কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি?
কিডনির সমস্যা আজকাল অনেকের জীবনকে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে কিডনিতে পাথর বা কিডনি স্টোন একটি সাধারণ সমস্যা যা যেকোনো বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। কিডনি আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে একটি। এটি রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে এবং দেহের পানি ও খনিজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কিডনিতে পাথর হওয়া মানে হলো কিডনিতে ছোট ছোট কঠিন জমা বা স্টোন তৈরি হওয়া।
এই পাথর প্রাথমিকভাবে ছোট হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়ে ব্যথা ও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পাথরের আকার, অবস্থান এবং রকম ভিন্ন হওয়ার কারণে এর প্রভাবও ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশে জল সরবরাহের ঘাটতি এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে কিডনিতে পাথরের সমস্যা বেশি দেখা যায়। প্রায়ই প্রচুর লবণ বা প্রক্রিয়াজাত খাবার, পানির পরিমাণ কম খাওয়া, এবং পর্যাপ্ত ফল-মূল খাওয়া না হলে পাথরের ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় কিডনির পাথর অল্প উপসর্গের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
তবে বড় পাথর বা পাথরের নালা আটকে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা, বমি, প্রস্রাবে রক্ত, বা সংক্রমণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কারণে কিডনিতে পাথরের প্রাথমিক লক্ষণগুলি বোঝা এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত জল খাওয়া, ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরি। এছাড়াও ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা ও চিকিৎসা করাও অপরিহার্য। কিডনির পাথর সাধারণত কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ছোট পাথর প্রায়ই নিজেরাই প্রস্রাবে বের হয়ে যায়, কিন্তু বড় পাথর অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশে অনেক মানুষ কিডনির সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভোগেন কারণ তারা পাথরের সতর্কতা বা চিকিৎসার দিকে যথাযথ মনোযোগ দেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা বা প্রস্রাবে রঙ পরিবর্তন হলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখানো উচিত। কিডনিতে পাথর হলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সঠিক খাদ্য, পর্যাপ্ত জল খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চাপ কমানোর চেষ্টা পাথর নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া প্রতিকারও কিছুটা উপকার দিতে পারে। তবে এটি শুধুমাত্র ছোট পাথরের জন্য কার্যকর। বড় বা ব্যথাযুক্ত পাথরের ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরামর্শ অপরিহার্য। বাংলাদেশে বেশিরভাগ মানুষ ঘরে বসেই পাথরের সমস্যা কমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেক সময় তা যথেষ্ট হয় না। সময়মতো পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির অবস্থা জানা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়। রোগীকে নিজের জীবনধারা পরিবর্তন করতে হবে। অতিরিক্ত লবণ, তেল বা প্রসেসড খাবার কমানো জরুরি। এছাড়াও পর্যাপ্ত ফল, সবজি এবং পানি খাওয়া উচিত। ব্যায়ামও কিডনির রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ব্যথা কমাতে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা কার্যকর হতে পারে। তবে বড় পাথরের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ব্যায়াম এড়ানো উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করলে পাথরের পুনরাবৃত্তি কমে। সঠিক জীবনধারা ও সতর্কতা নিয়ে কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব।
কিডনিতে পাথর হলে কি ব্যায়াম করতে হবে?

কিডনিতে পাথর থাকলে ব্যায়াম করা কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং পাথরের নড়াচড়া সহজ করতে সাহায্য করে। তবে পাথর বড় বা ব্যথাজনক হলে জোরালো ব্যায়াম সমস্যা বাড়াতে পারে। বাংলাদেশে প্রায়শই মানুষ শারীরিক পরিশ্রম কমানোর কারণে পাথর বৃদ্ধি পায়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করা উচিত। হালকা হাঁটা, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং কিডনির জন্য নিরাপদ। সাঁতার বা সাইক্লিংও কার্যকর হতে পারে। তবে জোরালো ও ওজনযুক্ত ব্যায়াম, দৌড়ঝাঁপ, ভার উত্তোলন এড়ানো উচিত। হঠাৎ ব্যথা বা প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দিলে ব্যায়াম থামাতে হবে। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট হালকা হাঁটা পাথরের প্রাকৃতিক বের হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। পর্যাপ্ত জল খাওয়া ব্যায়ামের সঙ্গে অত্যন্ত জরুরি। ব্যায়াম কেবল পাথর সরানোর জন্য নয়, কিডনির মোট স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে। ব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তার বা ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো। বাংলাদেশের জলবায়ুতে গরমে অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। তাই ব্যায়ামের সময় পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। ব্যায়ামের সময় ব্যথা বা অসুবিধা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমায়। পেশী শক্তি বাড়ায় এবং দেহের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে। কিডনিতে ছোট পাথর থাকলে হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম পাথরকে প্রস্রাবে বের হওয়ায় সহায়ক। তবে বড় পাথর থাকলে চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতীত কোনো ব্যায়াম করা ঠিক নয়।
কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি?

কিডনিতে পাথর হলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলে বড় সমস্যা এড়ানো যায়। পাথর ছোট হলে প্রাকৃতিকভাবে বের হতে পারে, আর বড় হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিডনিতে পাথরের সমস্যার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে। নিচে দেওয়া হলো –
১.পর্যাপ্ত পানি খাওয়া
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো পর্যাপ্ত পানি খাওয়া। পানি দেহের বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং প্রস্রাবকে পাতলা রাখে। পাতলা প্রস্রাব পাথর তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। বাংলাদেশে গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে শরীর থেকে বেশি পানি নিঃসরণ হয়। তাই বিশেষভাবে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া জরুরি। সাধারণভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত, তবে গরমে বা শারীরিক পরিশ্রম বেশি হলে আরও বেশি পানি প্রয়োজন হতে পারে।
পানি কেবল পাথর বের করতে সাহায্য করে না, এটি কিডনির নালা পরিষ্কার রাখে। যখন প্রস্রাব ঘন হয়, তখন ক্যালসিয়াম, অক্সালেট বা ইউরিক অ্যাসিড জমা হতে পারে, যা পাথর তৈরি করে। নিয়মিত পানি খাওয়া এই পদার্থকে ধুয়ে দেয় এবং পাথরের আকার ছোট রাখে। অনেক মানুষ সকালে উঠে প্রথমে পানি পান না করলে কিডনির কার্যক্ষমতা ধীর হয়। তাই সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি খাওয়া উপকারী।
বাংলাদেশে অনেক মানুষ পানির পরিমাণ কম খায় কারণ তারা চা, কফি বা মিষ্টি পানীয় বেশি পান করেন। এগুলো ডিহাইড্রেট করে এবং কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়। তাই প্রতিদিন পানি পানকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। পর্যাপ্ত পানি খাওয়া শুধু কিডনির জন্য নয়, পুরো দেহের জন্য উপকারী। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য, হজম এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
পানি খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে পান করা ভালো, একবারে বেশি খাওয়া হজমে সমস্যা করতে পারে। পানি খাওয়ার সঙ্গে হালকা লেবুর রস বা চিনি-মুক্ত লেবুর জল যোগ করলে এটি আরও কার্যকর হয়। বাংলাদেশে অনেক মানুষ মনে করেন ঠান্ডা পানি কিডনির জন্য খারাপ, এটি ভুল ধারণা। পরিমিত ঠান্ডা বা সাধারণ তাপমাত্রার পানি দুইভাবেই উপকারী।
শিশু ও বয়স্কদের জন্য নিয়মিত পানি খাওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেহের পানির প্রয়োজনীয়তা কমে যায়, কিন্তু কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে তাদেরও পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। কিডনিতে পাথর থাকলে প্রতিদিনের পানি খাওয়া সময়মতো প্রস্রাব বের করতে সাহায্য করে। যখন প্রস্রাব পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়, তখন পাথর নিজে থেকেই নালায় সরতে পারে।
বাংলাদেশে গ্রামীণ অঞ্চলে অনেক মানুষ খোলা জল পান করেন, যা প্রায়শই জীবাণুমুক্ত নয়। তাই নিরাপদ, ফিল্টার করা বা সুরক্ষিত পানি খাওয়া জরুরি। পানির মধ্যে খনিজের মাত্রা খুব বেশি হলে ক্যালসিয়াম পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই পানি নির্বাচনেও সাবধানতা দরকার।
নিয়মিত পানি খাওয়া একটি অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। প্রতিদিন প্রতিটি সময়ে পানি খাওয়া, যেমন সকালে, দুপুরে, বিকেলে এবং রাতের খাবারের আগে, পাথর প্রতিরোধে সহায়ক। পানি খাওয়ার সঙ্গে শারীরিক কার্যক্রম যেমন হালকা হাঁটা, যোগব্যায়াম করলে এটি আরও কার্যকর হয়।
শেষে, মনে রাখতে হবে, পর্যাপ্ত পানি খাওয়া কেবল পাথর প্রতিরোধের জন্য নয়, কিডনির সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর পদ্ধতি। এটি কিডনিকে সুস্থ রাখে, প্রস্রাব স্বাভাবিক করে এবং দীর্ঘমেয়াদে পাথরের পুনরাবৃত্তি রোধ করে।
২.লবণ কমানো
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে লবণ কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশি লবণ খেলে দেহে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ক্যালসিয়াম প্রস্রাবে বের হওয়া কমিয়ে দেয়। এর ফলে কিডনিতে ক্যালসিয়ামের জমা সৃষ্টি হয় এবং পাথরের ঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশে প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসে অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে। চিপস, ভাজা-snacks, নুডলস, সয়া সস, কেক এবং মিষ্টি প্রায়শই লবণযুক্ত হয়।
প্রতিদিনের খাবারে লবণ সীমিত করলে কিডনির উপর চাপ কমে। রান্নার সময় লবণ কমানো সম্ভব। মরিচ, রসুন, আদা, ধনেপাতা, লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করে খাবারের স্বাদ বজায় রাখা যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত ডিম, মাংস বা চিজে লবণ থাকে, তাই পরিমাণে খাওয়া উচিত।
বাংলাদেশের গ্রামের মানুষেরা প্রায়শই লবণাক্ত মাছ বা শুকনো মাছ বেশি খান। এটি কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই পাথরের সমস্যায় ভুগলে লবণাক্ত খাবার এড়ানো জরুরি। দিনে ৫-৬ গ্রাম লবণ গ্রহণের বেশি না হওয়াই ভালো।
লবণ কমানোর সঙ্গে পানির পরিমাণ বাড়ানো উচিত। পানি লবণ এবং অতিরিক্ত খনিজ ধুয়ে দিতে সাহায্য করে। লবণ কমানো শুধু কিডনির জন্য নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। অনেক কিডনি রোগী উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগেন, এবং লবণ কমালে তা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হোটেল বা রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়ার সময় লবণ বেশি থাকে। তাই চেষ্টা করা উচিত বাড়িতে রান্না করা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। যদি বাইরে খেতে হয়, তবে কম লবণযুক্ত বিকল্প বেছে নিন।
বাজারে বিভিন্ন প্রস্তুত খাবারের লেবেলে লবণের পরিমাণ লেখা থাকে। তা খেয়াল করলে দৈনিক লবণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, সূপ কিউব, ডিম্বাবৃত্ত খাবার, প্যাকেটজাত সস এসব এড়ানো উচিত।
বাংলাদেশে অনেক মানুষ রুটি বা ভাতের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণযুক্ত তরকারি খেতে অভ্যস্ত। স্বাস্থ্যকর জীবনধারায় এই অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন। শাকসবজি ও কম লবণযুক্ত খাবার বেছে নিলে কিডনির পাথরের ঝুঁকি কমে।
লবণ কমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা প্রথমে কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে স্বাদ অভ্যস্ত হয়ে যায়। শিশুরা ও বয়স্কদের জন্যও কম লবণযুক্ত খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে তাদের কিডনির স্বাস্থ্য বজায় থাকে এবং পাথরের ঝুঁকি কমে।
নিয়মিত খাদ্য পরিকল্পনা, লেবেল পড়া এবং প্রাকৃতিক খাবার বেছে নেওয়া কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে কার্যকর। লবণ কমানো একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী পদক্ষেপ, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করে।
৩.প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেশি প্রোটিন, বিশেষ করে প্রাণিজ উৎসের প্রোটিন যেমন মাংস, মাছ, ডিম ও দুধের অতিরিক্ত গ্রহণ ইউরিক অ্যাসিড পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়। ইউরিক অ্যাসিড পাথর সাধারণত প্রস্রাবের pH কম হলে তৈরি হয়। তাই কিডনিতে পাথর থাকলে প্রোটিন গ্রহণ সঠিক মাত্রায় রাখা উচিত।
বাংলাদেশে প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসে অনেকেই দৈনিক অতিরিক্ত মাছ বা মাংস খান। এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও, অতিরিক্ত হলে কিডনিতে চাপ বাড়ায়। বিশেষ করে রাত্রির খাবারে ভারী প্রোটিন খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত কাজ পড়ে।
প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ মানে সম্পূর্ণভাবে প্রোটিন বাদ দেওয়া নয়। এটি মাত্রা অনুযায়ী খাওয়া। উদাহরণস্বরূপ, দিনে প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের জন্য ৫০-৬০ গ্রাম প্রোটিন যথেষ্ট। বাংলাদেশি পরিবারের জন্য এটি প্রায় ১-২টি মাঝারি মুরগির টুকরো বা ১-২টি মাছের অংশ সমান।
প্রোটিন খাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্ভিজ্জ উৎসও গুরুত্বপূর্ণ। ডাল, শিম, বাদাম, সয়াবিন ইত্যাদি প্রোটিন সরবরাহ করে কিন্তু কিডনিতে চাপ কমায়। এই কারণে প্রোটিনের উৎসকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখা উচিত।
কিডনিতে পাথর থাকলে প্রোটিন গ্রহণের সময় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ প্রোটিনের মাত্রা কিডনির কার্যক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। বড় পাথরের রোগীকে অতিরিক্ত প্রোটিন কমানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে অনেকেই চিংড়ি বা মাছের বড় অংশ নিয়মিত খান। এটি ইউরিক অ্যাসিড পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই সাপ্তাহিক মাত্রা অনুযায়ী মাছ বা মাংস খাওয়া উচিত।
প্রোটিন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কিডনিতে অতিরিক্ত লোড কমানো যায়। যখন কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে, পাথরের পুনরাবৃত্তি কমে। পানি খাওয়ার সঙ্গে প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করলে আরও কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়।
শিশু ও বৃদ্ধদের প্রোটিনের মাত্রা খেয়াল রাখা আরও গুরুত্বপূর্ণ। বেশি প্রোটিন শিশুদের কিডনিতে চাপ দিতে পারে। বয়স্করা যদি অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করে, তাহলে তাদের কিডনিতে স্টোন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ মানে স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ। নিয়মিত পরিমিত প্রোটিন, পর্যাপ্ত পানি, লবণ নিয়ন্ত্রণ এবং ফল-সবজি খাওয়া একসঙ্গে করলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
বাংলাদেশের রান্নার ধরন অনুযায়ী প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ছোট মাছ, ডাল এবং হালকা মাংস গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় প্রোটিন পাওয়া যায়। হোম কুকড খাবারে ভারসাম্য রেখে প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে নিরাপদ।
শেষে, প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ কেবল কিডনির পাথর কমাতে নয়, কিডনির সামগ্রিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দীর্ঘমেয়াদে কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করে।
৪.ফল এবং সবজি খাওয়া
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধে ফল এবং সবজি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফল এবং সবজি দেহকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এগুলো কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি কিডনির জন্য উপকারী।
বাংলাদেশে সহজলভ্য ফল যেমন আম, কলা, পেয়ারা, কমলা, তরমুজ ইত্যাদি প্রাকৃতিকভাবে খনিজ এবং পানি সরবরাহ করে। এগুলো প্রস্রাবকে পাতলা রাখে এবং পাথরের আকার ছোট রাখে। শীতকালে কুমড়া, গাজর, মিষ্টি আলু এবং পটল খেলে ক্যালসিয়াম এবং ফাইবার পাওয়া যায়।
সবজিতে লাল শাক, পুঁই শাক, পালং শাক, কপি, বাঁধাকপি প্রায়শই ব্যবহার হয়। এগুলো ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই সবজি নিয়মিত খেলে কিডনির সিস্টেম সুস্থ থাকে এবং পাথর জমার সম্ভাবনা কমে।
ফল এবং সবজি খাওয়ার সময় যতটা সম্ভব তাজা এবং কম প্রক্রিয়াজাত খাবার বেছে নেওয়া উচিত। চিপস বা ফ্রোজেন খাবারে অতিরিক্ত লবণ এবং কেমিক্যাল থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
প্রতি খাবারে অন্তত ১-২টি ফল এবং ২-৩ প্রকার সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। বাংলাদেশে সকালের নাশতায় কলা বা পেয়ারা এবং দুপুর বা রাতের খাবারে শাক-সবজি খেলে দৈনিক প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায়।
ফলের মধ্যে কম অ্যাসিডযুক্ত ফল বেছে নেওয়া ভালো। বেশি অ্যাসিডযুক্ত ফল যেমন কুল, লেবু অতিরিক্ত খেলে কিডনিতে সমস্যা বাড়াতে পারে। তবে পরিমাণে খেলে তা সমস্যা তৈরি করে না।
সবজি রান্নার সময় লবণ ও তেল সীমিত রাখা উচিত। খুব বেশি ভাজা বা তেলযুক্ত সবজি কিডনির জন্য ক্ষতিকর। সেদ্ধ বা হালকা ভাজা সবজি বেশি উপকারী।
শিশু ও বৃদ্ধদের জন্যও ফল এবং সবজি নিয়মিত খাওয়া জরুরি। এটি কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিনের খাবারে রঙিন ফল এবং সবজি রাখলে শরীরের ইমিউন সিস্টেমও শক্তিশালী হয়।
পানি সমৃদ্ধ ফল যেমন তরমুজ, কমলা বা পেয়ারা বেশি খেলে প্রস্রাব পাতলা থাকে এবং পাথর বের হওয়া সহজ হয়। এছাড়াও, শাক-সবজি নিয়মিত খেলে দেহের পিএইচ ব্যালান্স বজায় থাকে।
বাংলাদেশে গ্রামীণ ও শহুরে খাবারে ফল এবং সবজির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে কিডনির পাথর সমস্যায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা যায়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা একমাত্র দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর উপায়।
ফল এবং সবজি খাওয়া কেবল পাথর কমাতে নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রক্তচাপ ঠিক রাখতে সহায়ক। এটি কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৫.ব্যথা নিয়ন্ত্রণ
কিডনিতে পাথর থাকলে প্রায়ই প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এই ব্যথা সাধারণত পিঠের পেছন, কোমর বা পেটের পাশে অনুভূত হয়। পাথর কিডনির নালায় আটকে গেলে ব্যথা আরও তীব্র হয়। তাই ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা রোগীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। ব্যথা নিয়ন্ত্রণে প্রথম ধাপ হলো বিশ্রাম নেওয়া। হালকা শারীরিক কার্যক্রম করতে হলেও চাপ কমানো প্রয়োজন।
ব্যথা কমাতে ডাক্তার প্রায়শই পেইন রিলিভার বা অ্যানালজেসিক ওষুধের পরামর্শ দেন। ওষুধ নেওয়ার সময় ডাক্তারি নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। নিজে থেকে অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহার করা বিপজ্জনক হতে পারে।
ঘরে বসে ব্যথা কমানোর জন্য হালকা গরম কম্প্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে। পাথরের অবস্থান অনুযায়ী কোমর বা পিঠে হালকা গরম কাপড় চাপানো ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশে অনেকেই গরম পানি বা হট বটল ব্যবহার করেন। এটি পেশী শিথিল করে এবং ব্যথা উপশম করে।
পর্যাপ্ত পানি খাওয়া ব্যথা কমাতে সহায়ক। যখন প্রস্রাব পাতলা থাকে, পাথর নালায় সহজে চলাচল করতে পারে এবং ব্যথা কমে। তাই ব্যথা থাকলেও পানি কম খাওয়া উচিত নয়।
কিছু রোগী ব্যথা কমাতে ঘুমের সময় উপযুক্ত পজিশন খুঁজে নেন। কোমর বা পিঠের নীচে হালকা বালিশ ব্যবহার করলে চাপ কমে এবং ব্যথা কিছুটা উপশম হয়।
ডিহাইড্রেশন বা পানি কম খাওয়া ব্যথা বাড়ায়। তাই দিনে নিয়মিত পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও হালকা হাঁটা বা নরম যোগব্যায়াম পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।
কিডনিতে পাথরের আকার বড় হলে ব্যথা তীব্র হয় এবং কখনও কখনও বমি বা জ্বর দেখা দেয়। এই ক্ষেত্রে অবিলম্বে ডাক্তারকে দেখানো জরুরি। বাংলাদেশে অনেক মানুষ ব্যথা বাড়লে ঘরোয়া প্রতিকার চেষ্টা করেন, তবে বড় পাথরের জন্য তা যথেষ্ট নয়।
কিছু হালকা ওষুধ যেমন পেইন কিলার ডাক্তারি পরামর্শে নেওয়া যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে ওষুধের উপর নির্ভরতা ঠিক নয়। ব্যথা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পাথর বের করা বা চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবার ও আশেপাশের মানুষের সহায়তাও গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান করলে ব্যথা সহনীয় হয়। মানসিক চাপ কম রাখা ব্যথা উপশমে সহায়ক।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথার কারণ ও পাথরের অবস্থান অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করলে দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা কমে। ব্যথা নিয়ন্ত্রণ কেবল আরামের জন্য নয়, রোগীর সামগ্রিক সুস্থতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
৬.ডাক্তারি পরীক্ষা
কিডনিতে পাথর থাকলে নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাথরের আকার, অবস্থান এবং ধরনের সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে চিকিৎসা কার্যকর হয়। বাংলাদেশে অনেক মানুষ প্রথমে ঘরোয়া প্রতিকার চেষ্টা করেন, কিন্তু বড় পাথরের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রতিকার যথেষ্ট নয়। ডাক্তারি পরীক্ষা সময়মতো চিকিৎসার জন্য সহায়ক।
প্রাথমিকভাবে ডাক্তার আলট্রাসাউন্ড বা ইউএসজি করান। এটি পাথরের আকার এবং অবস্থান সহজে নির্ণয় করতে সাহায্য করে। ছোট পাথর ধরা পড়লে প্রাকৃতিকভাবে বের করার ব্যবস্থা নেওয়া যায়। বড় পাথর ধরা পড়লে অন্যান্য চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
কিডনিতে পাথর সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে প্রস্রাবের পরীক্ষা করানো জরুরি। প্রস্রাবের রঙ, পিএইচ, ক্রিস্টাল বা সংক্রমণ থাকা পরীক্ষা করা হয়। বাংলাদেশে অনেক মানুষ প্রস্রাবের পরীক্ষার গুরুত্ব কম বোঝে, কিন্তু এটি পাথরের ধরন নির্ণয় ও চিকিৎসায় সহায়ক।
ডাক্তার প্রয়োজনে CT স্ক্যান বা এক্স-রে করাতে পারেন। এটি পাথরের অবস্থান, আকার ও সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়। বড় পাথর থাকলে এগুলো অস্ত্রোপচার বা lithotripsy করার সিদ্ধান্তে সাহায্য করে।
রক্ত পরীক্ষা কিডনির কার্যক্ষমতা দেখার জন্য জরুরি। কিডনিতে সংক্রমণ বা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হলে তা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়াও ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম স্তর জানা গুরুত্বপূর্ণ।
নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা কেবল পাথর শনাক্তের জন্য নয়, পাথরের পুনরাবৃত্তি রোধেও গুরুত্বপূর্ণ। যারা একবার কিডনিতে পাথর হয়েছে, তাদের নিয়মিত পরীক্ষা করানো আবশ্যক।
বাংলাদেশে অনেক রোগী পরীক্ষা করাতে দেরি করেন, যার ফলে পাথর বড় হয়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। তাই সময়মতো ডাক্তারি পরীক্ষা করানো রোগীর জন্য নিরাপদ।
পরিবার বা পরিচারকের সহায়তায় রোগী পরীক্ষা করতে যেতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষা প্রয়োজনীয়। পরীক্ষা শেষে ডাক্তার খাদ্য, পানি, ব্যায়াম এবং ওষুধের নির্দেশ দেন।
পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়ার পরে ডাক্তার পাথর বের করার বা ওষুধের ব্যবস্থা করেন। প্রাথমিক অবস্থায় পরীক্ষা রোগীকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ডাক্তারি পরীক্ষা কিডনির সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং পাথরের পুনরাবৃত্তি রোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। তাই নিয়মিত পরীক্ষা এবং পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
৭.ওষুধ গ্রহণ
কিডনিতে পাথর থাকলে ডাক্তার প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এই ওষুধ পাথর গলাতে, প্রস্রাব সহজ করতে বা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ছোট পাথর অনেক সময় ওষুধের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে যায়। তবে বড় বা জটিল পাথরের জন্য ওষুধ একমাত্র সমাধান নয়।
বাংলাদেশে অনেক রোগী ঘরোয়া ওষুধ বা এক ধরনের প্রতিকার চেষ্টা করেন। এটি সব সময় কার্যকর নয়। সঠিক ওষুধ প্রয়োজন ডাক্তারের পরীক্ষা ও নির্ণয়ের পর।
ওষুধ সাধারণত তিন ধরনের হতে পারে: পাথর গলানোর ওষুধ, প্রস্রাব পাতলা করার ওষুধ এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণের ওষুধ। ডাক্তার রোগীর শারীরিক অবস্থা, পাথরের ধরন ও আকার অনুযায়ী প্রেসক্রিপশন দেন।
ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের জন্য বিশেষ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এটি পাথরকে ধীরে ধীরে ছোট করে দেয় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হতে সাহায্য করে। ইউরিক অ্যাসিড পাথরের জন্য আলাদা ওষুধ আছে।
ওষুধ গ্রহণের সময় পর্যাপ্ত পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। পানি পাথরকে নরম করে এবং প্রস্রাবে সহজে বের হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। পানি কম খেলে ওষুধ কার্যকর হয় না।
ব্যথা কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ডাক্তারি নির্দেশে নেওয়া উচিত। নিজের ইচ্ছামত ওষুধ পরিবর্তন করা বিপজ্জনক। দীর্ঘমেয়াদে ওষুধের ডোজ নিয়মিত মেনে চললে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
বাচ্চা বা বৃদ্ধদের জন্য ওষুধের ডোজ আলাদা হতে পারে। তাই ডাক্তার নির্দেশনা অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল ডোজ কিডনির উপর চাপ বাড়াতে পারে।
ওষুধের পাশাপাশি জীবনধারায় পরিবর্তন আনাও জরুরি। যেমন, পর্যাপ্ত পানি খাওয়া, লবণ ও প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ, ফল ও সবজি খাওয়া এবং হালকা ব্যায়াম। এগুলো ওষুধের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
বাংলাদেশে অনেক রোগী ওষুধ শুরু করার আগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানেন না। ওষুধ নেওয়ার সময় যদি বমি, জ্বর, চর্মরোগ বা অস্বাভাবিক প্রস্রাব দেখা দেয়, অবিলম্বে ডাক্তারকে দেখানো উচিত।
সঠিক ওষুধ গ্রহণ কেবল পাথর কমাতে নয়, কিডনির পুনরাবৃত্তি রোধেও কার্যকর। নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা ও prescribed ওষুধ মেনে চললে পাথরের সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৮.হালকা ব্যায়াম
কিডনিতে পাথর থাকলে হালকা ব্যায়াম অত্যন্ত সহায়ক। এটি কিডনিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং পাথরের নড়াচড়া সহজ করে। হালকা হাঁটা, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং পাথরকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে সহায়তা করে। তবে বড় পাথর থাকলে জোরালো ব্যায়াম এড়ানো উচিত।
বাংলাদেশে অনেক মানুষ ব্যায়াম কম করেন, যা কিডনির পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। দৈনন্দিন জীবনে কিছু সময় হালকা ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট হালকা হাঁটা বা যোগব্যায়াম কিডনির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের পেশী শিথিল হয়। পেশীর শিথিলতা কিডনির নালায় পাথর সরানোর জন্য সহায়ক। ঘরে বসে হালকা স্ট্রেচিং বা প্রানায়ামও কার্যকর।
গরমে ব্যায়াম করার সময় পর্যাপ্ত পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডিহাইড্রেশন পাথরকে স্থির করে এবং ব্যথা বাড়ায়। তাই ব্যায়ামের আগে, সময়ে এবং পরে পানি খাওয়া উচিত।
শিশু ও বয়স্কদের জন্য হালকা ব্যায়াম আরও গুরুত্বপূর্ণ। বেশি শারীরিক চাপ কিডনির উপর চাপ বাড়ায়। তাই তাদের জন্য হালকা হাঁটা, সাঁতার বা হালকা যোগব্যায়াম নিরাপদ।
ব্যথা বা অসুবিধা অনুভব করলে ব্যায়াম বন্ধ করতে হবে। হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা কিডনিতে পাথর আটকে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে অবিলম্বে ডাক্তারকে দেখানো জরুরি।
বাংলাদেশে গ্রামীণ এবং শহুরে জীবনধারায় হালকা ব্যায়াম কম হয়। তাই নিয়মিত ব্যায়ামকে দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করা জরুরি। এটি কিডনিতে পাথরের পুনরাবৃত্তি কমায়।
ব্যায়ামের ধরন বেছে নেওয়ার সময় শক্তিশালী ওজন উত্তোলন বা দৌড়ঝাঁপ এড়ানো উচিত। হালকা ব্যায়াম যেমন ১০-১৫ মিনিটের ঘরের ভেতর হাঁটা বা লাইট যোগব্যায়াম যথেষ্ট।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম কেবল পাথর সরানোর জন্য নয়, পুরো দেহের রক্ত সঞ্চালন, হজম এবং মেটাবলিজম ঠিক রাখতেও সহায়ক। এটি মানসিক চাপ কমায়, যা কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবার ও পরিচারকের সহায়তায় রোগীকে হালকা ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করা যায়। এটি রোগীর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর। হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা একসাথে কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করে।
৯.প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ
কিডনিতে পাথর থাকলে প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্রাবের রঙ, ঘনত্ব, ঘ্রাণ এবং কোন ব্যথা সংযুক্ত আছে কিনা তা নিয়মিত লক্ষ্য করা উচিত। পরিবর্তন লক্ষ্য করলে তা কিডনির অবস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশে অনেক রোগী প্রস্রাবের এই গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণগুলো উপেক্ষা করেন। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করলে পাথরের দ্রুত শনাক্তকরণ সম্ভব। প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তিত হলে, যেমন গাark-বাদামি বা রক্তযুক্ত হওয়া, তা অবিলম্বে ডাক্তারকে জানানো জরুরি।
প্রস্রাবের ঘনত্ব বেশি হলে পাথর তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দিনে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া এবং প্রস্রাব পাতলা রাখা প্রয়োজন। হালকা ব্যায়াম করলে প্রস্রাব নালা থেকে সহজে বের হয় এবং পাথরের নড়াচড়া সহজ হয়।
প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা চিঁড়ের অনুভূতি থাকলে তা সতর্কতার ইঙ্গিত। ছোট পাথরও নালায় আটকে গেলে প্রচণ্ড ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষা জরুরি।
শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ আরও গুরুত্বপূর্ণ। তারা ব্যথা বা অন্য উপসর্গ সহজে প্রকাশ করতে পারে না। তাই পরিবারের নজরদারি প্রয়োজন।
প্রস্রাবের সঙ্গে ফেনা বা দুর্গন্ধ দেখা দিলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এটি পাথরের সঙ্গে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই নিয়মিত পরীক্ষা এবং ডাক্তারি পরামর্শ নেয়া উচিত।
ডিহাইড্রেশন বা পানি কম খাওয়া প্রস্রাবকে ঘন করে। ঘন প্রস্রাব ক্যালসিয়াম, অক্সালেট বা ইউরিক অ্যাসিড জমার সুযোগ দেয়। তাই পানি খাওয়ার সাথে সাথে প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে অনেক মানুষ পানি কম খেলে বা প্রচুর চা-কফি পান করলে পাথর দ্রুত বড় হয়। তাই প্রয়োজনীয় পানি খাওয়া এবং প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ একসাথে রাখা উচিত।
প্রস্রাব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পাথরের আকার ও অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যখন প্রস্রাব নিয়মিত এবং স্বাভাবিক থাকে, তখন পাথরের সম্ভাবনা কম থাকে।
নিয়মিত প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ কেবল পাথরের জন্য নয়, কিডনির সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সংক্রমণ প্রতিরোধেও সহায়ক। এটি দীর্ঘমেয়াদে রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১০.অস্ত্রোপচার বা প্রক্রিয়াজাত চিকিৎসা
কিডনিতে বড় বা জটিল পাথর থাকলে প্রায়শই অস্ত্রোপচার বা প্রক্রিয়াজাত চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। ছোট পাথর প্রাকৃতিকভাবে বের হলেও বড় পাথর নালায় আটকে গেলে ব্যথা, সংক্রমণ এবং কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস ঘটায়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা করানো অপরিহার্য।
বাংলাদেশে অনেক রোগী প্রথমে ঘরোয়া প্রতিকার চেষ্টা করেন। ছোট পাথরের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা হলেও বড় পাথরের জন্য প্রক্রিয়াজাত চিকিৎসা জরুরি। ডাক্তার পরীক্ষা করে পাথরের আকার, অবস্থান ও ধরনের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসার পদ্ধতি ঠিক করেন।
প্রধান চিকিৎসার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে lithotripsy, ureteroscopy এবং পার্শ্ববর্তী ছোট অস্ত্রোপচার। Lithotripsy হল উচ্চ-তরঙ্গ ব্যবহার করে পাথর ছোট করা, যাতে তা সহজে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়।
Ureteroscopy হল একটি ছোট টিউব নালার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে পাথর সরানো। এটি মূলত মাঝারি আকারের পাথরের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে আধুনিক হাসপাতালগুলোতে এই পদ্ধতি বেশি ব্যবহৃত হয়।
যদি পাথর খুব বড় হয়, তাহলে খোলা অস্ত্রোপচার বা মিনি-অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে। এটি কিডনির কাঠামোকে সংরক্ষণ করে পাথর সরায়। তবে খোলা অস্ত্রোপচার শেষ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চিকিৎসার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি পাথরকে ধুয়ে দেয় এবং প্রস্রাব পাতলা রাখে, যা চিকিৎসার কার্যকারিতা বাড়ায়।
বাংলাদেশে রোগী চিকিৎসা নিতে দেরি করলে পাথর আরও বড় হয় বা সংক্রমণ দেখা দেয়। তাই সময়মতো হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞকে দেখা জরুরি। প্রক্রিয়াজাত চিকিৎসা পাথর সম্পূর্ণ সরাতে সহায়ক।
চিকিৎসার পরে ডাক্তার সাধারণত ব্যথা কমানোর ওষুধ, পানি খাওয়ার নির্দেশ এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন। লবণ, প্রোটিন ও ফল-সবজি খাওয়ার নিয়ম মেনে চললে পাথরের পুনরাবৃত্তি কম হয়।
পরিবার ও পরিচারকের সহায়তায় রোগীকে চিকিৎসার পরে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করতে উৎসাহিত করা যায়। হালকা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম চিকিৎসার সাফল্য নিশ্চিত করে।
নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা এবং প্রক্রিয়াজাত চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখা যায়। এটি কিডনিতে পাথরের পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর।
কিডনিতে পাথর কেন হয়?

কিডনিতে পাথর বা কিডনিস্টোন হল একটি সাধারণ সমস্যা যা তখন ঘটে যখন প্রস্রাবের মধ্যে কিছু খনিজ পদার্থ বা লবণ জমে একত্রিত হয়ে কঠিন অবস্থায় পরিণত হয়। সবচেয়ে সাধারণ খনিজ পদার্থের মধ্যে ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড এবং সিস্টাইন থাকে। এই পদার্থগুলো যদি প্রস্রাবের মাধ্যমে যথেষ্ট দ্রুত বের না হয়, তবে পাথরের সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশে প্রচুর মানুষ পানির পরিমাণ কম খায়। পানি কম খেলে প্রস্রাব ঘন হয় এবং খনিজ পদার্থ জমে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার খেলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা প্রস্রাবে বৃদ্ধি পায়, যা পাথরের সম্ভাবনা বাড়ায়।
কিডনিতে পাথর হওয়ার আরেকটি সাধারণ কারণ হলো ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা। বেশি মাংস, ডিম, চিংড়ি বা অন্যান্য প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ে। এতে ইউরিক অ্যাসিড পাথরের ঝুঁকি বাড়ে।
প্রদাহ বা সংক্রমণও পাথরের সৃষ্টি করতে পারে। যদি কিডনিতে সংক্রমণ থাকে, তবে এটি প্রস্রাবে খনিজ জমা বাড়ায় এবং পাথরের জন্ম দেয়।
বংশগত কারণও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিবারের মধ্যে কেউ কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগলে অন্যান্য সদস্যের ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই বাংলাদেশে যেখানে পরিবারের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা অনুরূপ, সেখানে ঝুঁকি আরও বাড়ে।
অতিরিক্ত ভিটামিন ডি বা ক্যালসিয়াম সম্পূরকও পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অনেক মানুষ স্বাস্থ্যকর মনে করে এগুলো বেশি গ্রহণ করেন, যা পাথর তৈরি করতে সহায়ক।
শারীরিক কার্যক্রমের অভাবও পাথরের কারণ হতে পারে। অনেক সময় বসে থাকার কারণে প্রস্রাব ঠিকমতো নিঃসরণ হয় না এবং খনিজ পদার্থ জমে পাথর তৈরি হয়।
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের pH বা অম্লতার মাত্রা পাথরের জন্য অনুকূল হয়। যেমন ইউরিক অ্যাসিড পাথর তখন তৈরি হয় যখন প্রস্রাব অতিরিক্ত অম্লীয় হয়।
ডিহাইড্রেশন, উচ্চ লবণযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত প্রাণিজ প্রোটিন, বংশগত প্রভাব, সংক্রমণ এবং জীবনধারার অভ্যাস—all মিলেই কিডনিতে পাথরের সৃষ্টি হয়। এই কারণগুলো একসাথে বা আলাদাভাবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশে গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে শরীর থেকে বেশি পানি নিঃসরণ হয়। পানি কম খেলে প্রস্রাব ঘন হয় এবং পাথরের ঝুঁকি বাড়ে। তাই পানি পান, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং জীবনধারার পরিবর্তন প্রয়োজন।
পাথর হওয়ার কারণ বোঝা গেলে প্রতিরোধ সম্ভব। পর্যাপ্ত পানি খাওয়া, লবণ ও প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ, ফল-সবজি গ্রহণ এবং হালকা ব্যায়াম এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমায়।
সঠিক জীবনধারা ও নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা কিডনির সুস্থতা বজায় রাখতে এবং পাথরের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সাহায্য করে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ
কিডনিতে পাথর হলে করণীয় কি ?এই বিষয়ে আপনার মনে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে? তাহলে চলুন জেনে নেই সেই সকল প্রশ্ন ও উত্তরগুলো-
কিডনিতে পাথর প্রতিরোধের সবচেয়ে সহজ উপায় কী?
সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায় হলো পর্যাপ্ত পানি খাওয়া। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খেলে প্রস্রাব পাতলা থাকে, খনিজ পদার্থ ধুয়ে যায় এবং পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমে। সঙ্গে লবণ ও প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ, ফল-সবজি খাওয়া এবং হালকা ব্যায়ামও সহায়ক।
কিডনিতে পাথর থাকলে কি ব্যায়াম করা উচিত?
হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করা যেতে পারে। এটি কিডনিতে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং পাথরের নড়াচড়া সহজ করে। তবে বড় পাথর থাকলে জোরালো ব্যায়াম বা ভারী কাজ করা এড়ানো উচিত। ব্যথা বা অসুবিধা হলে অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং ডাক্তারকে দেখাতে হবে।
উপসংহার
কিডনিতে পাথর একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা, যা সময়মতো সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা নিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পাথরের প্রধান কারণ হলো ঘন প্রস্রাব, অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন, কম পানি খাওয়া, ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা এবং জীবনধারার অনিয়ম। বাংলাদেশে গরম আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস এবং পানি কম খাওয়া এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত পানি খাওয়া, লবণ ও প্রোটিন নিয়ন্ত্রণ, ফল এবং সবজি গ্রহণ, হালকা ব্যায়াম এবং প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোট পাথর প্রাকৃতিকভাবে বের হয়, তবে বড় পাথরের ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরীক্ষা, ওষুধ গ্রহণ বা প্রক্রিয়াজাত চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
পরিবার ও পরিচারকের সহায়তা, সময়মতো ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করে। পাথরের পুনরাবৃত্তি রোধ, ব্যথা কমানো এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা বজায় রাখার জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর।
সতর্কতা, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং সঠিক জীবনধারা অনুসরণ করলে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। বাংলাদেশি জীবনধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঠিক খাদ্য ও পানির অভ্যাস গড়ে তুললে কিডনির স্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদী উপকার পাওয়া যায়।