক্ষেত্রে দাঈফ হাদিস উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ অনেক সময় অজান্তেই দাঈফ হাদিস শুনে থাকে, বিশেষত ওয়াজ বা লোকমুখে প্রচলিত বর্ণনায়। তাই সঠিক জ্ঞান না থাকলে বিভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে। এ কারণেই আলেমরা সতর্ক করে দেন—হাদিস কত প্রকার ও কি কি জানতে হবে এবং কোনটার উপর আমল করা যাবে তা বুঝতে হবে।

৪. মাওজু হাদিস

মাওজু হাদিস মানে জাল বা বানানো হাদিস। এগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সম্পূর্ণ মিথ্যা যুক্ত করা হয়। ইসলামি শরীয়তে মাওজু হাদিসের কোনো স্থান নেই। বরং জাল হাদিস রচনা ও প্রচার করা একটি বড় গুনাহ। ইতিহাসে দেখা যায়, রাজনৈতিক, ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে কিছু মানুষ মাওজু হাদিস তৈরি করেছিল। আজও কিছু প্রচলিত উক্তি আছে যেগুলো হাদিস বলে দাবি করা হয়, অথচ তা জাল। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে প্রচলিত অনেক বাণী মানুষ হাদিস ভেবে ব্যবহার করে, অথচ তা আসলেই মাওজু। তাই আলেমরা বারবার সতর্ক করেন, হাদিস কত প্রকার ও কি কি জানা জরুরি, যাতে জাল হাদিস থেকে দূরে থাকা যায়।

আরোও পড়ুনঃ  ফুটবল খেলার রেফারির নিয়ম কানুন সমূহ

৫. মুরসাল হাদিস

মুরসাল হাদিস হলো এমন হাদিস, যেখানে বর্ণনাকারী সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথা উল্লেখ করলেও মাঝের কোনো সাহাবির নাম বাদ পড়ে যায়। অর্থাৎ সনদ অসম্পূর্ণ থাকে। এ ধরনের হাদিসকে অনেক আলেম দুর্বল বলে গণ্য করেছেন, আবার কেউ কেউ গ্রহণযোগ্য বলেছেন। মুরসাল হাদিস সাধারণত ফিকহি মাসআলার আলোচনায় সীমিত আকারে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুরসাল হাদিসকে আলাদা একটি গবেষণার বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। ছাত্ররা শিখে, কিভাবে মুরসাল হাদিসকে সহিহ বা দাঈফের সাথে তুলনা করতে হয়। তাই যখন বলা হয়—হাদিস কত প্রকার ও কি কি, তখন মুরসাল হাদিসকেও অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়।

৬. মুনকাতি হাদিস

মুনকাতি হাদিস হলো এমন হাদিস যার সনদে এক বা একাধিক স্থানে ছেদ ঘটে। অর্থাৎ বর্ণনাকারীর মধ্যে ধারাবাহিকতা নেই। ফলে এটি দুর্বল হয়ে যায়। ইসলামে মুনকাতি হাদিসের ব্যবহার সীমিত এবং এটি সাধারণত দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে ইসলামি গবেষকরা মুনকাতি হাদিসকে অন্যান্য হাদিসের সাথে তুলনা করে বিশ্লেষণ করেন। বাংলাদেশে উচ্চতর হাদিস গবেষণায় মুনকাতি হাদিসের আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেন শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে কোন হাদিসের সনদ সম্পূর্ণ আর কোনটা অসম্পূর্ণ। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি জানতে চাইলে মুনকাতি হাদিস সম্পর্কেও জানা আবশ্যক।

৭. মুদাল্লাস হাদিস

মুদাল্লাস হাদিস হলো এমন হাদিস, যেখানে বর্ণনাকারী ইচ্ছাকৃতভাবে বা অসাবধানতাবশত সনদে কোনো অংশ আড়াল করেন বা অন্যভাবে প্রকাশ করেন। এটি সাধারণত বিভ্রান্তি তৈরি করে। এ ধরনের হাদিসকে আলেমরা দুর্বল গণ্য করেছেন। মুদাল্লাস হাদিস ইসলামের ইতিহাসে অনেক সময় বড় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে কম জানলেও, আলেম ও গবেষকরা বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন। কারণ ইসলামী শরীয়তে স্পষ্টতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুদাল্লাস হাদিসের কথাও আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়।

৮. মুতাওয়াতির হাদিস

মুতাওয়াতির হাদিস হলো এমন হাদিস যা অসংখ্য বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বিভিন্ন চেইনে এসেছে। এত বেশি সংখ্যক লোক একসাথে মিথ্যা বলতে পারে না, তাই মুতাওয়াতির হাদিসকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, নামাজের রুকু-সিজদা বা আযানের ধ্বনি সম্পর্কিত হাদিসগুলো মুতাওয়াতির। বাংলাদেশে সাধারণ মুসলমানরা প্রতিদিনের ইবাদতে মুতাওয়াতির হাদিস অনুসরণ করে। এটি ইসলামি শরীয়তের জন্য শক্তিশালী দলিল। তাই যখন প্রশ্ন আসে—হাদিস কত প্রকার ও কি কি, তখন মুতাওয়াতির হাদিসকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় রাখা হয়।

৯. আহাদ হাদিস

আহাদ হাদিস হলো এমন হাদিস যা একক বা সীমিত সংখ্যক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে এসেছে। এটি মুতাওয়াতিরের মতো ব্যাপক নয়। তবে যদি সনদ ও মতন নির্ভরযোগ্য হয়, তাহলে আহাদ হাদিসও গ্রহণযোগ্য। ইসলামি আইনশাস্ত্রে আহাদ হাদিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক ইবাদত ও সামাজিক বিধান আহাদ হাদিস থেকে প্রমাণিত। বাংলাদেশে ইসলামি শিক্ষার্থীরা আহাদ হাদিস গভীরভাবে অধ্যয়ন করে। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি জানতে গেলে আহাদ হাদিসের গুরুত্ব উপেক্ষা করা যায় না।

১০. মাশহুর হাদিস

মাশহুর হাদিস হলো এমন হাদিস, যা প্রথমে সীমিত সংখ্যক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে এসেছে, পরে বহু বর্ণনাকারীর মাধ্যমে প্রচলিত হয়েছে। এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে যায়। মাশহুর হাদিস অনেক সময় সহিহ, হাসান বা দাঈফ হতে পারে, তবে প্রচলিত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ একে বেশি জানে। বাংলাদেশে ওয়াজ-মাহফিল, বইপত্র ও সাধারণ আলোচনায় মাশহুর হাদিস সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয়। তাই যখন আমরা বলি—হাদিস কত প্রকার ও কি কি, তখন মাশহুর হাদিসকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে হয়।

মতন অনুসারে হাদিস কত প্রকার কি কি?

Hadith5

হাদিসের মতন বা বক্তব্য অংশ ইসলামের মূল দিকনির্দেশনা বহন করে। সনদ যাচাইয়ের মতো মতনও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বক্তব্য যদি কুরআন বা ইসলামের মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হয় না। এখন প্রশ্ন হলো—মতন অনুসারে হাদিস কত প্রকার ও কি কি?। নিচে ১০টি প্রধান ধরন বিশদভাবে তুলে ধরা হলো।

১. কওলি হাদিস

কওলি হাদিস বলতে রাসূলুল্লাহ ﷺ- এর সরাসরি উচ্চারিত বাণীকে বোঝানো হয়। যেমন তিনি বলেছেন: “কর্মসমূহ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” এটি একটি সহিহ বুখারির হাদিস, যা ইসলামের মৌলিক নীতিকে স্পষ্ট করে। কওলি হাদিসের বৈশিষ্ট্য হলো—এটি সরাসরি রাসূলের বক্তব্য হিসেবে বর্ণিত হয়। শরীয়তে আইন, ইবাদত, নৈতিকতা—সবকিছুর ভিত্তি অনেকাংশে কওলি হাদিসের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে মসজিদ, মাদরাসা ও ওয়াজ-মাহফিলে সবচেয়ে বেশি কওলি হাদিস শোনা যায়। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি বোঝাতে গেলে কওলি হাদিসকে সবার আগে উল্লেখ করতে হয়।

২. ফেইলি হাদিস

ফেইলি হাদিস হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ যে কাজগুলো করেছেন, সাহাবারা সেগুলো দেখে বর্ণনা করেছেন। যেমন—রাসূলুল্লাহ ﷺ নামাজ কিভাবে পড়তেন, হজ কিভাবে করতেন—এসবই ফেইলি হাদিসের উদাহরণ। ফেইলি হাদিসের বৈশিষ্ট্য হলো—এতে রাসূলের আমল সরাসরি তুলে ধরা হয়, যা মুসলমানরা অনুসরণ করে। বাংলাদেশের মানুষ নামাজের নিয়ম, ওজু, রোজা, হজ—এসব ফেইলি হাদিস থেকে শিখে থাকে। এ কারণে ফেইলি হাদিস ছাড়া ইসলামি আমল পূর্ণাঙ্গভাবে জানা সম্ভব নয়। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি আলোচনায় ফেইলি হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম।

৩. তাকরিরি হাদিস

তাকরিরি হাদিস হলো এমন হাদিস যেখানে কোনো সাহাবি রাসূলুল্লাহ ﷺ- এর সামনে কিছু কাজ করেছেন, আর নবী ﷺ তা নীরবে অনুমোদন দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি নিষেধ করেননি, বরং সেই কাজকে মেনে নিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, সাহাবারা কিছু খাবার খেয়েছেন যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে খাননি, কিন্তু তিনি নিষেধও করেননি—এটি তাকরিরি হাদিস। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় কোন কাজ শরীয়তে জায়েজ। বাংলাদেশে অনেক রীতি-নীতি বা সামাজিক প্রথা ইসলামী শরীয়তের সাথে মিলিয়ে তাকরিরি হাদিসের আলোকে অনুমোদিত হয়। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি বুঝতে তাকরিরি হাদিস অপরিহার্য।

৪. সিফাতি হাদিস

সিফাতি হাদিস বলতে রাসূলুল্লাহ ﷺ- এর শারীরিক, নৈতিক ও ব্যক্তিত্বগত বৈশিষ্ট্যের বর্ণনাকে বোঝানো হয়। যেমন—তিনি মাঝারি উচ্চতার ছিলেন, তাঁর চুল ছিল কাঁধ পর্যন্ত, তিনি কখনো কারো সাথে রূঢ় ব্যবহার করতেন না—এসবই সিফাতি হাদিস। সিফাতি হাদিসের মাধ্যমে মুসলমানরা রাসূলের চেহারা, স্বভাব ও চরিত্র সম্পর্কে জানে এবং তা থেকে শিক্ষা নেয়। বাংলাদেশে ইসলামি সাহিত্য ও ওয়াজে সিফাতি হাদিস প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এটি মুসলমানদের ভালোবাসা, অনুকরণ ও আখলাক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি আলোচনায় সিফাতি হাদিসকে আলাদা জায়গা দিতে হয়।

আরোও পড়ুনঃ  মিনিবার ফুটবল খেলার নিয়মাবলী

৫. খবরি হাদিস

খবরি হাদিস হলো এমন হাদিস যেখানে অতীতের ঘটনা বা ভবিষ্যতের সংবাদ বর্ণিত হয়েছে। যেমন—আগের উম্মতদের কাহিনি, কিয়ামতের আলামত ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ ﷺ অনেক সময় সাহাবাদের কাছে ভবিষ্যতের কিছু ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যা পরে সত্য হয়েছে। খবরি হাদিসের মাধ্যমে মুসলমানরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেয়। বাংলাদেশে কিয়ামতের আলামত ও আগের উম্মতের কাহিনি শোনানো ওয়াজে খবরি হাদিস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি প্রশ্নের উত্তরে খবরি হাদিসের আলাদা গুরুত্ব আছে।

৬. হুকুমি হাদিস

হুকুমি হাদিস হলো এমন হাদিস, যেখানে শরীয়তের বিধান দেওয়া হয়েছে। যেমন—নামাজ ফরজ, যাকাত বাধ্যতামূলক, সুদ হারাম—এসব বিষয় হুকুমি হাদিসের অন্তর্ভুক্ত। হুকুমি হাদিস মুসলমানদের আমল ও ইবাদতের মূল ভিত্তি তৈরি করে। বাংলাদেশের ইসলামী আদালত, ফতোয়া প্রদান এবং মাদরাসার ফিকহ শিক্ষায় হুকুমি হাদিসের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটি ছাড়া শরীয়তের বিধান সম্পূর্ণভাবে জানা যায় না। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি আলোচনায় হুকুমি হাদিস অপরিহার্য অংশ।

৭. ওয়াজিবি হাদিস

ওয়াজিবি হাদিস হলো এমন হাদিস, যেখানে কোনো আমল করার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তা ফরজ নয়। যেমন—তারাবির নামাজ পড়া, ঈদের নামাজ পড়া ইত্যাদি ওয়াজিব আমল। ওয়াজিবি হাদিসের গুরুত্ব হলো—এসব আমল করলে সওয়াব পাওয়া যায় এবং না করলে গুনাহ হয়। বাংলাদেশে তারাবি, ঈদ নামাজ, কুরবানির মতো বিষয়গুলো ওয়াজিবি হাদিসের আলোকে বোঝানো হয়। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি ব্যাখ্যা করতে গেলে ওয়াজিবি হাদিসের উদাহরণ দিতে হয়।

৮. মুস্তাহাবি হাদিস

মুস্তাহাবি হাদিস হলো এমন হাদিস, যেখানে কোনো আমল করতে উৎসাহিত করা হয়েছে, কিন্তু তা না করলে গুনাহ নেই। যেমন—মিসওয়াক ব্যবহার করা, সালামের জবাব সুন্দরভাবে দেওয়া ইত্যাদি। মুস্তাহাবি হাদিসের উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের জীবনে অতিরিক্ত নৈতিক সৌন্দর্য আনা। বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ মুস্তাহাব আমল যেমন—অতিরিক্ত নামাজ, রোজা, দোয়া—এসব করতে আগ্রহী হয়। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি আলোচনায় মুস্তাহাবি হাদিসের বিশেষ স্থান রয়েছে।

৯. নৈতিক দিকনির্দেশনা মূলক হাদিস

নৈতিক হাদিসগুলো মানুষের চরিত্র, আচরণ ও আখলাক গঠনে দিকনির্দেশনা দেয়। যেমন—“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র উত্তম।” এ ধরনের হাদিস মুসলমানদের ভালো মানুষ হতে শেখায়। বাংলাদেশের সমাজে পারিবারিক জীবন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য—সবক্ষেত্রেই নৈতিক হাদিসের প্রভাব রয়েছে। ওয়াজ-মাহফিল, মাদরাসা শিক্ষা এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নৈতিক হাদিস প্রচুর উল্লেখ করা হয়। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি জানতে চাইলে নৈতিক হাদিস অপরিহার্য।

১০. সামাজিক ও রাজনৈতিক হাদিস

রাসূলুল্লাহ ﷺ শুধু ধর্মীয় নেতা ছিলেন না; তিনি একজন রাষ্ট্রপ্রধান, বিচারক ও সেনাপতি ছিলেন। তাই তাঁর অনেক হাদিস সামাজিক ও রাজনৈতিক নির্দেশনা বহন করে। যেমন—“প্রত্যেকে তার অধীনস্থদের জন্য দায়িত্বশীল।” এই ধরনের হাদিস পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ন্যায়বিচার ও দায়িত্ববোধ শেখায়। বাংলাদেশে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এই হাদিসের শিক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি ব্যাখ্যা করতে গেলে সামাজিক ও রাজনৈতিক হাদিসকে অবশ্যই গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করতে হয়।

সনদ অনুসারে হাদিস কত প্রকার ও কি কি?

Hadith6

ইসলামী শিক্ষায় সনদ বা রাবির শৃঙ্খল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোনো হাদিস গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা মূলত নির্ভর করে সনদের শক্তি, নির্ভরযোগ্যতা ও ধারাবাহিকতার উপর। হাদিসবিদরা সনদের ভিত্তিতে হাদিসকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করেছেন। অনেক শিক্ষার্থী ও পাঠকের মনে প্রশ্ন আসে, হাদিস কত প্রকার ও কি কি? বিশেষত সনদভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস বুঝতে পারা অত্যন্ত জরুরি। নিচে সনদ অনুসারে ১০ প্রকার হাদিস বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো।

১. মুতাওয়াতির হাদিস

মুতাওয়াতির হাদিস হলো এমন হাদিস যা বহু সংখ্যক রাবি দ্বারা বর্ণিত এবং প্রত্যেক স্তরে এত বেশি রাবি থাকে যে তাদের মধ্যে মিথ্যার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

  • এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সনদভিত্তিক হাদিস।
  • ইসলামী আইন, আকীদা ও আমল নির্ধারণে এটি অটল দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
  • বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে মুতাওয়াতির হাদিসকে দ্বীনের অন্যতম প্রধান উৎস ধরা হয়।
  • উদাহরণ: নামাজের গুরুত্ব ও ফরজ হওয়ার বর্ণনা মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
  • এ শ্রেণির হাদিস নিয়ে কারো মধ্যে দ্বিধা বা বিতর্ক থাকে না।
  • তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি প্রশ্ন করলে মুতাওয়াতির হাদিস সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয়।

২. আহাদ হাদিস

আহাদ হাদিস হলো এমন হাদিস যা প্রতিটি স্তরে সীমিত সংখ্যক রাবি দ্বারা বর্ণিত হয়।

  • মুতাওয়াতিরের বিপরীতে এটি সংখ্যায় কম।
  • তবে সহিহ সনদযুক্ত আহাদ হাদিস ইসলামে দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
  • যেমন ওযুর নিয়মাবলি, দোয়ার বিশেষ আকার অনেক সময় আহাদ হাদিস দ্বারা বর্ণিত।
  • বাংলাদেশি মাদরাসা শিক্ষায় আহাদ হাদিস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শর্তাবলীর ওপর জোর দেওয়া হয়।
  • এই হাদিস দ্বারা ফিকহি মাসায়েল নির্ধারিত হয়।
  • ফলে হাদিস কত প্রকার ও কি কি আলোচনায় আহাদ হাদিস গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

৩. মাশহুর হাদিস

মাশহুর হাদিস হলো এমন হাদিস যা প্রথমে সীমিত কয়েকজন বর্ণনা করলেও পরবর্তী কালে বহুজন বর্ণনা করেছে।

  • একে মাঝে মাঝে আহাদ ও মুতাওয়াতিরের মাঝামাঝি ধরা হয়।
  • উদাহরণ: “মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।”
  • এই হাদিস প্রথমে কম সংখ্যক রাবি দ্বারা বর্ণিত হলেও পরে মাশহুর হয়ে যায়।
  • বাংলাদেশের আলেমরা খুতবা ও ওয়াজে এই হাদিস বহুলভাবে ব্যবহার করেন।
  • তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি আলোচনা করলে মাশহুর হাদিসকে আলাদা করে উল্লেখ করা আবশ্যক।

৪. আজিজ হাদিস

আজিজ হাদিস হলো এমন হাদিস যা প্রতিটি স্তরে কমপক্ষে দুইজন রাবি বর্ণনা করে।

  • এটি দুর্বল নয়, তবে মুতাওয়াতিরের মতো শক্তিশালীও নয়।
  • আজিজ হাদিস ইসলামী আইন প্রমাণে গ্রহণযোগ্য ধরা হয়।
  • যেমন কোনো ইবাদতের আচারবিধি আজিজ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হতে পারে।
  • হাদিসবিদরা এর সনদ খুব সতর্কভাবে যাচাই করেন।
  • তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি প্রশ্নের উত্তরে আজিজ হাদিস একটি অনন্য বিভাগ হিসেবে আলোচিত হয়।
আরোও পড়ুনঃ  মিনিবার ফুটবল খেলার নিয়মাবলী

৫. গরীব হাদিস

গরীব হাদিস হলো এমন হাদিস যা কোনো স্তরে মাত্র একজন রাবি বর্ণনা করে।

  • এটিকে “ফারদ” হাদিসও বলা হয়।
  • সনদ নির্ভরযোগ্য হলে গরীব হাদিস গ্রহণযোগ্য, তবে সন্দেহ থাকলে তা ত্যাগ করা হয়।
  • উদাহরণ: কোনো বিশেষ ঘটনার একক সাক্ষী যদি নির্ভরযোগ্য হন, তবে তার হাদিস গ্রহণ করা হয়।
  • বাংলাদেশের অনেক ইসলামী গ্রন্থে গরীব হাদিসের বিশ্লেষণ পাওয়া যায়।
  • এজন্য হাদিস কত প্রকার ও কি কি জানার ক্ষেত্রে গরীব হাদিসের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬. মুনকার হাদিস

মুনকার হাদিস হলো এমন হাদিস যেখানে দুর্বল রাবি শক্তিশালী রাবির বিপরীতে বর্ণনা করে।

  • সাধারণত এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
  • তবে কোনো বিষয় নিশ্চিত প্রমাণিত হলে অন্য দলিলে সহায়ক হতে পারে।
  • অনেক সময় অজ্ঞ লোকেরা মুনকার হাদিস প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
  • তাই ইসলামী গবেষকরা সতর্ক থাকতে বলেন।
  • বাংলাদেশে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে মুনকার হাদিস প্রচারিত হলে আলেমরা তা খণ্ডন করেন।
  • সুতরাং হাদিস কত প্রকার ও কি কি বোঝার জন্য মুনকার হাদিসের সঠিক ধারণা রাখা জরুরি।

৭. মুদরাজ হাদিস

মুদরাজ হাদিস হলো এমন হাদিস যেখানে রাবির কোনো কথা মূল হাদিসের সাথে মিশে গেছে।

  • এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, কারণ কোন অংশ রাসূল ﷺ এর এবং কোন অংশ রাবির তা আলাদা করা কঠিন হয়।
  • হাদিসবিদরা এজন্য আলাদা করে যাচাই করেন।
  • ইসলামী শিক্ষা বোঝার ক্ষেত্রে এটি বড় চ্যালেঞ্জ।
  • বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুদরাজ হাদিস বিশ্লেষণ করা হয়।
  • তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি আলোচনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

৮. মুদতরিব হাদিস

মুদতরিব হাদিস হলো এমন হাদিস যেখানে বিভিন্ন রাবি ভিন্ন ভিন্ন আকারে বর্ণনা করে, এবং তা সমন্বয় করা সম্ভব হয় না।

  • এটি দুর্বল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।
  • হাদিসবিদরা বলেন, দ্বীনের ক্ষেত্রে এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
  • তবে ইতিহাস বা ঘটনা বর্ণনায় কোনো কোনো সময় উল্লেখ করা হয়।
  • বাংলাদেশের সাধারণ পাঠকরা এটি কম জানেন, তাই আলেমরা বিশেষভাবে বুঝিয়ে থাকেন।
  • এজন্য হাদিস কত প্রকার ও কি কি জানার ক্ষেত্রে মুদতরিব হাদিস একটি প্রয়োজনীয় আলোচনা।

৯. মাউকুফ হাদিস

মাউকুফ হাদিস হলো সাহাবিদের বক্তব্য বা কাজকে বলা হয়, যা রাসূল ﷺ এর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।

  • তবে ইসলামী ফিকহে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
  • কারণ সাহাবারা রাসূল ﷺ এর সরাসরি সহচর ছিলেন।
  • বাংলাদেশে ইসলামী আইন প্রণয়নে মাউকুফ হাদিস আলোচিত হয়।
  • ইসলামী গবেষণায় এটি হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর।
  • তাই হাদিস কত প্রকার ও কি কি প্রশ্ন করলে মাউকুফ হাদিসের নাম অবশ্যই উঠে আসে।

১০. মাকতূ হাদিস

  • মাকতূ হাদিস হলো তাবেঈদের বক্তব্য বা কাজকে বলা হয়।
  • এটি রাসূল ﷺ বা সাহাবিদের নয়, তবে ইসলামী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ।
  • ফিকহি মাসায়েল বোঝাতে মাকতূ হাদিস ব্যবহার করা হয়।
  • বাংলাদেশের ইসলামী গবেষকরা মাকতূ হাদিসকে সহায়ক দলিল হিসেবে গ্রহণ করেন।
  • ইসলামের জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ করতে মাকতূ হাদিসের অবদান বিশেষ।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

হাদিস কত প্রকার ও কি কি  এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

১. হাদিস কত প্রকার ও কি কি?

হাদিসকে বিভিন্ন দিক থেকে ভাগ করা হয়। সনদ ও মতন অনুযায়ী হাদিসের প্রকারভেদ ২০টিরও বেশি। এর মধ্যে সহিহ, হাসান, দাঈফ, মাওজু, মুতাওয়াতির, আহাদ, আজিজ, গরীব, মাশহুর, মুনকার প্রভৃতি প্রধান। সহজভাবে বলতে গেলে, হাদিস কত প্রকার ও কি কি—এই প্রশ্নের উত্তর হলো, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আলাদা আলাদা শ্রেণিবিন্যাস রয়েছে।

২. সহিহ হাদিস কাকে বলে?

সহিহ হাদিস হলো এমন হাদিস, যার সনদ নির্ভরযোগ্য, রাবিরা সৎ ও বিশ্বস্ত, এবং মতন কুরআন বা অন্য সহিহ হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ইসলামী আইন, ইবাদত ও আকীদা প্রমাণে সহিহ হাদিস সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। এজন্য আলেমরা সবসময় মুসলমানদের সহিহ হাদিস মেনে চলার পরামর্শ দেন।

উপসংহার

ইসলামের মূল ভিত্তি দুটি – আল কুরআন ও হাদিস। কুরআন আমাদের জন্য আল্লাহর বাণী আর হাদিস হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর বাণী, কাজ এবং অনুমোদন। তাই একজন মুসলমানের জন্য হাদিস সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে হাদিসের ধরন, শ্রেণিবিন্যাস এবং গ্রহণযোগ্যতার নিয়মগুলো ভালোভাবে না জানলে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এ কারণেই দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে আমরা বোঝার চেষ্টা করলাম, হাদিস কত প্রকার ও কি কি

হাদিসের মূল ভিত্তি দুটি দিক—একটি হলো সনদ (রাবির শৃঙ্খল) এবং অন্যটি হলো মতন (মূল বক্তব্য বা টেক্সট)। এই দুটি দিক থেকেই হাদিসকে নানা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন সহিহ, হাসান, দাঈফ, মাওজু, মুতাওয়াতির, আহাদ, আজিজ, গরীব, মাশহুর, মুনকার, মুদরাজ, মুদতরিব, মাউকুফ, মাকতূ ইত্যাদি। প্রতিটি প্রকারভেদের আলাদা আলাদা গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কারো কাছে প্রশ্ন আসতেই পারে, আসলে হাদিস কত প্রকার ও কি কি—এর উত্তরে বলা যায়, বিভিন্ন দিক থেকে বিবেচনা করলে হাদিসের প্রকারভেদ ২০টিরও বেশি হতে পারে।

বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে হাদিস শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে আলেমরা, মাদরাসার শিক্ষকরা এবং ইসলামী গবেষকরা নিয়মিতভাবে ছাত্রছাত্রীদের শেখান কোন হাদিস সহিহ, কোনটি দুর্বল, কোনটি মুনকার এবং কোনটি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সঠিক জ্ঞান ছাড়া মানুষ সহজেই দুর্বল কিংবা মনগড়া হাদিসকে সত্য মনে করতে পারে। এজন্য হাদিস শিক্ষায় গভীরতা থাকা অপরিহার্য।

এখানে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—শুধু হাদিস পড়লেই হবে না, বরং হাদিসের সনদ যাচাই করতে হবে, রাবিদের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে হবে এবং মতনের সাথে কুরআন ও সহিহ হাদিসের সামঞ্জস্যতা মিলাতে হবে। এভাবেই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা জানা সম্ভব।আজকের এই দীর্ঘ আলোচনায় আমরা শিখলাম, হাদিস কত প্রকার ও কি কি—এ প্রশ্নের উত্তর কেবল সংখ্যা দিয়ে শেষ হয় না, বরং প্রতিটি প্রকারভেদের পেছনে গভীর ইসলামী জ্ঞান, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং বাস্তবিক প্রয়োগ রয়েছে। একজন মুসলমান যদি এসব জানে এবং জীবনে তা প্রয়োগ করে, তবে সে সঠিক পথে চলতে পারবে।

অতএব, উপসংহার হিসেবে বলা যায়—হাদিস হলো ইসলামের আলোকবর্তিকা। কুরআনের ব্যাখ্যা ও ইসলামী জীবনব্যবস্থার পূর্ণতা হাদিস ছাড়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের উচিত সহিহ হাদিসের অনুসরণ করা, দুর্বল বা ভুয়া হাদিস থেকে বিরত থাকা এবং সর্বদা বিশ্বস্ত আলেমদের কাছে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করা। এভাবেই আমরা সঠিকভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর নির্দেশনা মেনে চলতে পারব, ইনশাআল্লাহ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *