পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?
পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে পায়খানা অস্বাভাবিকভাবে তরল বা পাতলা হয়ে যায়। এটি সাধারণত হজমতন্ত্রের সমস্যা বা সংক্রমণের কারণে ঘটে। বাংলাদেশের পরিবেশে এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে বর্ষাকালে যেখানে পানির দূষণ এবং খাদ্যের সংরক্ষণ সমস্যা বেশি থাকে। পাতলা পায়খানা হলে দেহ থেকে জল ও লবণের ঘাটতি হতে পারে, যা বিশেষত শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল মানুষের জন্য বিপজ্জনক।
পাতলা পায়খানা শুধু শারীরিক সমস্যা নয়, এটি দৈনন্দিন জীবনে অসুবিধা এবং মানসিক চাপও সৃষ্টি করে। কখনও কখনও এটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হিসেবে রূপ নিতে পারে, যা বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পানির যত্ন নিলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বাংলাদেশে অনেকেই খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে দ্রুত পাতলা পায়খানার শিকার হন। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক খাদ্যবিধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত গরম, ভেজা পরিবেশ এবং অপরিষ্কৃত খাদ্য খাওয়া পাতলা পায়খানার প্রধান কারণ।
পাতলা পায়খানা হওয়ার সময় দেহের পানি ক্ষয় ঘটে, যা ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করে। তাই পর্যাপ্ত পানি এবং লবণ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। পাশাপাশি এমন কিছু খাবার আছে যা পায়খানা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, সেগুলো এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও, পায়খানার রং, ঘ্রাণ ও পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে সমস্যার ধরন বোঝা যায়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে পাতলা পায়খানা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
পাতলা পায়খানা সাধারণত সংক্রমণজনিত হলেও খাদ্য অ্যালার্জি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণেও হতে পারে। তাই পুষ্টিকর এবং হজমযোগ্য খাদ্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসে কখনও কখনও এমন খাবার থাকে যা হজমে সমস্যা করে। এই ধরনের খাবার সম্বন্ধে সচেতন হওয়া এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
পাতলা পায়খানার ফলে দেহে ইলেক্ট্রোলাইট ক্ষয় হয়। তাই সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা জরুরি। পাশাপাশি কিছু খাবার আছে যা এই ক্ষয় আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ছোট শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানা দ্রুত বিপজ্জনক রূপ নেয়। এ কারণে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর একটি বড় কারণ হিসেবে ডায়রিয়ার উল্লেখ করা হয়। সতর্কতা ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস জরুরি।
অতএব, পাতলা পায়খানা কেবল অস্বস্তিকর নয়, এটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। সচেতনতা, পর্যাপ্ত পানি এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণ করলে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?

পাতলা পায়খানা হলে কিছু খাবার গ্রহণ এড়ানো উচিত, কারণ এগুলো হজমকে আরও জটিল করে বা পায়খানার মাত্রা বাড়ায়। এই ধরনের খাবার খেলে দেহের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ক্ষয় আরও দ্রুত হয়। বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
১.তেলযুক্ত ও ফাস্ট ফুড
পাতলা পায়খানার সময় তেলযুক্ত এবং ফাস্ট ফুড খাওয়া কঠোরভাবে এড়ানো উচিত। এই ধরনের খাবার হজম প্রক্রিয়াকে জটিল করে এবং অন্ত্রে অতিরিক্ত তরল স্রাব বাড়ায়। বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে প্রচলিত ভাজাভুজি, যেমন আলু ভাজি, প্যাকেট চপ, সমুচা, বিভিন্ন ধরনের ফাস্ট ফুড বা ফ্রায়ার থেকে আসা খাবার, পায়খানার সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ফাস্ট ফুড সাধারণত বেশি তেল, চর্বি ও প্রিজারভেটিভ যুক্ত থাকে, যা হজমে চাপ দেয়। পাতলা পায়খানার সময় পাকস্থলী ও অন্ত্র অতিরিক্ত সংবেদনশীল থাকে, তাই এই ধরনের ভারী খাবার খাওয়া ক্ষতিকর। উদাহরণস্বরূপ, পিজ্জা, বার্গার বা ভাজা চিকেনের চর্বি অন্ত্রকে অতিরিক্ত উত্তেজিত করে এবং দেহ থেকে পানি ও লবণ দ্রুত ক্ষয় করে।
এছাড়াও, ফাস্ট ফুডে থাকা উচ্চমাত্রার তেল ও প্রিজারভেটিভ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যকে নষ্ট করতে পারে। ফলস্বরূপ, পায়খানা দীর্ঘস্থায়ী বা আরও গুরুতর রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ তাদের দেহ দ্রুত ডিহাইড্রেশন সম্মুখীন হয়।
বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া ভাজাভুজি প্রায়শই খোলা বা অপরিষ্কৃত তেলে ভাজা হয়। এতে ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য সংক্রমণ থাকতে পারে, যা ডায়রিয়াকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, street food-এর তেলে পুনঃব্যবহার সাধারণ, যা অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
ফাস্ট ফুডের সাথে থাকা অতিরিক্ত লবণও সমস্যা তৈরি করে। লবণ শরীরের পানি ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে এবং পাতলা পায়খানার সময় দেহের ডিহাইড্রেশন দ্রুত বাড়ায়। এ কারণে ফাস্ট ফুড খাওয়া পুরোপুরি এড়ানো উচিত।
হজমের দিক থেকে দেখা যায়, তেলযুক্ত খাবার পাকস্থলীর আন্দোলন ধীর করে। এটি খাদ্যকে দীর্ঘ সময় অন্ত্রে ধরে রাখে এবং ডায়রিয়ার সময় অস্বস্তি বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের শোষণ কমে যায়, ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
পাতলা পায়খানার সময় ফাস্ট ফুডের বদলে হালকা খাবার খাওয়া উত্তম। উদাহরণস্বরূপ, ভাত, সেদ্ধ আলু, হালকা দই বা সুপ। এগুলো হজমে সহজ এবং শরীরের পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশের মানুষ প্রায়শই ব্যস্ত জীবনযাপনের কারণে ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুঁকে থাকে। তবে পায়খানার সময় এই অভ্যাস ক্ষতিকর। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে এবং পুনরায় সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তাই সচেতন খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ফাস্ট ফুডের তেল ও চর্বি অন্ত্রে গ্যাস, অম্বল বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। ডায়রিয়ার সময় এই সমস্যাগুলো আরও জটিল রূপ নেয়। এছাড়া, অতিরিক্ত তেলের কারণে দেহ থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট স্রাব হয়, যা পায়খানাকে দীর্ঘায়িত করে।
২.দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার
পাতলা পায়খানার সময় দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার খাওয়া সাধারণত নিরাপদ নয়। অনেকের ক্ষেত্রে দুধে থাকা ল্যাকটোজ হজম করতে সমস্যা তৈরি করে। ডায়রিয়ার সময় পাকস্থলী এবং অন্ত্র অতিরিক্ত সংবেদনশীল থাকে, তাই দুধ খেলে পায়খানা আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
দুধজাতীয় খাবারের মধ্যে দই, দুধ, চিজ, ছানা ইত্যাদি রয়েছে। যদিও দই হালকা এবং কিছু ক্ষেত্রে সহায়ক, তবে ফ্রেশ দুধ বা অতিরিক্ত চিজ এই অবস্থাকে খারাপ করতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় দুধ প্রায়শই অপরিষ্কৃত বা সঠিকভাবে ফিল্টার করা হয় না, যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়ায়।
পাতলা পায়খানার সময় দুধ খেলে অন্ত্রে অতিরিক্ত তরল বৃদ্ধি পায়। ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স থাকলে দুধ হজম হয় না, ফলে পায়খানা দীর্ঘায়িত হয় এবং অস্বস্তি বাড়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি দ্রুত ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করতে পারে।
চিজ বা ছানা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি। বাংলাদেশে অনেক সময় এগুলো সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম উপাদান বা রঙ ব্যবহার করা হয়, যা ডায়রিয়ার সময় অন্ত্রকে উত্তেজিত করে। ফলে পায়খানা নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়।
দুধজাতীয় খাবার কিছু মানুষের হজমে সহায়ক হলেও, পাতলা পায়খানার সময় এদের পরিমাণ খুব সীমিত হওয়া উচিত। হালকা দই বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
ডায়রিয়ার সময় দুধ ও দুধজাতীয় খাবার এড়ালে শরীরের পানি ও লবণের ক্ষয় কম থাকে। অতিরিক্ত দুধ খেলে পাকস্থলীতে গ্যাস, ফোলা বা পেট ব্যথা হতে পারে। এই কারণে বাংলাদেশে চিকিৎসকরা সাধারণত দুধ এড়ানোর পরামর্শ দেন।
শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশন এবং পুষ্টির ঘাটতি দ্রুত বাড়তে পারে। তাই তাদের জন্য হালকা, সহজ হজমযোগ্য খাবার বেছে নেওয়া উচিত।
দুধজাতীয় খাবার ছাড়াও, পাতলা পায়খানার সময় চকলেট, ক্রীম বা দুধযুক্ত মিষ্টি এড়ানো উত্তম। এগুলো অন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং পায়খানাকে দীর্ঘায়িত করে।
বাংলাদেশে দুধ প্রায়শই বাজার থেকে সরাসরি কেনা হয়, যেখানে ব্যাকটেরিয়া ও দূষণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ডায়রিয়ার সময় এমন দুধ খাওয়া বিপজ্জনক এবং পায়খানা আরও খারাপ করতে পারে।
ফলে, পাতলা পায়খানার সময় দুধ এবং দুধজাতীয় খাবার সীমিত বা এড়ানো উচিত। হালকা দই বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই নিরাপদ এবং সহায়ক হতে পারে, তবে অন্যান্য দুধজাতীয় খাবার ক্ষতিকর। স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসই দ্রুত সুস্থতার চাবিকাঠি।
৩.মশলাদার খাবার
পাতলা পায়খানার সময় মশলাদার খাবার খাওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাংলাদেশের রান্নায় ঝাল ও মশলার ব্যবহার প্রচলিত, যেমন লঙ্কা, মরিচ, গরম মশলা, ঝাল কারি বা মশলাদার তরকারি। এই ধরনের খাবার পাকস্থলী ও অন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং তরল স্রাব বৃদ্ধি করে, ফলে পায়খানা দীর্ঘায়িত হয়।
ডায়রিয়ার সময় অন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লি ইতিমধ্যেই সংবেদনশীল থাকে। অতিরিক্ত মশলা খেলে অন্ত্র উত্তেজিত হয়ে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয় এবং পাকস্থলীর অস্বস্তি, ফোলা ও ব্যথা দেখা দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও শহরে প্রচলিত ঝাল খাবার যেমন ঝাল মাছ, ঝাল সবজি বা ঝাল মাংস পায়খানাকে আরও তরল করতে পারে।
মশলাদার খাবারে থাকা কাঁচা মরিচ, লঙ্কার তিক্ততা এবং গরম মশলা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এতে অন্ত্রে প্রদাহ বৃদ্ধি পায়, যা ডায়রিয়ার মাত্রা ও সময় বাড়ায়। শিশু, বৃদ্ধ ও দুর্বল রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
ডায়রিয়ার সময় ঝাল খাবারের কারণে অন্ত্রের পানি শোষণ কমে যায়। ফলে দেহ থেকে ইলেক্ট্রোলাইটের ক্ষয় দ্রুত হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত হোম রান্নার ঝাল খাবার, যেমন মরিচযুক্ত ভর্তা বা ঝাল ডাল, এই অবস্থায় এড়ানো উত্তম।
মশলাদার খাবার খেলে পেট ফোলা, গ্যাস, অম্বল এবং ব্যথা হতে পারে। ডায়রিয়ার সময় এই সমস্যা আরও বাড়ে এবং সাধারণ মানুষকে শারীরিক অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। এছাড়া, পাকস্থলীতে অতিরিক্ত গরম মশলা শ্লেষ্মা ঝিল্লি উত্তেজিত করে, যা পায়খানার তরলতা বাড়ায়।
বাংলাদেশে বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য মশলাদার খাবার ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত লবণ ও তেলের সঙ্গে মশলা শরীরের পানি ক্ষয় করে, যা দ্রুত শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
ফলে, পাতলা পায়খানার সময় ঝাল ও মশলাদার খাবার সম্পূর্ণ এড়ানো উচিত। হালকা, কম মশলাযুক্ত এবং সহজ হজমযোগ্য খাবার খেলে অন্ত্রকে বিশ্রাম দেওয়া যায় এবং ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আসে।
ডায়রিয়ার সময় হালকা খাবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। এটি দেহের পানি ও লবণ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। মশলাদার খাবার খেলে এই ভারসাম্য আরও দ্রুত বিঘ্নিত হয়।
সারসংক্ষেপে, বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু ঝাল খাবারের অভ্যস্ত, তাই এই সময়ে বিশেষ সচেতন হতে হবে। মশলাদার খাবার খাওয়া পায়খানাকে দীর্ঘায়িত করে, হজমকে জটিল করে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
ডায়রিয়ার সময় হালকা ভাত, সেদ্ধ আলু, হালকা দই বা স্যুপ সবচেয়ে কার্যকর। এ ধরনের খাবার অন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়, হজম সহজ করে এবং পায়খানা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪.কাঁচা বা অপরিষ্কৃত সবজি
পাতলা পায়খানার সময় কাঁচা বা অপরিষ্কৃত সবজি খাওয়া এড়ানো উচিত। বাংলাদেশে বাজার থেকে প্রাপ্ত কিছু কাঁচা শাক-সবজি অপরিষ্কৃত বা যথাযথভাবে ধোয়া হয় না, ফলে এগুলিতে ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী বা হজম সমস্যাজনিত জীবাণু থাকতে পারে। এই ধরনের খাবার খেলে অন্ত্রে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় এবং পায়খানা আরও বাড়ে।
কাঁচা সবজিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ডায়রিয়ার সময় অন্ত্রের সংবেদনশীল ঝিল্লিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এটি দ্রুত ডিহাইড্রেশন এবং শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে বাজারে অপরিষ্কৃত শাকের ব্যবহার প্রচলিত, যা ডায়রিয়ার সময় বিপজ্জনক।
কাঁচা শাক-সবজি যেমন পালং, ধনিয়া, পুদিনা, লেটুস বা টমেটো যদি পরিষ্কারভাবে ধোয়া না হয়, তাতে লার্ভা, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য ক্ষতিকর জীবাণু থাকতে পারে। এগুলো খেলে অন্ত্রে প্রদাহ এবং তরল স্রাব বৃদ্ধি পায়।
পাতলা পায়খানার সময় কাঁচা সালাদ বা অপরিষ্কৃত সবজি খাওয়া হজমকে জটিল করে। পাকস্থলী ইতিমধ্যেই সংবেদনশীল থাকে, তাই এই ধরনের খাবার অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে এবং অস্বস্তি বাড়ায়।
বাংলাদেশে বর্ষাকালে কাঁচা সবজিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। বৃষ্টির পানি, নিকটবর্তী জলাশয় এবং অপরিষ্কৃত বাজারের পরিবেশ ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। এই সময় কাঁচা সবজি খাওয়া আরও ঝুঁকিপূর্ণ।
কাঁচা বা অপরিষ্কৃত সবজি খাওয়া পায়খানার সময় ডিহাইড্রেশন বাড়ায়। শরীর থেকে পানি এবং লবণের ক্ষয় দ্রুত হয়, যা শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক।
পাতলা পায়খানার সময় হালকা রান্না করা বা সেদ্ধ সবজি খাওয়াই উত্তম। এতে খাদ্য সহজে হজম হয়, অন্ত্রকে বিশ্রাম দেওয়া যায় এবং ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কাঁচা সবজির বদলে সেদ্ধ শাক, ভাপা সবজি বা হালকা রান্না করা তরকারি খেলে পুষ্টি পাওয়া যায় এবং হজম সহজ হয়। এটি অন্ত্রকে অতিরিক্ত উত্তেজিত না করে শরীরকে শক্তি যোগায়।
ডায়রিয়ার সময় কাঁচা সবজি খেলে অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস, ফোলা এবং ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যা বাড়ালে শরীরের দুর্বলতা এবং অস্বস্তি আরও তীব্র হয়।
ফলে, পাতলা পায়খানার সময় কাঁচা বা অপরিষ্কৃত সবজি সম্পূর্ণ এড়ানো উচিত। সঠিকভাবে ধোয়া এবং হালকা রান্না করা সবজি খেলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয় এবং ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সারসংক্ষেপে, বাংলাদেশে কাঁচা সবজি খাওয়ার অভ্যাস থাকলেও, ডায়রিয়ার সময় এটি ঝুঁকিপূর্ণ। হালকা, সহজ হজমযোগ্য এবং সেদ্ধ খাবার স্বাস্থ্যকর এবং দ্রুত সুস্থতা আনে।
৫.প্রক্রিয়াজাত খাবার
পাতলা পায়খানার সময় প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া উচিত নয়। প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেজড খাবারে প্রিজারভেটিভ, অতিরিক্ত চিনি, লবণ এবং রাসায়নিক সংযোজক থাকে, যা হজমকে জটিল করে এবং অন্ত্রে অতিরিক্ত তরল স্রাব বাড়ায়। বাংলাদেশের বাজারে সহজলভ্য ক্যানড ফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, চিপস বা instant noodles-এর মতো খাবার এই সময়ে ক্ষতিকর।
প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা কৃত্রিম রঙ এবং স্বাদ সংযোজক অন্ত্রকে উত্তেজিত করে। ডায়রিয়ার সময় এটি পায়খানাকে দীর্ঘায়িত করতে পারে এবং পাকস্থলীতে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং দুর্বল রোগীদের জন্য এটি বিপজ্জনক।
ডায়রিয়ার সময় প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে দেহ থেকে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ক্ষয় দ্রুত হয়। এতে ডিহাইড্রেশন বৃদ্ধি পায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাবারের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা দরকার।
প্রক্রিয়াজাত খাবার সহজে হজম হয় না। অতিরিক্ত চর্বি, লবণ এবং রাসায়নিক সংযোজক অন্ত্রের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে পায়খানা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয় এবং শরীরের পুষ্টি শোষণও কমে যায়।
বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া কিছু instant noodles, ক্যানড খাবার বা প্যাকেটজাত স্ন্যাকস ডায়রিয়ার সময় ক্ষতিকর। এগুলো পাকস্থলীতে চাপ সৃষ্টি করে এবং অতিরিক্ত তরল স্রাব বাড়ায়। ফলে ডায়রিয়ার সময় অস্বস্তি ও শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে থাকা অতিরিক্ত চিনি এবং লবণ শরীরের পানি ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে। ডায়রিয়ার সময় এটি শরীরকে দ্রুত দুর্বল করে এবং পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
পাতলা পায়খানার সময় প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে হালকা ভাত, সেদ্ধ আলু, হালকা দই বা স্যুপ খাওয়া উচিত। এই ধরনের খাবার অন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়, হজম সহজ করে এবং ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস, ফোলা এবং ব্যথা হতে পারে। ডায়রিয়ার সময় এই সমস্যা আরও বাড়ে, ফলে শরীরের দুর্বলতা এবং অস্বস্তি তীব্র হয়।
সারসংক্ষেপে, পাতলা পায়খানার সময় প্রক্রিয়াজাত খাবার সম্পূর্ণ এড়ানো উচিত। হালকা, সহজ হজমযোগ্য এবং প্রাকৃতিক খাবার দ্রুত সুস্থতা আনে এবং অন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে। বাংলাদেশে সচেতন খাদ্যাভ্যাসই মূল চাবিকাঠি।
৬.অতিরিক্ত চিনি
পাতলা পায়খানার সময় অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি খাবার খাওয়া ক্ষতিকর। কেক, পেস্ট্রি, সফট ড্রিঙ্ক, মিষ্টি বা চিনিযুক্ত প্যাকেটজাত খাবার অন্ত্রে তরল স্রাব বাড়াতে পারে। ডায়রিয়ার সময় পাকস্থলী এবং অন্ত্র ইতিমধ্যেই সংবেদনশীল থাকে, তাই অতিরিক্ত চিনি খেলে পায়খানা দীর্ঘায়িত হয়।
বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে মিষ্টি খাবারের অভ্যাস বেশি। ডায়রিয়ার সময় অতিরিক্ত চিনি খাওয়া তাদের শরীর থেকে পানি ও লবণের দ্রুত ক্ষয় ঘটায়। এটি ডিহাইড্রেশন বাড়ায় এবং শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি করে।
চিনি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়া চিনি ব্যবহার করে অতিরিক্ত গ্যাস ও তরল তৈরি করে, যা পায়খানাকে আরও তরল এবং নিয়ন্ত্রণহীন করে তোলে। সফট ড্রিঙ্ক বা চিনিযুক্ত জুস এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
ডায়রিয়ার সময় মিষ্টি খাবার খেলে পাকস্থলীর চাপ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত চিনি হজমকে ধীর করে এবং অন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে উত্তেজিত করে। ফলে পায়খানার সময় অস্বস্তি এবং ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশে প্রচলিত মিষ্টি যেমন রসমালাই, চমচম বা কেকও ডায়রিয়ার সময় ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলোতে চিনি, দুধ এবং প্রিজারভেটিভ থাকে, যা পায়খানাকে দীর্ঘায়িত করে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত চিনি খেলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে হজমের সমস্যা এবং পুষ্টি শোষণে বাধা সৃষ্টি হয়। ডায়রিয়ার সময় শরীরের শক্তি দ্রুত কমে যায়, যা দুর্বলতা ও ক্লান্তি বৃদ্ধি করে।
শিশু, বৃদ্ধ এবং দুর্বল রোগীদের জন্য অতিরিক্ত চিনি সবচেয়ে ক্ষতিকর। তাদের দেহে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ক্ষয় দ্রুত হয়, ফলে ডিহাইড্রেশন এবং পুষ্টির ঘাটতি তীব্র হয়ে ওঠে।
পাতলা পায়খানার সময় অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার বদলে হালকা খাবার, যেমন ভাত, সেদ্ধ আলু, হালকা দই বা স্যুপ গ্রহণ করা উচিত। এগুলো সহজ হজমযোগ্য এবং শরীরকে শক্তি যোগায়।
ডায়রিয়ার সময় চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার অন্ত্রকে উত্তেজিত করে, তরল পায়খানা বৃদ্ধি করে এবং ডিহাইড্রেশন বাড়ায়। তাই এই সময়ে এগুলো সম্পূর্ণ এড়ানো উত্তম।
সারসংক্ষেপে, পাতলা পায়খানার সময় অতিরিক্ত চিনি এবং মিষ্টি খাবার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। হালকা, সহজ হজমযোগ্য এবং প্রাকৃতিক খাবার খেলে দ্রুত সুস্থতা আসে এবং অন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৭.কফি এবং চা
পাতলা পায়খানার সময় কফি এবং চা খাওয়া এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোতে থাকা ক্যাফিন শরীরের ডিহাইড্রেশন বাড়ায় এবং অন্ত্রকে উত্তেজিত করে। ডায়রিয়ার সময় পাকস্থলী এবং অন্ত্র ইতিমধ্যেই সংবেদনশীল থাকে, তাই কফি বা অতিরিক্ত চা খেলে পায়খানা আরও তরল এবং নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়।
বাংলাদেশে চা একটি দৈনন্দিন পানীয় হিসেবে প্রচলিত। অনেকেই ডায়রিয়ার সময়ও চা পান করতে পারে, তবে এটি ক্ষতিকর। চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাফিন অম্লীয়তা বাড়ায়, যা অন্ত্রে ব্যথা, অম্বল ও গ্যাস সৃষ্টি করে। কফি-প্রেমীদের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
ডায়রিয়ার সময় কফি বা চা খেলে দেহ থেকে পানি দ্রুত ক্ষয় হয়। এই সময় শরীর ইতিমধ্যেই ডিহাইড্রেশনের সম্মুখীন, তাই অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ। শিশু, বৃদ্ধ এবং দুর্বল রোগীদের জন্য এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কফি এবং চায়ের অতিরিক্ত ব্যবহার হজমকে ধীর করে। অন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা ডায়রিয়ার সময় পায়খানাকে দীর্ঘায়িত করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত মিষ্টি চা বা দুধ চা হজমকে আরও জটিল করতে পারে।
চায়ে থাকা তেতো স্বাদ এবং কফির গরম প্রভাব অন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে উত্তেজিত করে। ফলে পায়খানা এবং অস্বস্তি বৃদ্ধি পায়। ডায়রিয়ার সময় অতিরিক্ত গরম বা চিনি যুক্ত চা খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
বাংলাদেশে প্রচলিত কফি শপের কফি বা instant coffee-তে কৃত্রিম সংযোজক এবং অতিরিক্ত চিনি থাকে, যা ডায়রিয়ার সময় ক্ষতিকর। এটি অন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং পায়খানার সময় বাড়ায়।
পাতলা পায়খানার সময় পানি, ওআরএস বা হালকা স্যুপ পান করা উচিত। কফি বা চা খেলে পানি শোষণ কমে যায়, যা ডিহাইড্রেশন বাড়ায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য কফি বা চা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের দেহে ইলেক্ট্রোলাইটের ক্ষয় দ্রুত হয়, ফলে ডিহাইড্রেশন এবং ক্লান্তি বৃদ্ধি পায়।
৮.সফট ড্রিঙ্ক ও কার্বনেটেড পানীয়
পাতলা পায়খানার সময় সফট ড্রিঙ্ক ও কার্বনেটেড পানীয় খাওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলোতে চিনি এবং কার্বনেশন থাকে, যা অন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং পায়খানাকে আরও তরল করে তোলে। বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত সোডা, এনার্জি ড্রিঙ্ক ও প্যাকেটজাত জুস ডায়রিয়ার সময় ঝুঁকিপূর্ণ।
কার্বনেটেড পানীয় পান করলে অন্ত্রে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি হয়। ডায়রিয়ার সময় এটি ফোলা, অম্বল এবং পেটের ব্যথা বাড়ায়। অনেক সময় শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি আরও অস্বস্তিকর এবং বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
সফট ড্রিঙ্কে থাকা অতিরিক্ত চিনি শরীরের পানি শোষণ কমিয়ে দেয়। ফলে ডিহাইড্রেশন দ্রুত হয় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে সোডার ব্যবহার বেশি, তাই তাদের সতর্ক থাকা জরুরি।
ডায়রিয়ার সময় কার্বনেটেড পানীয় অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে। এতে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয় এবং পায়খানার সময় বৃদ্ধি পায়। অনিয়মিত পায়খানা ও অস্বস্তি দীর্ঘায়িত হয়।
ফলে, পাতলা পায়খানার সময় সোডা, এনার্জি ড্রিঙ্ক বা প্যাকেটজাত জুস খাওয়া উচিত নয়। হালকা পানি, ওআরএস বা হালকা স্যুপ পান করা নিরাপদ এবং দ্রুত সুস্থতার দিকে নিয়ে যায়।
সফট ড্রিঙ্কে থাকা ফিজ বা কার্বনেশন অন্ত্রকে উত্তেজিত করে, যা তরল পায়খানা বাড়ায়। বাংলাদেশের পরিবেশে ডিহাইড্রেশন একটি বড় সমস্যা, তাই এই সময়ে কার্বনেটেড পানীয় সম্পূর্ণ এড়ানো উচিত।
শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য সোডা বা কার্বনেটেড পানীয় আরও ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের দেহ থেকে পানি ও লবণ দ্রুত ক্ষয় হয়, ফলে ডিহাইড্রেশন, ক্লান্তি ও দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
সফট ড্রিঙ্কের পরিবর্তে হালকা লবণ সমৃদ্ধ পানি বা ফ্রেশ ওয়ার্টার খাওয়া উচিত। এটি দেহকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখে।
ডায়রিয়ার সময় কার্বনেটেড পানীয় খেলে অন্ত্রের অস্বস্তি, পেট ব্যথা এবং অম্বল বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের দুর্বলতা এবং হজমের সমস্যা তীব্র হয়।
সারসংক্ষেপে, পাতলা পায়খানার সময় সফট ড্রিঙ্ক ও কার্বনেটেড পানীয় এড়ানো অত্যন্ত জরুরি। হালকা, সহজ হজমযোগ্য এবং পানি ও লবণ সমৃদ্ধ খাবার দ্রুত সুস্থতা আনে এবং অন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখে।
৯.ফল যা হজম কঠিন করে
পাতলা পায়খানার সময় কিছু ফল খাওয়া এড়ানো উচিত, কারণ এগুলো হজমকে কঠিন বা অন্ত্রে অতিরিক্ত তরল সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে অপরিপক্ব, অতিরিক্ত রসালো বা তিক্ত ফলের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রচলিত ফল যেমন কলা, আপেল, পেঁপে, আঙুর বা লিচু ডায়রিয়ার সময় সতর্কতার সঙ্গে খাওয়া উচিত।
ফল সাধারণত পুষ্টিকর হলেও, পাতলা পায়খানার সময় কিছু ফল অন্ত্রে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে না। ফলে ডিহাইড্রেশন বাড়ে এবং পায়খানার সমস্যা দীর্ঘায়িত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অপরিপক্ব পেঁপে বা আঙুরে থাকা প্রাকৃতিক চিনি অন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং তরল স্রাব বাড়ায়।
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আপেল বা লিচুর মতো ফল হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশের বাজারে অনেক সময় এসব ফল অপরিষ্কৃত বা অতিপক্ব অবস্থায় পাওয়া যায়, যা ডায়রিয়ার সময় ক্ষতিকর। এগুলো খেলে অন্ত্রে অস্বস্তি, ফোলা এবং গ্যাস বৃদ্ধি পায়।
ডায়রিয়ার সময় কলা নিরাপদ এবং সহায়ক, কারণ এতে পটাশিয়াম আছে যা শরীরের লবণ ও পানি ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে অন্যান্য রসালো বা হজম কঠিন ফল সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
ফলের অতিরিক্ত রস এবং তিক্ত স্বাদ অন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লি উত্তেজিত করে। ডায়রিয়ার সময় এটি পায়খানাকে আরও তরল এবং নিয়ন্ত্রণহীন করে। শিশু, বৃদ্ধ এবং দুর্বল রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
বাংলাদেশে বর্ষাকালে বা গরম পরিবেশে কিছু ফল দ্রুত পচে যায়। এমন পচা বা অপরিপক্ব ফল খেলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে এবং পায়খানা আরও বাড়ায়।
পাতলা পায়খানার সময় রসালো ফল খাওয়ার বদলে হালকা, সহজ হজমযোগ্য খাবার বেছে নেওয়া উত্তম। যেমন সেদ্ধ আলু, ভাত, হালকা দই বা সুপ। এগুলো অন্ত্রকে বিশ্রাম দেয় এবং ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ফলে, পাতলা পায়খানার সময় সব ফল নিরাপদ নয়। কিছু ফল হজম কঠিন করে, ডায়রিয়ার সময় অস্বস্তি ও ডিহাইড্রেশন বাড়ায়। সতর্কতার সঙ্গে এবং সীমিত পরিমাণে ফল খাওয়া উচিত।
সারসংক্ষেপে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য ডায়রিয়ার সময় হালকা, সহজ হজমযোগ্য এবং পানি ও লবণ সমৃদ্ধ খাবারই সবচেয়ে কার্যকর। ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে পুষ্টি বজায় রাখার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়?

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হালকা, সহজ হজমযোগ্য এবং পানি ও লবণ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভাত, সেদ্ধ আলু, হালকা দই, সুপ বা হালকা তরকারি এই সময়ে সবচেয়ে উপযুক্ত। এগুলো অন্ত্রকে বিশ্রাম দেয় এবং অতিরিক্ত তরল স্রাব কমায়।
ভাত এবং সেদ্ধ আলু সহজে হজম হয় এবং পাকস্থলীর চাপ কমায়। এগুলো পায়খানার সময় শরীরের শক্তি এবং পুষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করে। তেলের ব্যবহার কমানো এবং সহজভাবে রান্না করা ভাত বা আলু দ্রুত পায়খানা নিয়ন্ত্রণে আনে।
হালকা দই বা প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলে সেদ্ধ দই সহজলভ্য, যা ডায়রিয়ার সময় অন্ত্রকে স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ফিরিয়ে আনে।
হালকা স্যুপ বা তরকারি পানি ও লবণ সমৃদ্ধ থাকে। এগুলো দেহের ডিহাইড্রেশন কমায় এবং শরীরকে শক্তি যোগায়। ডায়রিয়ার সময় তরল গ্রহণের পাশাপাশি হালকা খাবার খাওয়া খুবই কার্যকর।
পাতলা পায়খানার সময় ওরস (ORS) পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেহে পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে। হালকা খাবারের সঙ্গে ORS খেলে পায়খানা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ হয়।
শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য হালকা ভাত, সেদ্ধ আলু, দই এবং ORS সবচেয়ে নিরাপদ। এগুলো সহজে হজম হয় এবং শরীরকে শক্তি যোগায়। অতিরিক্ত ঝাল, তেল, চিনি বা কার্বনেটেড পানীয় এড়ানো উচিত।
ডায়রিয়ার সময় হালকা খাবার খেলে পাকস্থলী ও অন্ত্রের চাপ কমে যায়। এতে অন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে এবং পায়খানা নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের পরামর্শেও হালকা খাবারের গুরুত্ব প্রচারিত।
পাতলা পায়খানার সময় প্রচুর পানি খাওয়াও জরুরি। জল, লেবুর পানি, হালকা স্যুপ বা ORS শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। পানি এবং হালকা খাবারের সংমিশ্রণ দ্রুত সুস্থতা আনে।
শিশু, বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য এই সময়ে হালকা, সহজ হজমযোগ্য এবং লবণ-সমৃদ্ধ খাবারই সবচেয়ে কার্যকর। এগুলো পায়খানাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরকে দুর্বল হওয়া থেকে রক্ষা করে।
ফলে, পাতলা পায়খানা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হালকা ভাত, সেদ্ধ আলু, হালকা দই, স্যুপ, তরকারি এবং পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ অপরিহার্য। এগুলো অন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়, ডিহাইড্রেশন কমায় এবং শরীরকে শক্তি যোগায়।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না?এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
পাতলা পায়খানার সময় কোন খাবারগুলো সম্পূর্ণ এড়ানো উচিত?
পাতলা পায়খানার সময় তেলযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, মশলাদার খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি, কফি, চা, কার্বনেটেড পানীয় এবং অপরিষ্কৃত কাঁচা সবজি এড়ানো উচিত। এগুলো অন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং পায়খানা দীর্ঘায়িত করে।
পাতলা পায়খানা হলে কি খেলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়?
হালকা ভাত, সেদ্ধ আলু, হালকা দই, স্যুপ, তরকারি এবং পর্যাপ্ত পানি ও ORS খেলে পায়খানা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে। এগুলো অন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়, ডিহাইড্রেশন কমায় এবং শরীরকে শক্তি যোগায়।
উপসংহার
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা প্রতিটি মানুষের জীবনে কখনো না কখনো দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জলবায়ু, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের কারণে এটি আরও সাধারণ। এই সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের ব্যবস্থা অপরিহার্য।
ডায়রিয়ার সময় তেলযুক্ত, ফাস্ট ফুড, মশলাদার খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি, কফি, চা, কার্বনেটেড পানীয় এবং অপরিষ্কৃত কাঁচা সবজি এড়ানো উচিত। এগুলো অন্ত্রকে উত্তেজিত করে, হজমকে জটিল করে এবং পায়খানা দীর্ঘায়িত করে।
বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে বাজারে পাওয়া কিছু খাবারের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া বা সংক্রমণ থাকায় সতর্ক থাকা জরুরি। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং দুর্বল রোগীদের জন্য এই খাবার ক্ষতিকর। তাই এই সময়ে হালকা, সহজ হজমযোগ্য এবং প্রাকৃতিক খাবার বেছে নেওয়া উত্তম।
হালকা ভাত, সেদ্ধ আলু, হালকা দই, স্যুপ, তরকারি এবং পর্যাপ্ত পানি ও ORS গ্রহণ করলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়। এগুলো অন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়, ডিহাইড্রেশন কমায় এবং পুষ্টি বজায় রাখে।
পাতলা পায়খানার সময় খাদ্যবিধি বজায় রাখা যেমন জরুরি, তেমনই হাত ধোয়া, পরিচ্ছন্ন পানি ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভ্যাসও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এই বিষয়গুলো সচেতনভাবে পালন করলে ডায়রিয়ার ঝুঁকি কমে।
ফলে, পায়খানা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব। হালকা ও সহজ হজমযোগ্য খাবার, পর্যাপ্ত পানি, ORS এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসই মূল চাবিকাঠি।
সারসংক্ষেপে, পাতলা পায়খানার সময় খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি সচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা মেনে চলাই দ্রুত সুস্থতার মূল। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
