Sore throat1

গলা ব্যথা হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত?

গলা ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখা যায় গলা শুকনো লাগছে, ঢোক গিলতে কষ্ট হচ্ছে বা হালকা জ্বালাপোড়া অনুভূত হচ্ছে। কখনও কখনও এই ব্যথা সামান্য ঠান্ডা-জ্বর বা ধুলোবালির সংস্পর্শে এলে শুরু হয়, আবার অনেক সময় ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকেও হতে পারে। গলার ভিতরে প্রদাহ, লালচে ভাব, বা ফুলে যাওয়া টনসিল এর কারণেও গলা ব্যথা দেখা দিতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া পরিবর্তনশীল হওয়ায় এখানে গলা ব্যথা একটি সাধারণ ঋতুজনিত অসুস্থতা হিসেবে দেখা যায়। বর্ষাকাল কিংবা শীতকালে ঠান্ডা বাতাসে গলা সহজেই সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। এমনকি রাস্তার ধুলাবালি, ধোঁয়া, ধূমপান, কিংবা অতিরিক্ত গরম ও মশলাযুক্ত খাবারও গলার কোষকে উত্তেজিত করে ব্যথার কারণ হতে পারে।

অনেকেই প্রথমে এই ব্যথাকে তেমন গুরুত্ব দেন না, কিন্তু অবহেলা করলে এটি টনসিলাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস বা এমনকি গলা পুঁজ হওয়া পর্যন্ত গড়াতে পারে। তাই শুরুতেই সঠিক কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ঔষধ বা ঘরোয়া চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

গলা ব্যথা শুধু শারীরিক অস্বস্তিই নয়, এটি কথা বলা, খাওয়া, এমনকি ঘুমের ওপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে শিক্ষক, সেলসম্যান বা যারা বেশি কথা বলেন, তাদের জন্য এটি এক বড় সমস্যা।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি কিছু প্রাথমিক প্রতিকার ঘরে বসেই করা যায়—যেমন লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা, পর্যাপ্ত পানি পান, ধোঁয়া-ধুলা এড়ানো, এবং নরম খাবার খাওয়া।

এই লেখায় আমরা বিস্তারিতভাবে জানব—গলা ব্যথার ঔষধ কী কী, গলা ব্যথা হলে কী খাওয়া উচিত, এবং ঢোক গিলতে কষ্ট হলে কীভাবে আরাম পাওয়া যায়। পাশাপাশি ঘরোয়া চিকিৎসা ও ফার্মেসিতে সহজলভ্য কিছু কার্যকর ওষুধ সম্পর্কেও জানব, যাতে আপনি দ্রুত উপশম পেতে পারেন।

গলা ব্যথার ঔষধ?

Sore throat2

গলা ব্যথা হলে অনেকেই প্রথমে ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করেন, কিন্তু যখন ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, তখন ঔষধ নেওয়া প্রয়োজন হয়। গলা ব্যথার কারণ অনুযায়ী ঔষধও ভিন্ন হতে পারে—কখনও ভাইরাস, কখনও ব্যাকটেরিয়া, আবার কখনও অ্যালার্জি বা অতিরিক্ত গরম-ঠান্ডা খাবার এর পেছনে দায়ী থাকে। তাই সঠিক ওষুধ বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে ফার্মেসিতে সহজলভ্য কিছু সাধারণ গলা ব্যথার ওষুধ পাওয়া যায়, যা চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়া নিরাপদ। যেমন—লোজেঞ্জ (Lozenge), অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, পেইন রিলিভার, অ্যান্টিহিস্টামিন, এবং গার্গল সলিউশন। এগুলো গলার প্রদাহ কমাতে, সংক্রমণ দূর করতে এবং ব্যথা উপশমে সহায়তা করে।

লোজেঞ্জ হলো এমন একটি ট্যাবলেট যা মুখে রেখে ধীরে ধীরে গলে যায়। এতে সাধারণত মেনথল, ইউক্যালিপটাস, বা অ্যান্টিসেপটিক উপাদান থাকে যা গলার জ্বালা প্রশমিত করে। যেমন – Strepsils, Vicks, বা Strepsils Extra বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়।

যদি গলার ব্যথা ব্যাকটেরিয়াজনিত হয়, যেমন টনসিল ইনফেকশন, তখন অ্যান্টিবায়োটিক যেমন Amoxicillin, Azithromycin, বা Cefixime চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে প্রেসক্রাইব করতেপারেন।

তবে কখনোই নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা উচিত নয়, কারণ এটি শরীরের প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

গলার ব্যথার সাথে যদি জ্বর, মাথাব্যথা বা শরীর ব্যথা থাকে, তাহলে Paracetamol বা Napa Extra খাওয়া যেতে পারে। এটি ব্যথা কমানোর পাশাপাশি জ্বরও নিয়ন্ত্রণ করে।

যাদের গলার ব্যথা অ্যালার্জির কারণে হয়, তাদের জন্য Antihistamine ওষুধ যেমন Cetirizine বা Fexofenadine বেশ কার্যকর। এগুলো গলার চুলকানি ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও গার্গল সলিউশন যেমন Betadine Gargle বা লবণ মেশানো গরম পানি দিয়ে গার্গল করাও খুব কার্যকর। এটি গলার জীবাণু ধ্বংস করে এবং দ্রুত আরাম দেয়।

অন্যদিকে, শিশু বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডাক্তার প্রায়ই সিরাপ ফর্মে ওষুধ দেন, যেমন Tussin, Benylin, বা Dequadin Syrup। এগুলো গলার প্রদাহ কমাতে এবং শুষ্ক কাশি উপশমে সহায়ক।

মনে রাখা দরকার—গলা ব্যথা অনেক সময় ভাইরাল কারণে হয়, যা সাধারণত ৫-৭ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তাই তাড়াহুড়ো করে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা উচিত নয়।

প্রয়োজনে ডাক্তার গলার পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝে নেন এটি ভাইরাল না ব্যাকটেরিয়াজনিত। সেই অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।

গলার ব্যথা শুধু ওষুধে নয়, বরং সঠিক যত্নেও দ্রুত সেরে ওঠে। পর্যাপ্ত পানি পান, গরম স্যুপ খাওয়া, এবং ধোঁয়া-ধুলা থেকে দূরে থাকা গলার আরাম ফিরিয়ে আনে।

গলা ব্যথা হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত?

Sore throat3

গলা ব্যথা হলে অনেকেই বিভ্রান্ত হন কোন ওষুধটা খাওয়া ঠিক হবে। কারণ গলার ব্যথা কখনও হালকা সর্দি-জ্বরের কারণে হয়, আবার কখনও টনসিল বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলেও হতে পারে। তাই প্রথমে জানতে হবে, ব্যথার ধরন কী। যদি ব্যথার সাথে জ্বর, ফোলাভাব বা ঢোক গিলতে কষ্ট থাকে, তবে সঠিক ওষুধ নেওয়া জরুরি।
গলার ব্যথা দ্রুত সারাতে কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ বেশ কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, যা চিকিৎসকরা সাধারণত প্রেসক্রাইব করে থাকেন। নিচে ধাপে ধাপে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের ধরন ও তাদের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. প্যারাসিটামল (Paracetamol)

গলার ব্যথা কমানোর জন্য সবচেয়ে সাধারণ ও নিরাপদ ওষুধগুলোর মধ্যে প্যারাসিটামল অন্যতম। এটি একটি ব্যথানাশক (pain reliever) এবং জ্বরনাশক (fever reducer) ওষুধ, যা শরীরের ব্যথা, জ্বর এবং প্রদাহজনিত অস্বস্তি কমাতে সহায়তা করে। যখন গলার সংক্রমণ বা ঠান্ডা-জ্বরের কারণে ব্যথা শুরু হয়, তখন প্যারাসিটামল দ্রুত কাজ করে গলার ব্যথা উপশম করে।

বাংলাদেশে প্যারাসিটামল খুব সহজে পাওয়া যায় এবং প্রায় প্রতিটি ফার্মেসিতেই এটি মজুত থাকে। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে Napa, Ace, Parapyrol, Renova, ও Maxmol বেশ প্রচলিত। এসব ব্র্যান্ড একই মৌলিক উপাদান ব্যবহার করে, শুধু উৎপাদক ও ডোজে সামান্য পার্থক্য থাকে।

সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০০mg থেকে ১g পর্যন্ত ডোজ ব্যবহার করা হয়। দিনে ৩ থেকে ৪ বার, অর্থাৎ প্রায় প্রতি ৬ ঘণ্টা অন্তর খাওয়া যেতে পারে। তবে দিনে মোট ডোজ ৪g-এর বেশি যেন না হয়, তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ডোজ তাদের ওজন অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হয়, তাই শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ (যেমন Napa syrup বা Ace paediatric drops) ব্যবহার করা উত্তম।

প্যারাসিটামল খাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করে না, যেমন অনেক ব্যথানাশক ওষুধ করে। তাই যাদের পেট সংবেদনশীল বা আলসারের সমস্যা আছে, তারাও নিরাপদে এটি খেতে পারেন। এটি খাওয়ার সময় খাবারের পর বা হালকা কিছু খেয়ে নেওয়া ভালো, যাতে ওষুধ দ্রুত কাজ করতে পারে।

গলার ব্যথার সাথে যদি মাথাব্যথা, জ্বর, বা শরীর ব্যথা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল একইসাথে সব উপসর্গে আরাম দেয়। এটি শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে এবং প্রদাহজনিত কোষগুলোর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে গলার ভিতরের ফোলাভাব ধীরে ধীরে কমে আসে।

যাদের ঠান্ডা বা ফ্লু রয়েছে, তারা চাইলে Napa Extend বা Napa Extra নিতে পারেন, যেখানে ক্যাফেইন মিশ্রিত থাকে। এটি শরীরের দুর্বলতা কমায় এবং দ্রুত আরাম দেয়। তবে, এসব ওষুধের ডোজ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হওয়া উচিত।

আরোও পড়ুনঃ  দাঁতের আয়রনের দাগ দূর করার উপায় সমূহ

যদি গলার ব্যথা ভাইরাল কারণে হয় (যেমন ঠান্ডা-জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা), সেক্ষেত্রে প্যারাসিটামলই সবচেয়ে উপযুক্ত বিকল্প। এটি ভাইরাস মারে না, কিন্তু ভাইরাসজনিত প্রদাহ ও ব্যথা কমিয়ে শরীরকে আরাম দেয়, যাতে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নিজে থেকেই কাজ করতে পারে।

তবে এই ওষুধের অপব্যবহার একেবারেই করা যাবে না। অনেকেই সামান্য জ্বরেই অতিরিক্ত প্যারাসিটামল খেয়ে ফেলেন, যা লিভারের (যকৃতের) মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই দিনে ৪টির বেশি ট্যাবলেট কখনোই খাওয়া উচিত নয়।
এছাড়াও, যারা অ্যালকোহল পান করেন বা যাদের লিভারের সমস্যা আছে, তাদের প্যারাসিটামল গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

২. অ্যামক্সিসিলিন (Amoxicillin)

গলার ব্যথা যদি ভাইরাস নয় বরং ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকে হয়, তখন সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসার মধ্যে একটি হলো অ্যামক্সিসিলিন (Amoxicillin)। এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে সংক্রমণ বন্ধ করে দেয়। সাধারণত টনসিল ফুলে যাওয়া, পুঁজ জমে যাওয়া, বা গলার ভেতর লালচে প্রদাহ দেখা দিলে ডাক্তার এই ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন।

বাংলাদেশে এটি খুবই প্রচলিত এবং সহজলভ্য ওষুধ। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে Amoxil, Moxacil, Amoxicap, Amoxyn, এবং Amclav (যেখানে ক্ল্যাভুলানিক অ্যাসিড মিশ্রিত থাকে)। এসব ব্র্যান্ড বিভিন্ন ডোজে পাওয়া যায়—সাধারণত 250mg, 500mg ও 1g ক্যাপসুল আকারে।

অ্যামক্সিসিলিনের প্রধান কাজ হলো গলার ভেতরের সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর ভেঙে ফেলা, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া বেঁচে থাকতে পারে না। এটি শরীরে প্রবেশের ১–২ ঘণ্টার মধ্যেই কার্যকরভাবে কাজ শুরু করে।
ফলে গলার ব্যথা, ফোলাভাব, ও ঢোক গিলতে কষ্ট দ্রুত কমে আসে।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাধারণত দিনে ২ থেকে ৩ বার করে ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত খেতে হয়। কেউ কেউ একদিন খাওয়ার পর আরাম পেলে খাওয়া বন্ধ করে দেন — এটি মারাত্মক ভুল। কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস না হয়ে শরীরে থেকে যায়, ফলে পরবর্তীতে ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণ (antibiotic resistance) তৈরি হতে পারে।

অ্যামক্সিসিলিন খাওয়ার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। এটি খাওয়ার সময় পেট একেবারে খালি না রাখা ভালো — অল্প কিছু খাবার খেয়ে তারপর খেলে গ্যাস্ট্রিক বা অস্বস্তি কম হয়। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করলে ওষুধটি শরীরে ভালোভাবে কাজ করে।

যাদের গলার ব্যথার সাথে টনসিল ফুলে যায়, গলা লাল হয়ে যায়, বা ঘাড়ে লিম্ফ নোড ফোলা দেখা দেয়, তাদের জন্য এই ওষুধ সবচেয়ে উপযোগী।
তবে ভাইরাল সংক্রমণে (যেমন ঠান্ডা-জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা) অ্যামক্সিসিলিন কোনো কাজ করে না, কারণ ভাইরাসের উপর অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাব পড়ে না। তাই চিকিৎসক সাধারণত গলার থ্রোট সোয়াব টেস্ট বা উপসর্গ দেখে নির্ধারণ করেন এটি ব্যাকটেরিয়াজনিত কিনা।

৩. আজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin)

যদি গলার ব্যথা তীব্র হয়, সাথে টনসিল ফুলে যায়, ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, বা জ্বর লেগে থাকে, তাহলে চিকিৎসকেরা সাধারণত আজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin) প্রেসক্রাইব করেন। এটি একটি ম্যাক্রোলাইড শ্রেণির অ্যান্টিবায়োটিক, যা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ দ্রুত ধ্বংস করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

আজিথ্রোমাইসিনের জনপ্রিয়তা অনেক, কারণ এটি শরীরে দীর্ঘ সময় থাকে এবং দিনে মাত্র একবার খাওয়াই যথেষ্ট। অর্থাৎ, অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকের মতো দিনে বারবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
বাংলাদেশে সহজলভ্য ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে Zithromax, Azin, Amodis, Zimax, Azinol, এবং Azicin

এই ওষুধের মূল কাজ হলো গলার ভেতরের ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিন উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া। ফলে ব্যাকটেরিয়া আর বৃদ্ধি পায় না, ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে মারা যায়।
ফলস্বরূপ গলার প্রদাহ, ব্যথা, ফোলাভাব, এবং ঢোক গিলতে কষ্ট ধীরে ধীরে কমে যায়।

সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০০ মি.গ্রা. ডোজে প্রথম দিন খাওয়া হয়, এরপর পরের দুই দিন ২৫০ মি.গ্রা. করে খাওয়া যেতে পারে। অর্থাৎ ৩ দিনের কোর্সই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। তবে গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ডাক্তার ৫ দিন পর্যন্ত কোর্স দিতে পারেন।

আজিথ্রোমাইসিন খাওয়ার সময় খালি পেটে না খাওয়াই ভালো। খাবার খাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে বা খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে খেলে ওষুধটি শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়।
যদি কেউ খালি পেটে খান, তাহলে কখনও কখনও বমি ভাব, গ্যাস্ট্রিক বা পেট ব্যথা হতে পারে।

আজিথ্রোমাইসিনের অন্যতম সুবিধা হলো এটি অ্যামক্সিসিলিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য, বিশেষ করে যাদের পেনিসিলিনে অ্যালার্জি আছে। তাই অনেক ডাক্তার টনসিলাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস বা গলার প্রদাহে এটি প্রেসক্রাইব করেন।

তবে মনে রাখতে হবে—এটি কেবল ব্যাকটেরিয়াজনিত গলা ব্যথার ক্ষেত্রে কার্যকর, ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় এর কোনো প্রভাব নেই।
তাই নিজে থেকে ওষুধ শুরু না করে, ব্যথা যদি ২–৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়, তখন ডাক্তার দেখানো উচিত।

৪. স্ট্রেপসিলস বা গলার লজেঞ্জ (Lozenges)

গলা ব্যথা বা কণ্ঠে খসখসে অনুভূতি হলে অনেকেই প্রথমে যে সহজ সমাধান খোঁজেন তা হলো “স্ট্রেপসিলস” বা গলার লজেঞ্জ। এটি ছোট একটি ট্যাবলেটের মতো, যা মুখে রেখে ধীরে ধীরে গলানো হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও ধুলোবালির কারণে গলা শুকিয়ে যাওয়া, ঠান্ডা লাগা, বা সংক্রমণ থেকে গলা ব্যথা খুবই সাধারণ সমস্যা—এবং সেই ক্ষেত্রে লজেঞ্জ বেশ কার্যকর।

লজেঞ্জে সাধারণত এমন কিছু উপাদান থাকে যা গলার প্রদাহ কমায়, জীবাণু ধ্বংস করে এবং গলার ভেতরের শুষ্কতা দূর করে। স্ট্রেপসিলসের মতো ব্র্যান্ডে থাকে অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান যেমন dichlorobenzyl alcohol ও amylmetacresol, যা গলার ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া কিছু লজেঞ্জে থাকে মধু, লেবু, ইউক্যালিপটাস অয়েল, বা মেনথল—যা গলার ব্যথা কমিয়ে ঠান্ডা আরাম দেয়।

গলার লজেঞ্জ মূলত মুখের লালারস বৃদ্ধি করে, যা গলার শুষ্ক ভাব দূর করে এবং গলার ভেতরের কোষগুলোকে আর্দ্র রাখে। এতে ব্যথা ও জ্বালা কমে এবং কথা বলার সময় অস্বস্তিও হ্রাস পায়। যারা নিয়মিত কথা বলেন—যেমন শিক্ষক, উপস্থাপক বা গায়ক—তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।

লজেঞ্জ খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো এটি মুখে রেখে ধীরে ধীরে গলানো। চিবিয়ে বা দ্রুত গিলে ফেললে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। প্রতিদিন ২ থেকে ৩টি লজেঞ্জ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বড়দের তত্ত্বাবধান থাকা জরুরি, কারণ ছোটরা ভুলবশত গিলে ফেলতে পারে।

বাংলাদেশে স্ট্রেপসিলস ছাড়াও আরও কিছু জনপ্রিয় লজেঞ্জ রয়েছে—যেমন Halls, Vicks, Streps, Ricola ইত্যাদি। এগুলোর কিছু কফ বা গলা পরিষ্কার রাখতেও সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে হারবাল উপাদানযুক্ত লজেঞ্জ পাওয়া যায়, যা প্রাকৃতিকভাবে গলার প্রদাহ ও শ্বাসযন্ত্রের জ্বালাপোড়া কমায়।

তবে মনে রাখতে হবে, লজেঞ্জ শুধুমাত্র অস্থায়ী উপশম দেয়। যদি গলার ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, ঢোক গিলতে কষ্ট হয় বা জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে এটি কেবল সাময়িক স্বস্তি দেবে কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান করবে না। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

গলা ব্যথা থেকে দ্রুত আরাম পেতে লজেঞ্জের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করা ভালো—যেমন কুসুম গরম লবণপানি দিয়ে গার্গল করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, ধুলাবালি ও ঠান্ডা পানীয় পরিহার করা এবং গলার অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া।

আরোও পড়ুনঃ  আনারস খাওয়ার উপকারিতা সমূহ

৫. বেটাডিন গার্গল (Betadine Gargle)

গলা ব্যথা বা সংক্রমণের ক্ষেত্রে “বেটাডিন গার্গল” একটি অত্যন্ত কার্যকর ও বহুল ব্যবহৃত ওষুধ। এটি মূলত গলার জীবাণুনাশক তরল, যার মূল উপাদান হলো Povidone Iodine। এই উপাদানটি গলার ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ফাঙ্গাসসহ নানা ধরনের জীবাণু ধ্বংস করে সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা ঠান্ডা-জনিত গলা ব্যথা, টনসিলের প্রদাহ, বা গলার ফোলাভাবের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য বেটাডিন গার্গল অত্যন্ত উপকারী।

বেটাডিন গার্গল মূলত চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত, তবে সাধারণভাবে দিনে ২-৩ বার কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে গার্গল করা যায়। সাধারণত ১ চা চামচ (প্রায় ৫ মিলি) বেটাডিন ১/২ কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে গার্গল করা হয়। এটি সরাসরি গিলতে নয়—মুখ ও গলার ভেতর দিয়ে ৩০-৬০ সেকেন্ড ধরে গার্গল করে ফেলে দিতে হয়। এতে গলার ভেতরের জীবাণু ধ্বংস হয় এবং ব্যথা ও জ্বালা দ্রুত উপশম পায়।

এই গার্গল ব্যবহার করলে গলার প্রদাহ কমে, কণ্ঠ পরিষ্কার হয়, এবং গলা শুষ্ক ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অনেক সময় গলার ব্যথা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে কথা বলা বা গিলতে কষ্ট হয়—সে ক্ষেত্রে বেটাডিন গার্গল নিয়মিত ব্যবহার করলে ১-২ দিনের মধ্যেই আরাম পাওয়া যায়।

বেটাডিনের অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্য শুধু ভাইরাল নয়, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণেও কার্যকর। এজন্য চিকিৎসকরা অনেক সময় সর্দি-কাশি বা টনসিল ইনফেকশনের প্রাথমিক ধাপে এটি ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এটি গলার ভেতরের কোষকে জীবাণুমুক্ত রাখে, ফলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে না এবং রোগীর সুস্থতা দ্রুত ঘটে।

তবে, বেটাডিন গার্গল ব্যবহারের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। এটি গিলতে একদমই নয়, কারণ এতে থাকা আয়োডিন অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে গেলে থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী নারী, ছোট শিশু বা থাইরয়েড রোগীরা এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

৬. সেটিরিজিন (Cetirizine) বা অ্যান্টিহিস্টামিন

গলার ব্যথা অনেক সময় শুধুমাত্র সংক্রমণ বা ঠান্ডার কারণে হয় না; কখনও এটি অ্যালার্জি বা পরিবেশগত কারণেও হতে পারে। ধুলাবালি, ধোঁয়া, পরাগকণিকা, বা তীব্র ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে থাকলে গলার চুলকানি, ফোলাভাব এবং অস্বস্তি দেখা দেয়। এমন ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যথানাশক কার্যকর হয় না, বরং সেটিরিজিন (Cetirizine) বা অন্যান্য অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ সবচেয়ে উপকারী।

সেটিরিজিন হলো একটি দ্বিতীয় প্রজন্মের অ্যান্টিহিস্টামিন, যা শরীরে হিস্টামিনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। হিস্টামিন হলো একটি রাসায়নিক যা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার সময় মুক্ত হয় এবং গলার শুষ্কতা, জ্বালা, লালচে ভাব এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে। সেটিরিজিন গ্রহণের মাধ্যমে এই উপসর্গগুলো কমে যায়, ফলে গলা স্বস্তি পায় এবং ঢোক গিলতে সহজ হয়।

বাংলাদেশে এটি বিভিন্ন ব্র্যান্ডে পাওয়া যায়, যেমন Cetzine, Zetol, Cetrazine, Histacine, Fenaclear। সাধারণত এটি দিনে একবার খাওয়া হয়, এবং প্রাপ্তবয়স্করা ১০ মিলিগ্রাম করে নিতে পারেন। শিশুদের জন্য ডোজ আলাদা, যা ওজন ও বয়স অনুযায়ী চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন।

সেটিরিজিনের অন্যতম সুবিধা হলো এটি কম ঘুম টানায়। অনেক অ্যান্টিহিস্টামিন, বিশেষ করে প্রথম প্রজন্মের, খাওয়ার পরে ঘুম আসে, কিন্তু সেটিরিজিন তুলনামূলকভাবে সক্রিয় থাকে। তাই যারা দিনের বেলা কাজ বা স্কুলে থাকেন, তাদের জন্য এটি ব্যবহারযোগ্য।

অ্যালার্জি-জনিত গলা ব্যথার ক্ষেত্রে এটি খুব দ্রুত আরাম দেয়। গলার ভেতরের লালচে ভাব, চুলকানি এবং ফোলা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এছাড়া এটি নাকের প্রবাহ বা হাঁচি কমাতে সাহায্য করে, যা অনেক সময় গলার ব্যথার সঙ্গে যুক্ত থাকে।

তবে মনে রাখতে হবে, এটি মূলত অ্যালার্জি উপশমের জন্য কার্যকর। যদি গলার ব্যথা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, সেটিরিজিন তা দূর করতে পারে না। তাই সঠিকভাবে সমস্যার ধরন চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

৭. পেইন রিলিভার সিরাপ (Pain Relief Syrup)

গলার ব্যথা শুধু বড়দের জন্য নয়, ছোট শিশুদের জন্যও অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশু বা যাদের ট্যাবলেট খাওয়া কঠিন, তাদের জন্য পেইন রিলিভার সিরাপ (Pain Relief Syrup) অত্যন্ত কার্যকর ওষুধ। এটি গলার ব্যথা, জ্বর, কাশি এবং গলার অস্বস্তি কমাতে সহায়তা করে এবং প্রায়শই শিশুদের জন্য নিরাপদ ফর্মুলায় পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে বাজারে অনেক ধরনের সিরাপ পাওয়া যায়—যেমন Tussin, Benylin, Sinecod, Dequadin Syrup। এই সিরাপগুলোতে থাকে ব্যথা উপশমকারী উপাদান, অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান এবং কখনও কখনও শ্বাসনালীর শুষ্কতা দূর করার উপাদান। ফলে গলার জ্বালা কমে, কণ্ঠ স্বাভাবিক থাকে এবং শিশু সহজে ঘুমাতে পারে।

সিরাপটি সাধারণত বাচ্চাদের ওজন এবং বয়স অনুযায়ী ডোজে দেওয়া হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এটি গ্রহণযোগ্য, বিশেষ করে যারা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেতে অসুবিধা বোধ করেন। শিশুদের জন্য সিরাপ নেওয়ার সময় তাদেরকে ভুলবশত অতিরিক্ত খাওয়ানো এড়াতে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

পেইন রিলিভার সিরাপ সাধারণত দিনে ২–৩ বার খাওয়ানো হয়। খাওয়ার আগে বোতলটি ভালোভাবে ঝাঁকাতে হয়, যাতে সব উপাদান সমানভাবে মিশে যায়। গলা ব্যথার তীব্রতা অনুযায়ী ডাক্তার কখনও কখনও ডোজ সামান্য বাড়াতে বা কমাতে পারেন।

সিরাপ খাওয়ার সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করানো জরুরি, যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং ওষুধ দ্রুত কার্যকর হয়। শিশুরা সাধারণত সিরাপ খাওয়ার সময় স্বাদ নিয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাদযুক্ত সিরাপ বেছে নেওয়া যেতে পারে।

এই সিরাপগুলো শুষ্ক কাশি কমাতেও কার্যকর। অনেক সময় গলার ব্যথার সঙ্গে কাশি যুক্ত থাকে, যা ঘুম বা দৈনন্দিন কাজকর্মে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। পেইন রিলিভার সিরাপ নিয়মিত ব্যবহারে কাশি ও গলার জ্বালা দ্রুত কমে।

তবে মনে রাখতে হবে, পেইন রিলিভার সিরাপ মূলত উপশমের জন্য। যদি গলার ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, জ্বর বাড়ে, গলার ভিতর পুঁজ জমে, বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তবে এটি কেবল অস্থায়ী স্বস্তি দেবে। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো আবশ্যক।

শিশু বা বড়দের জন্য পেইন রিলিভার সিরাপ ব্যবহার করার সাথে সঙ্গে ঘরে কিছু অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া ভালো—যেমন পর্যাপ্ত পানি ও গরম লেবুর পানি খাওয়ানো, গরম স্যুপ, ধুলোবালি থেকে দূরে থাকা এবং বিশ্রাম। এগুলো সিরাপের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় এবং গলার আরাম দ্রুত ফিরে আসে।

৮. অ্যান্টিসেপ্টিক গার্গল সলিউশন (Salt Water Gargle)

গলা ব্যথা বা সংক্রমণ হলে প্রাচীন এবং কার্যকর একটি ঘরোয়া উপায় হলো লবণ পানি দিয়ে গার্গল (Salt Water Gargle)। এটি সহজ, সাশ্রয়ী এবং প্রাকৃতিকভাবে গলার ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। লবণের অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্য গলার ভেতরের জীবাণু ধ্বংস করে, প্রদাহ কমায় এবং গলার শ্লেষ্মা ঝিল্লি নরম রাখে।

একটি গ্লাস গরম পানিতে অর্ধ চা চামচ লবণ মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। দিনে ২–৩ বার, প্রতিবার ৩০–৬০ সেকেন্ড ধরে গার্গল করলে গলার ব্যথা ও জ্বালা অনেক কমে। এটি শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নয়, ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ফ্লু-জনিত গলা জ্বালাও হ্রাস করে।

লবণ পানি গলায় আর্দ্রতা যোগ করে, শুষ্কতা ও চুলকানি কমায় এবং কথা বলার সময় স্বস্তি দেয়। শিশুরা বা যারা ধুলোবালি ও দূষণের কারণে গলা খসখসে অনুভব করে, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।

আরোও পড়ুনঃ  মাথার দুই পাশে ব্যথার কারণ কি?

গার্গল করার সময় পানি গিলে না খাওয়াই ভালো। এটি সম্পূর্ণভাবে গলার ভেতরের জীবাণু ধ্বংস করে এবং ঘরের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করার সুবিধা দেয়। পাশাপাশি এটি নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রায় নেই।

সর্বশেষে বলা যায়, লবণ পানি দিয়ে গার্গল হলো সহজ, কার্যকর এবং নিরাপদ ঘরোয়া পদ্ধতি, যা গলা ব্যথা ও প্রদাহ কমায়, শ্লেষ্মা পরিষ্কার রাখে এবং দ্রুত আরাম দেয়। এটি অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করলে গলার দ্রুত আরাম নিশ্চিত হয়।

৯. ক্যালসিসিন বা কোল্ড ওষুধ (Cold Tablets)

গলার ব্যথা প্রায়শই ঠান্ডা বা ফ্লুর সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই ধরনের গলা ব্যথা সাধারণত ভাইরাসজনিত এবং এতে গলা শুষ্কতা, জ্বালা, হালকা ফোলাভাব, কাশি, নাক বন্ধ থাকা এবং হাঁচির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এমন ক্ষেত্রে কেবল ব্যথানাশক যথেষ্ট নয়—এক্ষেত্রে ক্যালসিসিন বা কোল্ড ট্যাবলেট (Cold Tablets) খুব কার্যকর।

ক্যালসিসিন বা সাধারণ কোল্ড ট্যাবলেটগুলিতে থাকে মাল্টি-অ্যাকশন উপাদান, যেমন প্যারাসিটামল (ব্যথা ও জ্বর কমানোর জন্য), ডিকোংজেস্ট্যান্ট (নাক পরিষ্কার রাখার জন্য), এবং কখনও কখনও অ্যান্টিহিস্টামিন (অ্যালার্জি উপশমের জন্য)। এই সংমিশ্রণ শরীরকে ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ফ্লু থেকে দ্রুত আরাম দেয়।

বাংলাদেশে প্রচলিত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে Cal-Cin, Flutab, Histacin Plus, Coldact, Cetrine Cold। এগুলো দিনে ১–২ বার নির্দিষ্ট ডোজে খাওয়া যায়। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্করা একবারে ১–২টি ট্যাবলেট গ্রহণ করেন, আর শিশুদের ক্ষেত্রে ওজন ও বয়স অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করতে হয়।

কোল্ড ট্যাবলেটের মূল সুবিধা হলো এটি একাধিক উপসর্গের উপর কাজ করে। শুধু গলার ব্যথা কমায় না, বরং জ্বর, নাক বন্ধ থাকা, হাঁচি, মাথাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ফ্লু উপসর্গও হ্রাস করে। ফলে রোগী অনেক দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

এই ওষুধ সাধারণত খাদ্যসাপেক্ষে খাওয়া ভালো, যাতে পাকস্থলীর অস্বস্তি কম থাকে। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত, কারণ পানি শরীরে হাইড্রেশন বজায় রাখে এবং ওষুধ দ্রুত কার্যকর হয়।

তবে মনে রাখতে হবে, কোল্ড ট্যাবলেট ভাইরাস নিজে মেরে ফেলতে পারে না। এটি শুধু উপসর্গ উপশম করে এবং রোগীকে আরাম দেয়। তাই দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, গলা ফোলা, বা শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

শিশু বা বৃদ্ধরা যদি এই ওষুধ নেন, তবে ডোজ ও ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকা জরুরি। কিছু কোল্ড ট্যাবলেটে হালকা সিডেটিভ বা ঘুম আনা উপাদান থাকতে পারে, তাই দিনে ড্রাইভিং বা যান্ত্রিক কাজ করার আগে তা মাথায় রাখতে হবে।

১০. গরম পানির বাষ্প নেওয়া (Steam Therapy)

গলার ব্যথা এবং শ্বাসনালীর অস্বস্তি কমানোর জন্য গরম পানির বাষ্প নেওয়া (Steam Therapy) একটি প্রাচীন, নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি। এটি প্রাকৃতিক উপায়ে গলার শুষ্কতা দূর করে, গলার ভিতরের কোষে আর্দ্রতা যোগ করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শীতকালে, ধুলোবালি বা ধোঁয়ার সংস্পর্শে গলা খসখসে হয়ে গেলে বাষ্প থেরাপি খুব উপকারী।

গরম পানি থেকে বের হওয়া বাষ্প শ্বাসনালীর ভিতরে প্রবেশ করে, গলার মিউকাস ঝিল্লিকে নরম করে। ফলে কাশি কমে, গলা জ্বালা প্রশমিত হয় এবং কণ্ঠে আরাম আসে। এটি গলার ব্যথা বা শুষ্কতার জন্য প্রায় সরাসরি আরামদায়ক। অনেক ডাক্তার ঠান্ডা-জনিত গলার সমস্যা বা ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি ঘরোয়া যত্নের অংশ হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।

বাষ্প নেওয়ার জন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি রাখুন এবং মাথার ওপর একটি তোয়ালে ঢেকে সেই বাষ্প শ্বাসের মাধ্যমে নিন। দিনে ২–৩ বার, প্রতি বার ৫–১০ মিনিটের জন্য এটি করা যেতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে বড়দের তত্ত্বাবধান থাকা জরুরি, যাতে গরম পানি বা বাষ্পের কারণে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে।

গরম বাষ্প শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা তরল করে দেয়, ফলে নাক বন্ধ থাকলেও শ্বাস নিতে সহজ হয়। এটি ঠান্ডা বা ফ্লুর ক্ষেত্রে সর্দি-কাশির উপসর্গ কমাতেও সাহায্য করে। গলা প্রদাহ বা সংক্রমণ থাকলে বাষ্প নিলে গলার ভিতরের কোষে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা দ্রুত আরোগ্য আনতে সাহায্য করে।

বাষ্পের সঙ্গে চাইলে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যেমন ইউক্যালিপটাস অয়েল, পুদিনা বা লেবুর রস মেশানো যায়। এগুলো অতিরিক্ত এ্যান্টিসেপ্টিক কার্যকারিতা দেয় এবং গলার স্বাদ ও সুবাসকে আরও আরামদায়ক করে। তবে শিশু বা সংবেদনশীলদের জন্য অত্যধিক তেলের ব্যবহার এড়ানো উচিত।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ

গলা ব্যথা হলে কি ঔষধ খাওয়া উচিত? এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-

গলা ব্যথা হলে কি সব সময় অ্যান্টিবায়োটিক দরকার?

না, সব গলা ব্যথাই ব্যাকটেরিয়াজনিত নয়। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ফ্লুতে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। প্রাথমিকভাবে ব্যথানাশক, লজেঞ্জ, গার্গল বা হালকা ঘরোয়া যত্ন যথেষ্ট। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সন্দেহ হলে ডাক্তার প্রেসক্রাইব করবেন।।

গলা ব্যথা কমাতে ঘরোয়া কোন পদ্ধতি কার্যকর?

ঘরোয়া উপায় হিসেবে গরম পানির বাষ্প নেওয়া, লবণপানি দিয়ে গার্গল, পর্যাপ্ত পানি খাওয়া এবং গরম চা বা মধু-মিশ্রিত পানীয় কার্যকর। এসব পদ্ধতি গলা আর্দ্র রাখে, ব্যথা কমায় এবং দ্রুত আরাম দেয়।

উপসংহার

গলা ব্যথা একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা প্রায়শই ঠান্ডা, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অ্যালার্জির কারণে ঘটে। যদিও এটি প্রাণঘাতী নয়, তবে দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। তাই সময়মতো যত্ন নেওয়া এবং সঠিক ওষুধ বা ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমে মৃদু ব্যথা বা জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল বা পেইন রিলিভার সিরাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো ব্যথা কমায় এবং জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখে। যদি গলার ব্যথা তীব্র হয় বা টনসিল ফুলে যায়, তাহলে ডাক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যামক্সিসিলিন, আজিথ্রোমাইসিন বা অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারেন। তবে অ্যান্টিবায়োটিক কখনও নিজে থেকে শুরু করা উচিত নয়।

গলা শুষ্কতা, চুলকানি বা অ্যালার্জি-জনিত ব্যথার ক্ষেত্রে সেটিরিজিন বা অন্যান্য অ্যান্টিহিস্টামিন সাহায্য করে। এছাড়া, স্ট্রেপসিলস বা লজেঞ্জ গলা শান্ত রাখে এবং কথা বলা বা গিলতে সুবিধা দেয়। সংক্রমণ প্রতিরোধ বা ব্যাকটেরিয়ার ধ্বংসের জন্য বেটাডিন গার্গল ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঘরোয়া যত্নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। গরম পানির বাষ্প নেওয়া, পর্যাপ্ত পানি খাওয়া, গরম চা বা মধু-মিশ্রিত পানীয়, লবণপানি দিয়ে গার্গল—এসব পদ্ধতি গলা আরাম দেয় এবং দ্রুত আরোগ্যে সাহায্য করে। শিশু ও বড়দের জন্য পেইন রিলিভার সিরাপ বা কোল্ড ট্যাবলেটও কার্যকর।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর উপসর্গ যেমন জ্বর, ফোলা টনসিল, ঢোক গিলতে কষ্ট বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্বল্প চিকিৎসায় গলার সমস্যার অবনতি হতে পারে। সঠিক ওষুধ, ঘরোয়া যত্ন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামের সমন্বয়ে গলা দ্রুত আরাম পায় এবং দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিক থাকে।

গলা ব্যথার যত্নে সচেতন থাকা, প্রাথমিকভাবে সঠিক ওষুধ গ্রহণ এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *