মাথার পিছনে টিউমারের লক্ষণ সমূহ
মস্তিষ্কের টিউমার হলে তা অনেকেই ভয় পায়। কারণ মস্তিষ্ক আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। যদি সেখানে কোনো অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি পায়, তা চাপ, ফাংশন ব্যাঘাত এবং জীবনঝুঁকি বাড়াতে পারে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ক্রমবর্ধমান উন্নত হলেও, যেসব লোকসাধারণ মস্তিষ্কের টিউমার সম্পর্কে জানতে চান—তাদের জন্য সঠিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় আমরা জানতে চেষ্টা করব—টিউমার কী, জীবনকাল, লক্ষণ, অপারেশন খরচ ও দেশের প্রেক্ষাপটে যা জানা জরুরি।
মস্তিষ্কে টিউমার সবসময় ক্যান্সার—এই মিথ্যা ধারণা অনেকের আছে। আসলে টিউমারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়: নন-ম্যালিগন্যান্ট (সুসংগত, Non-cancerous / benign) এবং ম্যালিগন্যান্ট (আগ্রাসী, ক্যান্সারous)। নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ধীরে ধীরে বড় হয়, কখনো কখনো মুক্তভাবে অবস্থান করে থাকতে পারে; কিন্তু অবস্থানবশত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার দ্রুত বেড়ে যেতে পারে, আশপাশের মস্তিষ্ককে ধ্বংস করতে পারে।
টিউমারের প্রকৃতি (গ্রেড), অবস্থান, রোগীর বয়স, স্বাস্থ্যের অবস্থা, চিকিৎসার সময় ও গুণাগুণ—এসব বিষয় সিদ্ধান্ত নেয় রোগীর চিকিৎসক। বাংলাদেশে আমাদের অনেক মানুষের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, হাসপাতাল সুযোগ-সুবিধা ও জনজাগরণ সীমিত। তাই রোগ ধরা পরে অনেক সময় অনেকটা উন্নত অবস্থানে। কিন্তু যদিও চ্যালেঞ্জ অনেক, অনেক রোগী সাফল্যমণ্ডিতভাবে চিকিৎসা পায় এবং দীর্ঘায়ু জীবন করে।
এই লেখায় আমরা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব—“ব্রেন টিউমার হলে কি বাঁচা সম্ভব?”, “মাথার পিছনে টিউমারের লক্ষণসমূহ কী কী?”, “বাংলাদেশে অপারেশন খরচ কেমন?”, এবং সর্বশেষ উপসংহার দেবে আমাদের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ও পরামর্শ। শেষে থাকছে কিছু প্রাসঙ্গিক FAQ।
ব্রেন টিউমার হলে কি মানুষ বাঁচে?

হ্যাঁ, মস্তিষ্কে টিউমার থাকলেও অনেকেই জীবিত থাকতে পারে—কিন্তু “বাঁচা” বলতে কী—কতক্ষণ, কী মানের জীবন—এসব নানা বিষয় বিবেচনা করতে হবে। টিউমারের ধরন, আকার, অবস্থান, রোগীর বয়স ও স্বাস্থ্যের অবস্থা—এসব বিষয় প্রতিক্রিয়া (response) এবং জীবনকাল নির্ধারণ করে।
উদাহরণস্বরূপ, কম গ্রেডের (নিচ গ্রেড) বা সুসংগত (benign) টিউমারগুলো অপেক্ষাকৃত ভালো ফল দিতে পারে। সঠিক সময়ে অপারেশন, অতিরিক্ত বিকিরণ বা রেডিওথেরাপি,-কেমোথেরাপি (যদি প্রয়োজন) করলে অনেক রোগী ভালোভাবে সুস্থ হতে পারে।
কিন্তু উচ্চ গ্রেড ম্যালিগন্যান্ট টিউমার যেমন গ্লিওব্লাস্টোমা (Glioblastoma) হলে চিকিৎসার চ্যালেঞ্জ বেশি। গ্লিওব্লাস্টোমার ক্ষেত্রে, বিশ্বজুড়ে গড় মেয়াদ (median survival) প্রায় ১৫ মাস বলে অনেকে রিপোর্ট করেছেন। The Business Standard+1
এক মূল্যবান সমীক্ষা বলেছে, সমস্ত ধরনের মস্তিষ্ক ও স্নায়বিক (central nervous system) টিউমারের ৫ বছরের “নেট সারভাইভাল” মাত্র ২২%–এর কাছাকাছি। Canadian Cancer Society
বাংলাদেশেও রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২০,০০০ লোক মস্তিষ্কের টিউমার দ্বারা প্রভাবিত হন। Daily Sun যদিও সবারই সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়, তবে অনেক রোগীর ক্ষেত্রে—বিশেষ করে যদি সময়মতো নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়—জীবনকাল এবং জীবনমান উন্নত করা যায়।
অতএব—“বাঁচা” কেবল একটি শব্দ; এর প্রকৃত মান—কতটা সময়, এবং কতটা স্বাভাবিকভাবে—এসব নির্ভর করে অনেক বেশি দিক দিয়ে।
মাথার পিছনে টিউমারের লক্ষণ সমূহ

মাথার পিছনে টিউমার হলে অর্থাৎ মস্তিষ্ক বা স্নায়বিক অংশে টিউমার থাকলে লক্ষণগুলি হয়তো শুরুতে সূক্ষ্ম—but সময়ের সাথে তা উন্নত হয় এবং স্পষ্ট হয়। নিচে এমন ৯ টি লক্ষণ দেওয়া হলো যেগুলো মাথার পিছনের অংশে টিউমারের সম্ভাব্য ইঙ্গিত হতে পারে:
1. প্রচণ্ড মাথাব্যথা
মাথার পিছনে টিউমার হলে সবচেয়ে সাধারণ ও প্রথম দিকের যে লক্ষণটি বেশিরভাগ রোগীর মধ্যে দেখা যায় তা হলো প্রচণ্ড মাথাব্যথা। এই ব্যথা সাধারণ মাথাব্যথার মতো নয় — এটি সাধারণত গভীর, ভারী, চাপযুক্ত ও নিরবচ্ছিন্ন অনুভূত হয়। অনেক সময় রোগীরা বলেন, “মাথার ভেতরে যেন কিছু একটা চেপে বসে আছে” — এই চাপই টিউমার থেকে সৃষ্ট। টিউমার যখন ধীরে ধীরে বড় হয়, তখন এটি আশেপাশের মস্তিষ্কের টিস্যু ও স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ও স্নায়ু কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং ব্যথা বেড়ে যায়।
এই ব্যথা সাধারণত সকালে ঘুম থেকে উঠেই বেশি অনুভূত হয়। কারণ রাতের ঘুমের সময় রক্তপ্রবাহে ও মস্তিষ্কের তরল (CSF) প্রবাহে সামান্য পরিবর্তন ঘটে, যা টিউমার-প্রভাবিত অংশে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তাই অনেক রোগী সকালে ঘুম থেকে উঠে মাথা ধরার পাশাপাশি বমি বা মাথা ঘোরা অনুভব করেন।
আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এই মাথাব্যথা সাধারণ ওষুধে (যেমন প্যারাসিটামল, ব্রুফেন) উপশম হয় না বা খুব অল্প সময়ের জন্য আরাম দেয়। ব্যথা ধীরে ধীরে সপ্তাহ বা মাসের পর মাস বাড়তে থাকে। কখনো কখনো ব্যথা ঘাড়, কান বা চোখের পিছনেও ছড়িয়ে যেতে পারে, যা টিউমারের অবস্থান ও চাপে নির্ভর করে।
অন্য একটি বিষয় হলো, হাঁচি, কাশি বা ঝুঁকে পড়ার সময় ব্যথা বাড়ে। কারণ এই সময় মস্তিষ্কের ভিতরের চাপ (intracranial pressure) সাময়িকভাবে বেড়ে যায়, ফলে টিউমার সংলগ্ন স্থানে বেশি চাপ পড়ে এবং ব্যথা তীব্র হয়।
কিছু রোগীর ক্ষেত্রে মাথাব্যথার ধরন শুরুতে মাঝে মাঝে হয় — যেমন সপ্তাহে কয়েকদিন — কিন্তু সময়ের সাথে তা দৈনন্দিন ও তীব্র হয়ে যায়। অনেক সময় রাতে ব্যথা এত বেশি হয় যে ঘুম ভেঙে যায়, ঘাড় stiff হয়ে যায়, চোখে ঝাপসা লাগে বা ভারসাম্য হারায়।
যদি মাথার পিছনের অংশে (posterior fossa region) টিউমার হয়, তখন মাথার নিচের দিক বা ঘাড়ের কাছাকাছি ভারী ব্যথা হয়, যা কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা বা তরুণদের মধ্যে এই ধরনের টিউমার হলে তারা প্রায়ই “ঘাড় ব্যথা” বা “চাপ লাগছে” বলে অভিযোগ করে।
বাংলাদেশে অনেক সময় এই ধরনের ব্যথা “মাইগ্রেন” বা “সাইনাসের সমস্যা” ভেবে সাধারণ চিকিৎসা নেওয়া হয়, ফলে রোগ নির্ণয় দেরিতে হয়। কিন্তু যেসব মাথাব্যথা ক্রমাগত বাড়ে, ওষুধে উপশম হয় না, বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় — সেগুলোর প্রতি অবিলম্বে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
2. স্তব্ধতা বা কাঠিন্য (Stiffness) অনুভব
মাথার পিছনে টিউমার হলে ঘাড় ও মাথার পেছনের অংশে স্তব্ধতা বা কাঠিন্য অনুভব করা একটি খুবই সাধারণ কিন্তু প্রায়ই অবহেলিত লক্ষণ। অনেক রোগী প্রথমে মনে করেন এটি “গলা শক্ত হয়ে যাওয়া” বা “ঘাড়ে বাত ধরেছে”, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি হতে পারে মস্তিষ্কের টিউমারের সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।
মাথার পিছনের অংশ বা posterior cranial fossa হলো এমন একটি স্থান যেখানে মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ — যেমন cerebellum ও brainstem — অবস্থান করে। এই অংশে টিউমার হলে আশেপাশের পেশী, স্নায়ু ও রক্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে ঘাড়ের পেশী টান টান হয়ে যায়, আর মাথা নড়াতে গেলে ব্যথা ও কাঠিন্য দেখা দেয়।
প্রথমদিকে এই stiffness সামান্য হয় — যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘাড় ঘোরাতে কষ্ট হওয়া বা মাথা ঝুঁকালে ব্যথা অনুভব করা। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি স্থায়ী রূপ নেয়। রোগীরা বলেন, “মাথা ঘোরাতে গেলে টান লাগে”, “ঘাড় ভারী লাগে”, বা “পিছনের দিকটা শক্ত মনে হয়” — যা টিউমারের চাপে হওয়া স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া।
যখন টিউমার বড় হতে থাকে, তখন তা মেনিনজেস (meninges) বা মস্তিষ্ককে ঘিরে রাখা ঝিল্লির ওপরও চাপ দেয়। এই চাপ স্নায়ু ও তরল প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে পেশীতে খিঁচুনি বা কাঠিন্য তৈরি হয়। ঘাড়ের নিচে টান ধরতে পারে, মাথা নিচু করতে গেলে ব্যথা হয়, আবার ঘাড় সোজা রাখলেও অস্বস্তি অনুভূত হয়।
অনেক সময় রোগীরা ঘাড়ের stiffness-এর কারণে স্বাভাবিকভাবে মাথা ঘোরাতে বা কাজ করতে পারেন না। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা মোবাইল ব্যবহারের সময় ব্যথা বাড়ে। এমনকি রাতে ঘুমানোর সময় একদিকে ঘুমাতে গেলে চাপ বাড়ে এবং ঘুম ভেঙে যায়।
3. মতিভ্রংশ বা মাথা দোলা
মাথার পিছনের অংশে টিউমার হলে অনেক রোগীর মধ্যে দেখা যায় মতিভ্রংশ বা মাথা দোলা (Vertigo / Dizziness) — অর্থাৎ, চারপাশ ঘুরছে মনে হওয়া, ভারসাম্য হারানো, অথবা মাথা হালকা লাগা। এই লক্ষণটি বিশেষভাবে দেখা যায় যখন টিউমারটি মস্তিষ্কের সেরিবেলাম (Cerebellum) বা ব্রেইনস্টেম (Brainstem) অংশে অবস্থান করে, কারণ এই অংশগুলোই শরীরের ভারসাম্য ও চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রথম দিকে মাথা ঘোরা খুব হালকা মনে হয় — যেমন হঠাৎ উঠলে বা হাঁটলে চোখে অন্ধকার দেখা, দুলে যাওয়া, মাথা হালকা লাগা ইত্যাদি। কিন্তু সময়ের সাথে এটি ক্রমে তীব্র হয়। অনেক রোগী বলেন, “মনে হয় মাটি নড়ছে”, “চলতে গেলেই দুলে যাচ্ছি”, বা “চোখের সামনে সব ঘুরছে” — এই অভিজ্ঞতাগুলো টিউমারজনিত ভারসাম্য সমস্যার ক্লাসিক লক্ষণ।
টিউমার যখন cerebellum-এর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, তখন শরীরের সামঞ্জস্যপূর্ণ নড়াচড়া ব্যাহত হয়। ফলে হাঁটার সময় দিক হারানো, হঠাৎ পড়ে যাওয়া, বা একদিকে ঝুঁকে যাওয়া দেখা দেয়। ছোট টিউমারেও এই সমস্যা হতে পারে, কারণ cerebellum একটি ছোট জায়গায় অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে কাজ করে।
বাংলাদেশে অনেক সময় এই ধরনের মাথা ঘোরা “গরমে মাথা ঝিমঝিম করছে”, “ব্লাড প্রেসার কম”, বা “কানে ভারসাম্য সমস্যা (labyrinthitis)” ভেবে সাধারণ চিকিৎসা নেওয়া হয়। কিন্তু যদি এই মাথা ঘোরা নিয়মিত হয়, হাঁটলে বা দাঁড়ালে বেড়ে যায়, এবং চোখে ঝাপসা দেখা বা বমির সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে তা মস্তিষ্কে টিউমারের সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে।
এছাড়া, অনেক সময় মাথা দোলার সঙ্গে চোখের নড়াচড়া অস্বাভাবিক হয় (nystagmus) — অর্থাৎ চোখ দ্রুত একদিক থেকে অন্যদিকে কাঁপে। এটি cerebellar dysfunction-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
4. শক্তি কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত ক্লান্তি
মাথার পিছনের টিউমার হলে শরীরে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, দুর্বলতা ও শক্তি কমে যাওয়া অন্যতম সাধারণ লক্ষণ। অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারেন না যে এটি টিউমারের প্রভাব — তারা ভাবেন কাজের চাপ, ঘুমের অভাব, বা রক্তস্বল্পতার কারণে এমন হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে, মস্তিষ্কে টিউমার তৈরি হলে সেটি স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে, যার ফলে শরীরের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়াও বিঘ্নিত হয়।
প্রথমদিকে রোগীরা অনুভব করেন—
- সকালে ঘুম থেকে উঠেই অস্বাভাবিক ক্লান্তি,
- সারাদিন কাজের প্রতি অনাগ্রহ,
- কোনো কাজেই মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা,
- শরীরে ভারি ভাব বা ঝিমুনি অনুভব করা।
এই উপসর্গগুলোকে সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা ভেবে উপেক্ষা করা হয়, কিন্তু টিউমার যখন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, তখন শরীরের ভেতর থেকে শক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে যেতে থাকে।
টিউমার মূলত মস্তিষ্কের যে অংশে চাপ সৃষ্টি করে, তা স্নায়ু ও হরমোনের ভারসাম্যের সঙ্গে যুক্ত। ফলে metabolic rate কমে যায়, রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়, এবং কোষে শক্তি উৎপাদন হ্রাস পায়। এর ফলেই রোগীর শরীরে ক্রমাগত দুর্বলতা দেখা দেয়।
আরেকটি কারণ হলো, ব্রেন টিউমারের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন প্রবাহে বাধা তৈরি হয়। এই ঘাটতির প্রভাবে কোষ পর্যায়ে শক্তির ঘাটতি হয়, যা পুরো শরীরে ক্লান্তির অনুভূতি এনে দেয়।
এছাড়া, intracranial pressure (মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ চাপ) বাড়লে মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোর কাজ ব্যাহত হয়। এতে হরমোন নিঃসরণ, ঘুমের নিয়ন্ত্রণ, ও মনোযোগ বজায় রাখার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রোগী ক্রমশ শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।
5. দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা বা কমে যাওয়া
মাথার পিছনের টিউমার হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক লক্ষণগুলোর একটি হলো দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া বা ক্রমে কমে আসা। এই সমস্যা সাধারণত টিউমারের অবস্থান যদি অক্সিপিটাল লোব (Occipital lobe) বা মস্তিষ্কের পেছনের অংশে হয়, তখন দেখা দেয়। কারণ এই অংশটি সরাসরি চোখের দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত।
প্রথম দিকে অনেক রোগী টেরই পান না যে দৃষ্টিশক্তি সমস্যা টিউমারের কারণে হচ্ছে। তাঁরা ভাবেন চোখের পাওয়ার বেড়ে গেছে বা চোখের রোগ (যেমন ছানি বা চোখে চাপ) হচ্ছে। কিন্তু আসলে টিউমার ধীরে ধীরে চোখে যাওয়া অপটিক নার্ভ (Optic nerve)-এর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে দৃষ্টির স্বচ্ছতা নষ্ট হয়।
প্রাথমিক অবস্থায় রোগীরা লক্ষ্য করেন—
- দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখা যায় না
- হঠাৎ চোখ ঝাপসা লাগে
- চোখে আলো পড়লে মাথা ঘুরে যায়
- কখনও কখনও চোখের সামনে কালো ছোপ বা ছায়া দেখা যায়
এই উপসর্গগুলো সময়ের সঙ্গে আরও খারাপ হতে থাকে। বিশেষ করে যখন টিউমারের আকার বাড়ে, তখন চোখের নার্ভে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে চোখের কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না। এতে optic atrophy বা চোখের স্নায়ু ক্ষয় হতে শুরু করে।
অনেক সময় রোগী বলেন, “চোখে কুয়াশা দেখি”, “একদিকের দৃষ্টি চলে গেছে”, অথবা “দু’চোখে একসঙ্গে দেখা মেলে না।” এই ধরনের অভিযোগই সাধারণত টিউমারজনিত দৃষ্টিবিভ্রাটের ক্লাসিক লক্ষণ।
যখন টিউমার brainstem বা occipital cortex-এর ওপর চাপ দেয়, তখন চোখের দুই দিকের দৃষ্টি ক্ষেত্র অসমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে রোগী একপাশের জিনিস দেখতে পান না (যাকে বলে hemianopia)। এটি এতটাই ধীরে হয় যে অনেকে অনেকদিন ধরে বুঝতেই পারেন না।
বাংলাদেশে অনেক সময় এই ধরনের সমস্যা চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা বদলিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যদি চোখে ঝাপসা দেখা, চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসা, বা আলোতে চোখ ব্যথা হওয়া নিয়মিত হয়, তাহলে তা চোখের নয়—বরং মস্তিষ্কের ভেতরকার সমস্যা হতে পারে।
6. বমি ও বমি বমি ভাব
মাথার পিছনের টিউমারের অন্যতম সাধারণ ও প্রাথমিক লক্ষণ হলো বারবার বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব লাগা। অনেকেই প্রথমে একে গ্যাস্ট্রিক, বদহজম বা খাদ্যে বিষক্রিয়া ভেবে ভুল করেন, কিন্তু আসলে এটি মস্তিষ্কে টিউমার থেকে সৃষ্ট চাপ বৃদ্ধি (intracranial pressure)-এর ফলাফল।
যখন টিউমার মস্তিষ্কের পেছনের অংশে তৈরি হয়, তখন সেটি ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে রক্ত ও তরলের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে মস্তিষ্কের ভেতরে চাপ বাড়ে, এবং সেই চাপ মস্তিষ্কের বমি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (vomiting center)-এর ওপর প্রভাব ফেলে। এতে রোগী বারবার বমি বমি ভাব অনুভব করেন, এমনকি খালি পেটে হঠাৎ বমিও হতে পারে।
প্রথমদিকে বমি সাধারণত সকালে বেশি হয়। ঘুম থেকে ওঠার পর হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা ও বমি একসঙ্গে দেখা দেয়। অনেক সময় বমির সঙ্গে মাথা ঘোরা বা চোখে ঝাপসা দেখা যোগ হয়। এই অবস্থা সাধারণ গ্যাস্ট্রিক নয় — বরং মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
বাংলাদেশে অনেক রোগী বলেন, “সকালে ঘুম থেকে উঠলেই বমি হয়”, “পেটে কিছু রাখলে সহ্য হয় না”, বা “খালি পেটে মাথা ধরে বমি আসে।” কিন্তু এ ধরনের লক্ষণ যখন বারবার দেখা দেয়, তখন তা অবশ্যই নিউরোলজিক্যাল কারণ হতে পারে।
টিউমার যদি cerebellum বা brainstem-এর আশেপাশে অবস্থান করে, তাহলে সেখানে থাকা vomiting center ও vagus nerve সরাসরি প্রভাবিত হয়। এর ফলে পাকস্থলীর পেশীগুলো অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হয় এবং হঠাৎ বমি শুরু হয় — কোনো খাদ্য গ্রহণ ছাড়াই।
7. হঠাৎ দৃষ্টিভ্রম বা দ্বৈত দৃষ্টি (Double Vision)
মাথার পিছনের টিউমারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো হঠাৎ দৃষ্টিভ্রম বা দ্বৈত দৃষ্টি দেখা। অনেক রোগী প্রথমে এটিকে “চোখের ক্লান্তি” বা “লম্বা সময় কম্পিউটার ব্যবহার করার কারণে” মনে করেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি মস্তিষ্কের পেছনের অংশে টিউমারের স্নায়ু চাপের ফলাফল।
দ্বৈত দৃষ্টির (Diplopia) ক্ষেত্রে রোগী একই সময়ে দুইটি ছবিই দেখতে পান, যা সাধারণ চোখের সমস্যা নয়। এই সমস্যা তখন ঘটে যখন টিউমার cranial nerves III, IV বা VI-এর ওপর চাপ ফেলে। এই নার্ভগুলো চোখের পেশী নিয়ন্ত্রণ করে। টিউমারের কারণে পেশীর সমন্বয় বিঘ্নিত হলে এক চোখ অন্য চোখের সাথে মিলিতভাবে কাজ করতে পারে না।
প্রথমদিকে দ্বৈত দৃষ্টি সামান্য হয়। যেমন:
- দূরে তাকালে বা মাথা কিছুদিকে ঘোরালে ছবি দ্বিগুণ দেখা
- চোখ ঘোরানোর সময় চোখের পেশীতে টান অনুভূত
- একদম হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে বা হঠাৎ দৃষ্টি ঝাপসা
ধীরে ধীরে সমস্যাটি তীব্র হয়ে যায়। অনেক রোগী বলেন, “দুইটি ছবি এক সাথে চোখের সামনে ভেসে আসে”, “একদিকে তাকালে সব ঝাপসা লাগে”, বা “লিখিত শব্দ পড়তে গেলে চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়।”
যখন টিউমার brainstem বা occipital lobe-এ থাকে, তখন এই দ্বৈত দৃষ্টি প্রায়ই head tilt বা চোখের অস্বাভাবিক পজিশনে দেখা দেয়। এর ফলে রোগী স্বাভাবিকভাবে বসা বা হাঁটার সময় ভারসাম্য হারাতে পারেন।
বাংলাদেশে অনেক সময় রোগীরা এটিকে সাধারণ চোখের সমস্যা ধরে চোখের ডাক্তার দেখান, চশমা পরিবর্তন করেন। কিন্তু যদি দ্বৈত দৃষ্টি হঠাৎ শুরু হয়, মাথাব্যথা, ঘোরা বা বমির সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে এটি সতর্ক সংকেত যে মস্তিষ্কে টিউমার রয়েছে।
8. মাথা ঘোরা ও ভারসাম্যহীনতা (Loss of Balance)
মাথার পিছনের টিউমারের একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো মাথা ঘোরা এবং ভারসাম্যহীনতা। রোগীরা প্রাথমিকভাবে এটিকে “হঠাৎ মাথা ঘুরছে” বা “সিঁড়ি ওঠার সময় ভারসাম্য হারাচ্ছি” বলে অভিহিত করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি মস্তিষ্কের cerebellum বা brainstem অংশে টিউমারের চাপের ফল।
Cerebellum হলো মস্তিষ্কের সেই অংশ যা শরীরের গতি ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। যখন টিউমার এই অংশে অবস্থান করে, তখন পেশীর সঠিক সমন্বয় ব্যাহত হয়। ফলে রোগী চলার সময় ঝুঁকে যায়, হঠাৎ ভারসাম্য হারায়, বা চলতে গিয়ে পড়ার মতো অনুভব করে।
প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণগুলো হালকা হয়— যেমন:
- হাঁটার সময় সামান্য দুলে যাওয়া
- সিঁড়ি ওঠার বা নামার সময় মাথা ভারি লাগা
- হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে চোখের সামনে অন্ধকার দেখা
কিন্তু টিউমার যত বৃদ্ধি পায়, মাথা ঘোরা ও ভারসাম্যহীনতা তত তীব্র হয়। অনেক রোগী বলেন, “যে কোনো হঠাৎ চলাচল করলে দুলে যাচ্ছি”, “দাঁড়াতে থাকলে শরীর একপাশে ঝুঁকে যাচ্ছে।”
এই সমস্যার সঙ্গে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা, মাথাব্যথা, বমি বা ক্লান্তিও যুক্ত হতে পারে। কারণ মস্তিষ্কে চাপ বেড়ে গেলে চোখ, ভারসাম্য ও ঘাড়ের পেশী একসাথে প্রভাবিত হয়।
বাংলাদেশে অনেক সময় রোগীরা এটিকে সাধারণ ‘হালকা মাথা ঘোরা’ বা ‘ব্লাড প্রেশারের কারণে’ মনে করেন। কিন্তু যদি এটি ক্রমাগত হয়, দিনে দিনে তীব্র হয়, এবং হাঁটাচলায় সমস্যা তৈরি করে, তাহলে অবশ্যই নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
9. কান বা মাথার পিছনে চাপ অনুভব
মাথার পিছনের টিউমারের আরেকটি লক্ষণ হলো কান বা মাথার পিছনে চাপ অনুভব করা। অনেক রোগী প্রাথমিকভাবে এটিকে “সাইনাসের সমস্যা” বা “কানে বাত ধরা” ভেবে উপেক্ষা করেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি মস্তিষ্কে টিউমারের চাপের (intracranial pressure) একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
যখন টিউমার posterior fossa বা occipital region-এ অবস্থান করে, তখন এটি আশেপাশের স্নায়ু ও রক্তনালীর ওপর চাপ তৈরি করে। এই চাপ কখনো কখনো কান, ঘাড়ের পেছন বা মাথার নিচের অংশে অনুভূত হয়। অনেক রোগী বলেন, “কানে চাপ অনুভব হচ্ছে”, “মাথার পিছনে ভেতর থেকে টান লাগছে”, বা “চাপের মতো অনুভূতি হচ্ছে।”
প্রথম দিকে এই চাপ খুব হালকা হয়, যেমন হালকা অস্বস্তি বা মাথা ভারি লাগা। কিন্তু টিউমারের আকার বৃদ্ধি পেলে চাপ স্থায়ী ও তীব্র হয়ে যায়। কখনো কখনো এটি মাথাব্যথা, ঘোরা, বা দৃষ্টিশক্তি ঝাপসার সঙ্গে যুক্ত হয়।
কান বা মাথার পিছনে চাপ অনুভব করার ক্ষেত্রে আরও লক্ষণ দেখা দিতে পারে—
- হালকা শুনতে সমস্যা বা কানে বাজনা (tinnitus)
- ঘাড়ে টান বা stiffness
- মাথা ঝুঁকালে চাপ বেড়ে যাওয়া
- বমি বা বমি বমি ভাবের সঙ্গে যুক্ত
এই চাপের অনুভূতি সাধারণভাবে চিকিৎসা না নিলে ক্রমশ তীব্র হয়। কারণ টিউমার মস্তিষ্কের ভেতরের তরল (CSF) প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, এবং তা কান ও মাথার পিছনের অংশে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে অনেক সময় রোগীরা এটিকে সাইনাস বা কানের সংক্রমণ ভেবে চিকিৎসা নেন। কিন্তু যদি চাপ নিয়মিত হয়, তীব্র হয় এবং অন্যান্য neurological উপসর্গ যেমন মাথাব্যথা, দৃষ্টি ঝাপসা, ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, তাহলে মস্তিষ্কে টিউমারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা উচিত।
ব্রেন টিউমার অপারেশন খরচ বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ব্রেন টিউমারের অপারেশন খরচ বিভিন্ন ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে এটি নির্ধারিত হয় টিউমারের আকার, অবস্থান, রোগীর বয়স, হাসপাতাল, চিকিৎসার ধরন ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি অনুযায়ী। শহর ও বেসরকারি হাসপাতালে খরচ সরকারি হাসপাতালে তুলনায় সাধারণত বেশি।
ছোট ও সহজ টিউমার অপারেশনের ক্ষেত্রে খরচ প্রায় ৪–৭ লাখ টাকা হতে পারে। কিন্তু বড়, জটিল বা মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে অবস্থানরত টিউমারের ক্ষেত্রে খরচ ১০–২০ লাখ টাকা পর্যন্ত যেতে পারে। এতে সার্জারি, অ্যানেস্থেসিয়া, অপারেশন থিয়েটার চার্জ, ও হাসপাতালে থাকার খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
বাংলাদেশে ঢাকার বড় বেসরকারি হাসপাতাল যেমন অ্যাপোলো, মেইডিকেল সিটি, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও শেবাচিম হাসপাতালে মস্তিষ্কের সার্জারি করা হয়। এগুলোতে খরচ সরকারি হাসপাতালের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়, তবে সুবিধা এবং চিকিৎসার মান উন্নত।
চিকিৎসার ধরনও খরচে প্রভাব ফেলে। যদি মাইক্রোসার্জারি বা ন্যাভিগেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়, তাহলে খরচ বাড়ে। এছাড়া পোস্ট-অপারেশন কেয়ার, ICU থাকা, ও ওষুধের খরচও মোট খরচের অংশ। অনেক সময় রোগীকে অপারেশনের আগে MRI, CT scan, এবং ল্যাব টেস্ট করানো প্রয়োজন, যা অতিরিক্ত খরচ যোগ করে।
সরকারি হাসপাতাল যেমন BSMMU বা PG Hospital-এ অপারেশন খরচ তুলনামূলকভাবে কম। তবে সেখানে হাসপাতালে অপেক্ষার সময় বেশি এবং আধুনিক প্রযুক্তি সীমিত। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান এবং সুবিধা বেশি, ফলে খরচও বেশি।
চিকিৎসার পরে রোগীকে ফিজিওথেরাপি, ওষুধ ও নিয়মিত চেকআপ করানো জরুরি। এই খরচও অনেক ক্ষেত্রে ১–২ লাখ টাকার মধ্যে হতে পারে, যা মোট চিকিৎসার খরচের সঙ্গে যুক্ত হয়।
বাংলাদেশে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এবং এনজিও রোগীকে অর্থনৈতিক সাহায্য বা installment সুবিধা দেয়। এছাড়া স্বাস্থ্য বীমা থাকলে কিছু খরচ কভার হতে পারে, যদিও দেশে স্বাস্থ্য বীমার প্রচলন এখনও সীমিত।
মোটকথা, ব্রেন টিউমারের অপারেশন বাংলাদেশের জন্য সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয়বহুল, তবে সময়মতো চিকিৎসা এবং সঠিক হাসপাতালের নির্বাচন রোগীর জীবন রক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপযুক্ত হাসপাতাল ও চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে খরচের বিস্তারিত হিসাব জানা এবং প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি রোগীর পাশে পরিবারিক সহায়তা ও মানসিক সমর্থন অপারেশনের সাফল্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
মাথার পিছনে টিউমারের লক্ষণ সমূহ এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
ব্রেন টিউমার ধরা পড়লে কি পুরোপুরি সেরে ওঠা সম্ভব?
ব্রেন টিউমারের সেরে ওঠার সম্ভাবনা তার আকার, অবস্থান এবং প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে। ছোট ও প্রাথমিক পর্যায়ের টিউমার সার্জারি বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব। তবে বড় বা জটিল টিউমার থাকলে পুনর্বাসন ও নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো কীভাবে চিহ্নিত করা যায়?
মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, দৃষ্টি ঝাপসা বা দ্বৈত দৃষ্টি, বমি বমি ভাব, কানে চাপ বা ভারসাম্যহীনতা—এই উপসর্গগুলো ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। নিয়মিত বা ক্রমবর্ধমানভাবে এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার
ব্রেন টিউমার একটি জটিল ও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে রোগীর জীবনমান ও টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের পেছনের অংশে টিউমার থাকলে উপসর্গগুলো প্রাথমিকভাবে হালকা মনে হতে পারে—মাথাব্যথা, ঘোরা, ক্লান্তি, চোখে ঝাপসা বা বমি ভাব। এই লক্ষণগুলোকে সাধারণ শারীরিক সমস্যার সঙ্গে ভুলে গেলে সময়মতো চিকিৎসা মিস হতে পারে এবং টিউমারের জটিলতা বাড়তে পারে।
ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক ও ক্রমবর্ধমান লক্ষণগুলো সনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচণ্ড মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ভারসাম্যহীনতা, দৃষ্টিভ্রংশ, দ্বৈত দৃষ্টি, কানে চাপ বা মাথার পিছনের চাপ—এই সমস্ত লক্ষণ একসাথে বা পৃথকভাবে দেখা দিতে পারে। এগুলো শুধুমাত্র অস্বস্তি নয়; এগুলো মস্তিষ্কের ভেতরে টিউমারের উপস্থিতির সূচক।
চিকিৎসা শুরু করার আগে MRI বা CT scan-এর মাধ্যমে টিউমারের আকার, অবস্থান ও প্রকৃতি নির্ধারণ করা অপরিহার্য। সঠিক নির্ণয় রোগীকে নিরাপদ অপারেশন এবং সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনার সুযোগ দেয়। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল উভয় ক্ষেত্রেই ব্রেন টিউমারের অপারেশন সম্ভব, যদিও খরচ ও সুবিধা ভিন্ন। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান বেশি হলেও খরচ বেশি; সরকারি হাসপাতালে খরচ কম হলেও কিছু ক্ষেত্রে অপেক্ষার সময় বেশি হতে পারে।
অপারেশনের পরে ফিজিওথেরাপি, ওষুধ, এবং নিয়মিত চেকআপ রোগীর দ্রুত সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রোগী ও পরিবারিক সহায়তা মানসিক ও শারীরিক পুনর্বাসনে সহায়ক। প্রাথমিক সতর্কতা, সঠিক নির্ণয় ও সময়মতো চিকিৎসা রোগীর জীবন রক্ষা এবং মানসম্মত জীবন নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
অতএব, মাথার পিছনের যে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণকে হালকাভাবে নিলে চলবে না। সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রতিটি রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। টিউমারের ধরণ এবং অবস্থান অনুযায়ী চিকিৎসার ফলাফল ভিন্ন হতে পারে, তবে যত তাড়াতাড়ি নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করা হয়, সাফল্যের সম্ভাবনা তত বেশি।
সারসংক্ষেপে, ব্রেন টিউমার মোকাবেলায় সচেতন থাকা, উপসর্গ দ্রুত চিনে নেওয়া, সঠিক হাসপাতাল নির্বাচন এবং পরিবারের সমর্থন রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করার মূল চাবিকাঠি। এটি শুধু চিকিৎসা নয়, বরং রোগী ও পরিবারের জন্য মানসিক প্রস্তুতির বিষয়ও। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে টিউমারের প্রভাব অনেকাংশে কমানো সম্ভব, এবং রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে পারে।