Human body1

মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের নাম ও কাজ সমূহ

মানব দেহ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল ও নিখুঁত সৃষ্টিগুলোর একটি। এটি অসংখ্য অঙ্গ, হাড়, পেশী, স্নায়ু এবং কোষের সমন্বয়ে গঠিত একটি জীবন্ত যন্ত্রের মতো। প্রতিটি অঙ্গের রয়েছে নির্দিষ্ট কাজ, যা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে দেহকে সচল রাখে। মানুষ শ্বাস নেয়, চিন্তা করে, খায়, ঘুমায়, হাঁটে—এই প্রতিটি কাজই দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল।

মানব দেহের ভেতরে হাজারো প্রক্রিয়া একসাথে চলতে থাকে। যেমন—হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন করে, ফুসফুস অক্সিজেন নেয়, মস্তিষ্ক চিন্তা ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে, আবার পাকস্থলী খাবার হজমে সাহায্য করে। দেহের প্রতিটি অংশের আছে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল সম্পর্ক।

একটি ছোট উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। যেমন, আপনি যখন খাবার খান, তখন মুখ দিয়ে চিবানোর কাজ হয়, পরে তা পাকস্থলীতে যায়, সেখান থেকে অন্ত্রে গিয়ে পুষ্টি শোষণ হয়, এবং সেই পুষ্টি রক্তের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি অংশে পৌঁছে। অর্থাৎ, সব অঙ্গ একসাথে কাজ না করলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

বাংলাদেশের আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের ধরনও মানব দেহের সুস্থতায় প্রভাব ফেলে। সঠিক খাদ্যগ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম, বিশুদ্ধ পানি পান ও নিয়মিত ব্যায়াম করলে দেহের অঙ্গগুলো সক্রিয় ও কর্মক্ষম থাকে।

মানব দেহের অঙ্গ কয়টি?

Human body2

মানব দেহে অসংখ্য অঙ্গ রয়েছে, যেগুলোকে প্রধান ও উপাঙ্গ—দুই ভাগে ভাগ করা যায়। সাধারণভাবে, মানব দেহে প্রায় ৭৮টি প্রধান অঙ্গ রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিটি অঙ্গ আবার ছোট ছোট অংশে বিভক্ত, তাই এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

এই অঙ্গগুলোর মধ্যে কিছু বাইরের দিকে দৃশ্যমান, যেমন—চোখ, কান, নাক, মুখ, ত্বক, হাত ও পা। আর কিছু থাকে শরীরের ভেতরে, যেমন—হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি।

প্রতিটি অঙ্গের কাজ আলাদা। যেমন, মস্তিষ্ক চিন্তা ও নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদপিণ্ড রক্ত পাম্প করে, ফুসফুস শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ করে, কিডনি রক্ত পরিশোধন করে।

মানব দেহের অঙ্গগুলোকে সাধারণত নিচের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়—

১. মাথা ও মুখমণ্ডলীয় অঙ্গ
২. বুকের অঙ্গ
৩. পেটের অঙ্গ
৪. প্রজনন অঙ্গ
৫. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (হাত-পা)

প্রতিটি অংশ আবার ভেতরে আরও বিভিন্ন অঙ্গে বিভক্ত। যেমন, পেটের ভেতরে লিভার, কিডনি, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র ইত্যাদি থাকে।

মানব দেহের অঙ্গের সঠিক সংখ্যা নির্ভর করে আমরা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে গণনা করছি তার ওপর। কিছু গবেষক কোষ বা টিস্যুকেও অঙ্গের অংশ হিসেবে গণনা করেন। ফলে বলা যায়, মানব দেহের অঙ্গসংখ্যা একটি বিশাল সমন্বিত কাঠামো, যা পুরো জীবনব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখে।

মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের নাম ও কাজ সমূহ

Human body3

মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গের নির্দিষ্ট কাজ রয়েছে। কেউ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে, কেউ খাবার হজমে সাহায্য করে, আবার কেউ শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। নিচে আমরা ১০টি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ও তাদের কাজ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

১. মস্তিষ্ক (Brain)

মস্তিষ্ক হলো মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল অঙ্গ। এটি মাথার খুলির ভেতরে সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে এবং পুরো শরীরের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। মানুষ যা কিছু চিন্তা করে, দেখে, শোনে, অনুভব করে, মনে রাখে—সবই মস্তিষ্কের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটি এমন এক অঙ্গ যা মানুষের ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নির্ধারণ করে।

মানব মস্তিষ্কের ওজন গড়ে প্রায় ১.৩ থেকে ১.৪ কেজি। এতে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন স্নায়ু কোষ (নিউরন) থাকে, যেগুলো একে অপরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে তথ্য আদান-প্রদান করে। প্রতিটি নিউরন ছোট ছোট বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশে নির্দেশ পাঠায়।

মস্তিষ্ক মূলত তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত —

১ . সেরিব্রাম (Cerebrum): এটি মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ, যা চিন্তা, স্মৃতি, ভাষা, শেখা, বিচার-বিশ্লেষণ ও ইচ্ছাশক্তির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
২. সেরিবেলাম (Cerebellum): এটি দেহের ভারসাম্য ও নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, হাত-পা নড়ানো ইত্যাদি সুনির্দিষ্টভাবে করতে সাহায্য করে।
৩. ব্রেন স্টেম (Brain Stem): এটি শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ও ঘুমের মতো স্বয়ংক্রিয় কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।

মস্তিষ্ক দেহের প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে সংযুক্ত। যেমন—আপনি যখন হাত দিয়ে কিছু ধরেন, তখন সেই স্পর্শের অনুভূতি প্রথমে স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে যায়, তারপর মস্তিষ্ক নির্দেশ দেয় কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি এত দ্রুত ঘটে যে আমরা তা টেরই পাই না।

বাংলাদেশের পরিবেশে অনেক মানুষ মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, মোবাইল ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার, এবং পুষ্টিহীন খাবারের কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হারাচ্ছেন। এসব কারণে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়, মনোযোগ কমে যায়, এমনকি ডিপ্রেশন বা উদ্বেগ দেখা দেয়।

২. হৃদপিণ্ড (Heart)

হৃদপিণ্ড বা হার্ট মানব দেহের জীবনকেন্দ্র। এটি এমন একটি অঙ্গ যা এক মুহূর্তও থেমে থাকে না। মানুষের জন্মের মুহূর্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হৃদপিণ্ড অবিরাম স্পন্দিত হয়ে রক্ত সঞ্চালন করে চলে। এটি এক ধরনের পেশল অঙ্গ, যা প্রতিদিন প্রায় এক লক্ষ বার স্পন্দিত হয়ে শরীরের প্রতিটি অংশে রক্ত পাঠায়।

হৃদপিণ্ডের মূল কাজ হলো রক্ত পাম্প করা। এই রক্তের মাধ্যমেই শরীরের কোষগুলো অক্সিজেন ও পুষ্টি পায় এবং বর্জ্য পদার্থ দূর হয়। হৃদপিণ্ড ছাড়া দেহের কোনো অঙ্গই কাজ করতে পারে না, কারণ অক্সিজেন ছাড়া কোষ বাঁচতে পারে না।

হৃদপিণ্ড বুকের মাঝামাঝি, সামান্য বাম দিকে অবস্থান করে। এটি চারটি প্রকোষ্ঠে (Chamber) বিভক্ত —

১. ডান আলিন্দ (Right Atrium)
২. বাম আলিন্দ (Left Atrium)
৩. ডান নিলয় (Right Ventricle)
৪. বাম নিলয় (Left Ventricle)

এই চারটি অংশ একসাথে কাজ করে রক্ত গ্রহণ ও পাম্প করার দায়িত্ব পালন করে। শরীর থেকে আসা দূষিত রক্ত ডান দিক দিয়ে ফুসফুসে যায়, যেখানে তা অক্সিজেনযুক্ত হয়। এরপর অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত বাম দিক দিয়ে আবার শরীরের সব অঙ্গে পৌঁছে যায়।

আরোও পড়ুনঃ  অল্প বয়সে ছেলেদের চুল পড়ার কারণ সমূহ

হৃদপিণ্ডের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে একটি সূক্ষ্ম বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা। এটি হৃদপিণ্ডকে সংকোচন ও প্রসারণ করতে সাহায্য করে, যাকে আমরা স্পন্দন বা হার্টবিট হিসেবে অনুভব করি। একজন সুস্থ মানুষের হৃদস্পন্দন সাধারণত প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার হয়।

বাংলাদেশে হৃদরোগ এখন অন্যতম বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, ধূমপান, মানসিক চাপ, ব্যায়ামের অভাব এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন হৃদরোগের প্রধান কারণ। অনেক সময় আমরা ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা বা মাথা ঘোরা উপেক্ষা করি, যা আসলে হৃদপিণ্ডের অসুস্থতার সংকেত হতে পারে।

৩. ফুসফুস (Lungs)

ফুসফুস মানব দেহের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রধান অঙ্গ। এটি বুকের ভেতরে, পাঁজরের নিচে অবস্থান করে এবং দেহের ডান ও বাম পাশে দুটি বড় থলের মতো অঙ্গ হিসেবে থাকে। ফুসফুস ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা অসম্ভব, কারণ এটি শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করে দেয়।

প্রতিদিন একজন মানুষ গড়ে ২০,০০০ বার শ্বাস নেয়। প্রতিবার শ্বাস নেওয়ার সময় বাতাসের অক্সিজেন নাক বা মুখ দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এরপর সেই অক্সিজেন রক্তের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায়। আবার শরীরের কোষ থেকে তৈরি হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফুসফুসে এসে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বের হয়ে যায়।

ফুসফুসের ভেতরে ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওলস ও আলভিওলাই নামে সূক্ষ্ম নালী ও থলির মতো কাঠামো রয়েছে। আলভিওলাই হলো ক্ষুদ্র বায়ুথলি, যেখানে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের আদান-প্রদান হয়। এই সূক্ষ্ম প্রক্রিয়াটিই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।

ফুসফুস শুধু শ্বাস-প্রশ্বাসই নিয়ন্ত্রণ করে না, এটি দেহের pH ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তে বিষাক্ত গ্যাস ফিল্টার করা এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে বায়ু দূষণ, ধোঁয়া, ধুলাবালি এবং তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার ব্যাপক, সেখানে ফুসফুসের রোগের হার ক্রমশ বাড়ছে। অনেকেই হাঁপানি (Asthma), সিওপিডি (COPD), ব্রঙ্কাইটিস বা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ফুসফুসের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ধূমপান। একটিমাত্র সিগারেটও ফুসফুসের কোষে ক্ষতি করে। ধোঁয়া ফুসফুসের অভ্যন্তরে জমে গিয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট করে তোলে। ধূমপান ছাড়াও, বাসার ধুলো, রান্নার ধোঁয়া এবং যানবাহনের কালো ধোঁয়া ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর।

৪. পাকস্থলী (Stomach)

পাকস্থলী বা পেট মানব দেহের হজম প্রক্রিয়ার অন্যতম প্রধান অঙ্গ। এটি একটি পেশল থলির মতো গঠন, যা বাম দিকের পেটের উপরের অংশে অবস্থান করে। পাকস্থলীর মূল কাজ হলো আমরা যে খাবার খাই, সেটিকে ভেঙে শরীরের জন্য উপযোগী করে তোলা। সহজভাবে বলা যায়—পাকস্থলী হলো দেহের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র

যখন আমরা খাবার খাই, তখন তা প্রথমে মুখে চিবিয়ে গিলে খাওয়ার পর খাদ্যনালী (Esophagus) দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছায়। পাকস্থলীতে পৌঁছানোর পর খাবার মিশে যায় গ্যাস্ট্রিক রস (Gastric Juice) এর সঙ্গে। এই রসে থাকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এবং পেপসিন এনজাইম, যা প্রোটিনসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদান ভাঙতে সাহায্য করে।

পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ দেয়াল পুরু মিউকাস স্তর দিয়ে আবৃত থাকে, যা অ্যাসিডের ক্ষতি থেকে পাকস্থলীকে রক্ষা করে। খাবার এখানে কয়েক ঘণ্টা ধরে থেকে ধীরে ধীরে তরল আকারে পরিণত হয়, যাকে বলা হয় চাইম (Chyme)। পরে এই চাইম ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে, যেখানে বাকি হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

পাকস্থলীর কাজ শুধু খাবার হজমেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেহের শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। কারণ খাবারের পুষ্টি উপাদান হজম না হলে শরীর শক্তি পায় না। তাই পাকস্থলীর সঠিকভাবে কাজ করা মানে দেহের পুরো শক্তি ব্যবস্থা ঠিকভাবে চলা।

বাংলাদেশে অনেক মানুষ পাকস্থলীর সমস্যায় ভোগেন। গ্যাস্ট্রিক, অম্লতা, আলসার, হজমে সমস্যা, বমি ভাব, পেট ফাঁপা — এগুলো সাধারণ সমস্যা, যা মূলত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে হয়।

৫. লিভার (Liver)

লিভার বা যকৃৎ মানব দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি আমাদের শরীরের “রাসায়নিক কারখানা” হিসেবে কাজ করে। লিভার শরীরের ডান পাশে, পেটের ঠিক উপরের দিকে, ডায়াফ্রামের নিচে অবস্থান করে। এর ওজন প্রায় দেড় কেজির মতো, যা দেহের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ অঙ্গ।

লিভারের প্রধান কাজ হলো শরীরে ঘটে যাওয়া হাজারো রাসায়নিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা। এটি শুধু খাবার হজমেই সাহায্য করে না, বরং শক্তি উৎপাদন, টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) দূরীকরণ, ভিটামিন ও খনিজ সংরক্ষণসহ রক্ত পরিশোধনের কাজও করে। সহজভাবে বলা যায়—লিভার ছাড়া জীবন সম্ভব নয়।

লিভারের প্রধান কাজসমূহ:

১. পিত্ত রস (Bile) উৎপাদন:
লিভার প্রতিদিন পিত্ত রস তৈরি করে, যা ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে চর্বি হজমে সহায়তা করে। এই পিত্ত রস না থাকলে খাবারে থাকা চর্বি শরীর গ্রহণ করতে পারত না।

২. বিষাক্ত পদার্থ পরিশোধন:
আমরা যে খাবার, ওষুধ বা পানীয় গ্রহণ করি, তাতে অনেক সময় ক্ষতিকর উপাদান থাকে। লিভার এইসব টক্সিন ছেঁকে ফেলে, যাতে রক্ত বিশুদ্ধ থাকে এবং শরীর সুস্থ থাকে।

৩. শক্তি সঞ্চয় ও নিয়ন্ত্রণ:
লিভার গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেন আকারে সঞ্চয় করে রাখে। যখন শরীরে শক্তির প্রয়োজন হয়, তখন এটি সেই গ্লাইকোজেনকে আবার গ্লুকোজে রূপান্তরিত করে শক্তি জোগায়।

৪. ভিটামিন ও খনিজ সংরক্ষণ:
লিভার শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন A, D, E, K এবং B12 সহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ জমা রাখে। এসব ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ও কোষ মেরামতের জন্য অপরিহার্য।

৫. রক্ত তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ:
শিশু অবস্থায় লিভার রক্ত তৈরির কাজ করে। এছাড়া এটি রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে, যাতে কোনো আঘাতে রক্তক্ষরণ না হয়।

৬. হৃদপিণ্ড (Heart)

হৃদপিণ্ড বা হার্ট মানব দেহের প্রাণকেন্দ্র। এটি এমন একটি অঙ্গ যা দিনরাত একটানা কাজ করে আমাদের জীবনকে সচল রাখে। এক মুহূর্তের জন্যও হৃদপিণ্ড থেমে গেলে জীবন থেমে যায়। এটি বুকের মাঝখানে, কিছুটা বাঁ পাশে অবস্থান করে এবং আকারে মুষ্টিবদ্ধ হাতের সমান। হৃদপিণ্ডের কাজ হলো রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেওয়া এবং অপদ্রব্যগুলোকে অপসারণ করা।

আরোও পড়ুনঃ  আলসারেটিভ কোলাইটিস এর লক্ষণ সমূহ

হৃদপিণ্ডকে অনেক সময় “জীবনের পাম্প” বলা হয়। এটি প্রতি মিনিটে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ বার ধ্বনিত হয় এবং প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ বার ধুকপুক করে। প্রতিবার স্পন্দনে এটি শরীরে প্রায় ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত প্রবাহিত করে। এই রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াই আমাদের দেহে প্রাণের সঞ্চার ঘটায়।

হৃদপিণ্ডের গঠন:

হৃদপিণ্ডে চারটি প্রধান প্রকোষ্ঠ থাকে — দুটি উপরের (Atria) এবং দুটি নিচের (Ventricles)।

  • ডান দিকের প্রকোষ্ঠগুলো অক্সিজেনবিহীন রক্ত গ্রহণ করে এবং ফুসফুসে পাঠায়।
  • বাম দিকের প্রকোষ্ঠগুলো ফুসফুস থেকে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত গ্রহণ করে এবং তা পুরো দেহে সরবরাহ করে।

হৃদপিণ্ডে রক্তনালী, ভাল্ভ এবং পেশি একসঙ্গে কাজ করে যাতে রক্ত সঠিক দিকেই প্রবাহিত হয় এবং কোনো স্থানে বাধা না সৃষ্টি হয়।

হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজসমূহ:

১. রক্ত সঞ্চালন:
হৃদপিণ্ড রক্তকে ধমনীর মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি অংশে পাঠায় এবং শিরার মাধ্যমে তা পুনরায় গ্রহণ করে।

২. অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ:
রক্তের মাধ্যমে হৃদপিণ্ড শরীরের কোষগুলোতে অক্সিজেন, গ্লুকোজ এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাঠায়।

৩. বর্জ্য পদার্থ অপসারণ:
হৃদপিণ্ড শরীরের কোষ থেকে উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য অপদ্রব্য ফুসফুস ও কিডনির দিকে পাঠিয়ে দেয়।

৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
হৃদপিণ্ডের স্পন্দন রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তচাপ বেড়ে বা কমে যেতে পারে।

৭. কিডনি (Kidney)

কিডনি বা বৃক্ক হলো মানব দেহের প্রধান পরিষ্করণ অঙ্গ। আমাদের দেহে দুটি কিডনি থাকে—ডান ও বাম পাশে, পিঠের নিচের অংশে। এগুলোর আকার প্রায় একটি মুঠোর সমান। কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ, অতিরিক্ত পানি এবং অপ্রয়োজনীয় লবণ দূর করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে। সহজভাবে বলা যায়—কিডনি হলো দেহের ফিল্টার সিস্টেম

প্রতিদিন কিডনি গড়ে প্রায় ১,৪০০ লিটার রক্ত পরিশোধ করে এবং প্রায় ১–২ লিটার প্রস্রাব উৎপন্ন করে। কিডনি শুধু বর্জ্য অপসারণের কাজই করে না, বরং শরীরের রক্তচাপ, লবণ ও পুষ্টির ভারসাম্য, হরমোন উৎপাদন ও হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

কিডনির প্রধান কাজসমূহ:

১. বর্জ্য পদার্থ দূরীকরণ:
কিডনি রক্ত থেকে ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন এবং অন্যান্য টক্সিন ফিল্টার করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে।

২. পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখা:
কিডনি অতিরিক্ত পানি বা লবণ সরিয়ে শরীরের তরল সমতল বজায় রাখে।

৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
কিডনি রেনিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে, যা রক্তনালীর সংকোচন ও রক্তচাপের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৪. ইরিথ্রোপয়েটিন (Erythropoietin) হরমোন উৎপাদন:
এই হরমোন লোহিত কণিকা (Red Blood Cells) উৎপাদনে সাহায্য করে, যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে।

৫. অ্যাসিড-বেস ভারসাম্য রক্ষা:
কিডনি রক্তের pH নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যাতে শরীরের কোষ ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশে কিডনি সম্পর্কিত সমস্যার অবস্থা:

বাংলাদেশে কিডনি রোগ দ্রুত বেড়েছে। বিশেষ করে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD), কিডনি স্টোন এবং একিউট কিডনি ইনফেকশন সাধারণ। এসব রোগের মূল কারণ হলো—

১. দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকা।
২. অপ্রচুর পানি পান বা ডিহাইড্রেশন।
৩. অতিরিক্ত লবণ ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া।
৪. কিছু ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার, যেমন ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক।
৫. দূষিত পানি বা সংক্রমণ।

কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় উপসর্গহীন থাকতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো — শরীরের ফোলা, বারবার প্রস্রাবের সমস্যা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং অপ্রচলিত ওজন হ্রাস।

৮. অন্ত্র (Intestine)

মানব দেহে অন্ত্র হলো হজম প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পাকস্থলী থেকে খাবার গ্রহণ করে এবং পুষ্টি শোষণ ও বর্জ্য অপসারণের কাজ করে। অন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত—ছোট অন্ত্র (Small Intestine) এবং বড় অন্ত্র (Large Intestine)। পুরো অন্ত্র প্রায় ৭ মিটার দীর্ঘ এবং শরীরের পেছনের দিক দিয়ে পেটের ভেতরে পাঁজরের নিচে অবস্থান করে।

ছোট অন্ত্রের ভূমিকা:

ছোট অন্ত্র হলো মূলত পুষ্টি শোষণ কেন্দ্র। পাকস্থলী থেকে আসা চূর্ণ ও অর্ধ-হজমকৃত খাবার এখানে প্রবেশ করে। ছোট অন্ত্রে থাকা ভিলাই (Villi) নামক সূক্ষ্ম থলির মাধ্যমে খাবারের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রক্তে শোষিত হয়। এটি আমাদের শক্তি, কোষ পুনর্গঠন ও দেহের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

ছোট অন্ত্রের তিনটি অংশ আছে—
১. ডুয়োডেনাম (Duodenum): পাকস্থলী থেকে আসা খাবার প্রথমে এখানে যায়। পিত্ত ও লিভারের রস মিলিয়ে খাবার হজম হয়।
২. জেজুনাম (Jejunum): এখানে প্রধানত পুষ্টি শোষণ হয়।
৩. ইলিয়াম (Ileum): শেষ অংশ, যেখানে ভিটামিন B12 এবং লবণীয় পদার্থ শোষিত হয়।

বড় অন্ত্রের ভূমিকা:

বড় অন্ত্র মূলত বর্জ্য অপসারণ ও পানি শোষণ-এর জন্য দায়ী। ছোট অন্ত্র থেকে আসা অপ্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু এখানে প্রবেশ করে। বড় অন্ত্র পানি ও লবণ শোষণ করে, এবং বাকি পদার্থ মল আকারে প্রস্তুত করে মলাশয় (Rectum) ও গুদার মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়।

বড় অন্ত্রে থাকা ফ্লোরা বা ব্যাকটেরিয়া হজম প্রক্রিয়া সহজ করে, ভিটামিন K উৎপাদন করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বাংলাদেশে অন্ত্রজনিত সমস্যার চিত্র:

বাংলাদেশে অন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে দস্ত, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) সাধারণ।
এর মূল কারণ হলো—

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, যেমন ফাস্টফুড, তেল-চর্বিযুক্ত খাবার।
  • অপরিষ্কার পানি ও খাদ্য।
  • পর্যাপ্ত তাজা ফল, সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার না খাওয়া।
  • মানসিক চাপ ও অযত্ন।
আরোও পড়ুনঃ  গলা ব্যথা হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত?

৯. ত্বক (Skin)

ত্বক মানব দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। এটি শুধু দেহকে আচ্ছাদন করে রাখে না, বরং আমাদের শরীরকে রক্ষা, সংবেদন এবং শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ত্বকের ওজন প্রায় ৪–৫ কেজি এবং এর ক্ষেত্রফল প্রায় ১.৫–২ বর্গমিটার।

ত্বক তিনটি প্রধান স্তর নিয়ে গঠিত —
১. এপিডার্মিস (Epidermis): এটি ত্বকের সবচেয়ে বাইরের স্তর। এটি দেহকে বাহ্যিক ক্ষতি, জীবাণু ও সূর্যের UV রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
২. ডার্মিস (Dermis): মাঝের স্তর, যেখানে রক্তনালী, স্নায়ু, ঘ্রাণ-গ্রন্থি এবং কলাজেন রয়েছে। এটি ত্বককে দৃঢ়তা এবং স্থিতিশীলতা দেয়।
৩. হাইপোডার্মিস (Hypodermis/Subcutaneous): ত্বকের সবচেয়ে গভীর স্তর, যা চর্বি এবং সংযুক্ত টিস্যু দ্বারা তৈরি। এটি তাপমাত্রা বজায় রাখে এবং প্রাকৃতিক বাফার হিসেবে কাজ করে।

ত্বকের প্রধান কাজসমূহ:

১. সুরক্ষা:
ত্বক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ক্ষতিকর পদার্থ থেকে দেহকে রক্ষা করে।

২. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
ঘাম ও রক্তনালীর মাধ্যমে ত্বক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৩. সংবেদন:
ত্বকের মাধ্যমে আমরা স্পর্শ, চাপ, তাপ এবং ব্যথা অনুভব করতে পারি। এতে শরীর পরিবেশের সাথে প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হয়।

৪. বর্জ্য নিঃসরণ:
ত্বক ঘামের মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থ ও অতিরিক্ত লবণ বের করে।

৫. ভিটামিন D উৎপাদন:
সূর্যের UV রশ্মি ত্বকের মাধ্যমে ভিটামিন D উৎপাদন করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

১০. হাড় ও পেশি (Bones & Muscles)

হাড় ও পেশি মানব দেহের গঠন ও চলাফেরার মূল অঙ্গ। হাড় দেহের শক্তি, আকার ও কাঠামো প্রদান করে, আর পেশি হাড়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শরীরকে গতিশীলতা দেয়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে প্রায় ২০৬টি হাড় এবং প্রায় ৬০০টি পেশি আছে।

হাড়ের কাজসমূহ:

১. দেহের কাঠামো ও সুরক্ষা:
হাড় দেহকে আকার দেয় এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন মস্তিষ্ক, ফুসফুস ও হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষা প্রদান করে।

২. রক্ত উৎপাদন:
কিছু হাড়ের মধ্যবর্তী অংশে বোন মেরো (Bone Marrow) থাকে, যা রক্তকণিকা উৎপাদন করে।

৩. খনি ও খনিজ সঞ্চয়:
হাড় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সঞ্চয় করে রাখে, যা দেহের বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ।

৪. গতি ও পেশির সংযুক্তি:
হাড় পেশির সংযুক্তির মাধ্যমে হাত, পা ও শরীরকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে।

পেশির কাজসমূহ:

১. শরীর নড়াচড়া:
পেশি হাড়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেহকে হাঁটাচলা, দৌড়ানো, বসা, দাঁড়ানো এবং হাত-পা নড়ানোর ক্ষমতা দেয়।

২. শক্তি ও স্থিতিশীলতা:
পেশি দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে।

৩. রক্ত ও অন্যান্য পদার্থ সঞ্চালন:
হৃদপিণ্ড ও অন্যান্য অঙ্গের পেশি রক্ত ও অন্যান্য তরল পদার্থ সঞ্চালনেও সাহায্য করে।

বাংলাদেশে হাড় ও পেশি সংক্রান্ত সমস্যা:

বাংলাদেশে হাড় ও পেশি সংক্রান্ত সমস্যা, বিশেষ করে অস্টিওপরোসিস, আর্থ্রাইটিস, পেশি ব্যথা এবং মাংসপেশির দুর্বলতা খুবই সাধারণ। এর মূল কারণ হলো—

  • পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D না পাওয়া
  • ব্যায়ামের অভাব
  • দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইলের সামনে বসে থাকা
  • ওজনের ভারসাম্যহীনতা
  • বয়স্কদের হাড়ের ক্ষয়

মানব দেহের প্রধান অঙ্গ (Major Organs of the Human Body)

Human body4

মানব দেহের প্রধান অঙ্গগুলো হলো সেই অঙ্গসমূহ যা জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এগুলো ছাড়া দেহ সচল রাখা অসম্ভব। প্রধান অঙ্গগুলোর মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, লিভার, কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী, অন্ত্র, ত্বক, হাড় ও পেশি। প্রতিটি অঙ্গের নিজস্ব গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী রয়েছে যা দেহের স্বাভাবিক ও সুস্থ কার্যক্রম নিশ্চিত করে।

এই অঙ্গগুলো একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য পাকস্থলী ও অন্ত্রের মাধ্যমে হজম হয়, লিভার ও কিডনি খাদ্য থেকে পাওয়া পুষ্টি এবং অপদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করে, আর হৃদপিণ্ড ও রক্তনালী পুষ্টি ও অক্সিজেন শরীরের প্রতিটি কোষে পৌঁছে দেয়।

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য এই অঙ্গগুলোকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক প্রশান্তি এবং পর্যাপ্ত ঘুম—এসব বিষয় অঙ্গগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা নিশ্চিত করে।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের নাম ও কাজ সমূহ এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

মানব দেহের অঙ্গগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

মানব দেহের সব অঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ, তবে মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ড প্রাণরক্ষার ক্ষেত্রে অপরিহার্য। মস্তিষ্ক দেহের সমন্বয় ও চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে, আর হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেয়। এই দুটি অঙ্গ না থাকলে জীবন সম্ভব নয়।

মানব দেহের অঙ্গ সুস্থ রাখতে কী করতে হবে?

প্রতিদিন সুষম খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো এবং ধূমপান-অ্যালকোহল পরিহার মানব দেহের অঙ্গ সুস্থ রাখতে সহায়ক। এছাড়া নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অঙ্গের সমস্যাগুলো প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা জরুরি।

উপসংহার (Conclusion)

মানব দেহের অঙ্গগুলো একে অপরের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে, যা আমাদের জীবনধারণের মূল ভিত্তি। মস্তিষ্ক চিন্তা ও সমন্বয়, হৃদপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন, লিভার টক্সিন অপসারণ, কিডনি পানি ও লবণের ভারসাম্য, অন্ত্র পুষ্টি শোষণ এবং হাড় ও পেশি দেহের গঠন ও চলাফেরার জন্য অপরিহার্য।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ, জীবনধারা এবং মানসিক চাপ এই অঙ্গগুলোর স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি, ব্যায়াম এবং মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একটি সুস্থ জীবন এবং দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে আমাদের প্রতিটি অঙ্গের যত্ন নিতে হবে। মনে রাখুন—অঙ্গগুলোর সুস্থতা মানেই জীবনের মান উন্নয়ন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *